ক্রমশই বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা, ভারতে বর্তমানে ৩০ জন রোগী: ১০টি তথ্য

ভারতে আরও একজন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে বলে জানালেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এই নিয়ে এ দেশে মারণ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩০ এ। সদ্য সন্ধান পাওয়া ওই রোগী দিল্লির বাসিন্দা বলে জানা গেছে। এর আগে এক পেটিএম কর্মীরে শরীরে ওই ভাইরাসের সন্ধান মেলে। পেটিএম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তাঁদের সংস্থার করোনা ভাইরাসের দ্বারা সংক্রামিত কর্মচারী সম্প্রতি ইতালি থেকে এ দেশে ফিরে আসেন। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সংস্থাটি তার সমস্ত কর্মীদের আগামী ২ দিনের জন্য বাড়ি থেকে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে।
 

করোনা আক্রান্ত হিসেবে যে ৩০টি কেস সামনে এসেছে, তার মধ্যে ছ'জন দিল্লির সেই ৪৫ বছর বয়সি ব্যক্তির পরিবারের আত্মীয়।যারা আগ্রায় থাকেন। যাঁর শরীরে সোমবার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মিলেছে, তিনি ইতালি থেকে সম্প্রতি ফিরেছেন। চিনের পর ইউরোপের সে দেশে করোনার প্রকোপ বেশি। সোমবার বেঙ্গালুরুর এক ইঞ্জিনিয়ারের শরীরেও করোনা ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। যে হায়দরাবাদে কর্মরত। দেশের প্রথম তিনজন করোনা-আক্রান্ত রোগী কেরলের বাসিন্দা। তবে তাঁরা এখন বিপদ-মুক্ত।
 

ইতালির ১৬ জন আক্রান্তর মধ্যে ১৪ জনকে দিল্লিতে কোয়ারান্টাইন করে রাখা হয়েছে। তাঁরা সব মিলিয়ে ২৩ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন জয়পুরে রয়েছেন। মঙ্গলবার তাঁর শরীরে মিলেছে করোনা ভাইরাস। তাঁর স্ত্রীর শরীরেও পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ এসেছে। দেশে এই দলটিই করোনা-আক্রান্ত সর্ববৃহৎ দল। ভারতে আসা সমস্ত আন্তর্জাতিক উড়ানের যাত্রীকে স্ক্রিনিং পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। আর আগে এই তালিকায় ছিল ১২টি দেশ। এবার সেখানে আরও কোনও নির্দিষ্ট দেশের নাম থাকল না। বুধবার একথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। এখনও পর্যন্ত ৫,৮৯,০০০ জনকে ২১টি বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। নেপালের সীমান্তে ১০ লক্ষ জনকেও স্ক্রিনিং করার কথা জানান তিনি। ২৭ হাজার জনকে গোষ্ঠীভুক্ত ভাবে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বুধবার জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন।  
 

প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে টুইট করে জানিয়েছেন, তিনি এবারের হোলি উৎসবে যোগ দেবেন না। "বিশ্ব জুড়ে যেভাবে করোনা ভাইরাস বা COVID-19 ছড়িয়ে পড়ছে তা রুখতে বিশেষজ্ঞরা বড় কোনও জন সমাগম এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তাই, এই বছর আমি কোনও হোলির মিলন উৎসবে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি", বুধবার সকালে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও জানিয়েছেন, তিনিও এবছর হোলি খেলবেন না। তিনি সকলকে জন সমাবেশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।একই ভাবে সাধারণ মানুষকে বড় জমায়েত এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। 
 

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে কারোর আতঙ্কিত হওয়ার কোনও দরকার নেই। ভারতে করোনা ভাইরাস নিয়ে কড়া নজরদারি চলছে, বলেও জানান তিনি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও দিল্লির সকলকে সতর্ক করে জানান, করোনাকে রুখতে সবরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে।
 

সূত্রানুসারে, দিল্লির আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিমানবন্দরে কোনও পরীক্ষা করা হয়নি। কেননা, তিনি অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা থেকে দেশে ফিরেছিলেন। সেখানে করোনার আতঙ্ক তেমন নেই বলে তাঁকে আর পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। যে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানে তিনি দেশে ফিরেছেন, সেি বিমানের কর্মী ও যাত্রীদের ১৪ দিনের জন্য বাড়িতেই ‘আইসোলেশন'-এ রাখতে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
 

বেঙ্গালুরুর আক্রান্ত ব্যক্তি ২০ ফেব্রুয়ারি ইন্ডিগোর উড়ানে সফর করেন। বিমানের বাকিদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
 

ইতালি, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান থেকে আগত যাত্রীদের দেশে ঢোকার ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ভারত। চিন, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালিতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে সমস্ত ভারতীয়কে। আক্রান্ত দেশগুলিতে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া যেতে বারণ করা হয়েছে সরকারের তরফে। এক্মতার এসব দেশের রাষ্ট্রও নেতা ও কূটনীতিবিদের ছাড়  দেওয়া হয়েছে। ছাড় পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কূটনীতিবিদরা। 
 

ইরানে প্রায় ১,০০০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর বহু ভারতীয় সেদেশে আটকে পড়েছেন। এঁদের মধ্যে মৎস্যজীবী ও পড়ুয়ারাও রয়েছেন। যদি ইরান সরকার সহায়তা চায়, তাহলে সেখানে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিতে পারে ভারত। এর ফলে যথাযথ স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ইরানে অবস্থিত ভারতীয়দের দেশে ফেরানে সম্ভব হবে।
 

সর্দি ও কাশির দ্বারা সংক্রামিত হতে পারে করোনা ভাইরাস। চিকিৎসকরা তেমনটাই জানাচ্ছেন। পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ন্যূনতম সংস্পর্শ রেখে চলারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ঘনঘন হাত ধোয়া এবং হাঁচি বা কাশি হলে মুখ মুছতে নতুন টিস্যু ব্যবহার করার কথাও বলা হয়েছে। এর ফলে ভাইরাস সহজে ছড়িয়ে পড়বে না।