পায়ে গুলি লেগেছিল দশ বছরের ছোট্ট মেয়েটার। গুলি চালিয়েছিল জঙ্গি মহম্মদ আজমল আমির কাসভ (Ajmal Kasab)। ২৬/১১-এর (26/11) সেই ভয়ঙ্কর জঙ্গি হানার অন্যতম অভিযুক্ত। এগারো বছর পূর্ণ হয়েছে মুম্বই হামলার। নিজের জীবনের সেই ভয়াবহ স্মৃতি সকলের সঙ্গে শেয়ার করলেন দেবিকা রোটাওয়ান। ‘হিউম্যানস অফ বম্বে' ফেসবুক পেজে তিনি জানালেন তাঁর সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা। দেবিকা জানিয়েছেন, সিএসটি স্টেশনে চিনি গুলিবিদ্ধ হন। ওই মামলায় সর্বকনিষ্ঠ সাক্ষী ছিলেন তিনি। আদালতে দাঁড়িয়ে অভিযুক্ত বন্দুকধারী কাসভকে শনাক্ত করেন তিনি। নিজের সেই স্মৃতির কথা জানাতে গিয়ে দেবিকা জানাচ্ছেন, ‘‘আমি প্রায় দশ বছরের ছিলাম সেই সময়, যখন আমার পায়ে গুলি এসে বিঁধে যায়। আমি লোকটাকে দেখেছিলাম যে সোজা আমার দিকে তাক করে গুলি চালিয়েছিল। এরপর যা আমার মনে পড়ে, তা পরের দিনের কথা। হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পর। চিকিৎসক আমাদের জানিয়েছিলেন, ২৬/১১-তে ঠিক কী ঘটেছে।''
‘‘আমি খুব রেগে গিয়েছিলাম।'' জানিয়েছেন দেবিকা, ‘‘নারী ও শিশুদের স্টেশনে মৃত্যুর সেই স্মৃতি এখনও মনে পড়ে। কিন্তু সবচেয়ে স্পষ্ট স্মৃতি যেটা তা হল, ওর মুখ। আমি ওই মুখ মন থেকে মুছে ফেলতে পারিনি।''
ফড়নবিশের ইস্তফার পর মহারাষ্ট্রের হাল ধরতে তৈরি হচ্ছেন উদ্ধব ঠাকরে
এরপর পুলিশ দেবিকাকে সাক্ষী হিসেবে আদালতে পেশ করতে চাইলে তাঁর বাবা-মা ভয় পেয়েছিলেন বলে জানাচ্ছেন দেবিকা। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি ভয় পাইনি। আমি চেয়েছিলাম ওর শাস্তি হোক।''
২০০৯ সালের জুন মাসে দেবিকাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় কাসভকে শনাক্ত করার জন্য। তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘চার ব্যক্তিকে আনা হয়েছিল আমার সামনে। আমি তৎক্ষণাৎ আজমল কাসভকে চিনতে পেরেছিলাম।''
আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার পরের অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন দেবিকা। তিনি লিখেছেন, তাঁর পরিবারের সঙ্গে সকলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এমনকী, তাঁর বাবাকে ফলের দোকান বন্ধও করে দিতে হয়। তিনি আরও জানাচ্ছেন, ‘‘রাজ্য সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফ্ল্যাট আজও মেলেনি। কিন্তু আমরা হাল ছাড়ছি না। কারণ আমরা যা করেছি দেশের জন্য করেছি।''
এরই মধ্যে ওই পোস্ট প্রায় সাড়ে সাত হাজার লাইক পেয়েছে। শেয়ার হয়েছে ৭০০-রও বেশি। কমেন্ট পড়েছে সাড়ে তিনশোরও উপরে।
আজ থেকে এগারো বছর আগে লস্কর-ই-তৈবার দশ জন জঙ্গি মুম্বইয়ে হামলা চালিয়ে ১৬৬ জনকে হত্যা করে। আহত হন তিনশোরও বেশি মানুষ।
একমাত্র জীবিত হামলাকারী আজমল কাসভের ফাঁসি হয় ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর পুণের ইয়েরওয়াড়া জেলে।