অসমের নাগরিক পঞ্জি থেকে বিপুল সংখ্যক হিন্দুর নাম বাদ পড়ায় এরাজ্যের মানুষদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।
কলকাতা: অসমের (Assam) পর এবার এরাজ্যেও নাগরিক পঞ্জি (NRC) তৈরি হতে পারে, এই আতঙ্কে কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে আতঙ্কিত মানুষদের সরকারি দফতর ও পৌরসভায় লাইন দিতে দেখা গেল নাগরিকত্ব প্রমাণের প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহের জন্য। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নথি জোগাড় না করতে পারার আতঙ্কে দু'জনের আত্মহত্যার মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটেছে। এই দুই আত্মহত্যার ফলে এখনও পর্যন্ত নাগরিক পঞ্জি আতঙ্কে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল আট। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, মৃতদের একজনের বয়স ২৫। অন্যজন ৫০ বছর বয়সি। তাঁরা যথাক্রমে উত্তরবঙ্গের ধুপগুড়ি ও জলপাইগুড়ির বাসিন্দা। এক সিনিয়র পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘দুই ব্যক্তির পারিবারিক সদস্য ও প্রতিবেশীরাই জানিয়েছেন, তাঁরা দু'জনেই হতাশায় ভুগছিলেন নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণের সঠিক কাগজপত্র জোগাড় না করে উঠতে পারায়। আমরা দু'টি ঘটনারই তদন্ত শুরু করেছি।''
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, নাগরিক পঞ্জির আতঙ্কে ভুগে আরও দু'জন আত্মহত্যা করেছেন অন্য জেলায়। এছাড়াও চারজন অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন। তাঁরা হাজার হাজার মানুষের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহের জন্য।
NRC: কলকাতাসহ রাজ্য জুড়ে ক্রমশ বাড়ছে এনআরসি আতঙ্ক, অভয় তৃণমূলের
অসমের নাগরিক পঞ্জি থেকে বিপুল সংখ্যক হিন্দুর নাম বাদ পড়ায় এরাজ্যের মানুষদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। অসমে নাগরিক পঞ্জি থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লক্ষেরও বেশি মানুষের নাম। গত ৩১ আগস্ট প্রকাশিত ওই তালিকা থেকে দেখা যাচ্ছে তালিকায় নাম না থাকা মানুষদের মধ্যে ১২ লক্ষ মানুষ হিন্দু।
মঙ্গলবার রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌরসভা বা অন্য সরকারি দফতরে শয়ে শয়ে মানুষকে লাইন দিতে দেখা গেল। তাঁরা লাইন দেন জন্মের শংসাপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য। তৃণমূল সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজ্যে কোনও নাগরিক পঞ্জি হবে না। কিন্তু তারপরেও রাজ্য জুড়ে অনেকেই আগাম সতর্কতা হিসেবে জরুরি নথি সংগ্রহ করে রাখতে সচেষ্ট হয়েছেন। অসমের নাগরিক পঞ্জি থেকে বিরাট সংখ্যক হিন্দু বাঙালির নাম বাদ পড়ার পর রাজ্যে আতঙ্ক বাড়তে শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত আতঙ্কের কারণে ছ'জনের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলায় এনআরসি নিয়ে ভীতি তৈরির জন্য বিজেপিকে ধিক্কার, বললেন মুখ্যমন্ত্রী
কলকাতা পৌরসভার সদর দফতর বা অন্য ডিভিশন অফিস কিংবা বিডিও অফিস— লাইন সর্বত্রই চোখে পড়েছে। কলকাতা পৌরসভার সদর দফতরের বাইরে লাইনে দাঁড়ানো ৭৫ বছরের অজিত রায় বলছেন, ‘‘আমি কেএমসি অফিসে এলাম আমার জন্মের শংসাপত্রের জন্য। বহু আগেই এটি হারিয়ে গিয়েছিল। আমি শুনেছি এ রাজ্যে এনআরসি তৈরি হলে জন্ম শংসাপত্র থাকলে প্রমাণ করা যাবে আমি এদেশের নাগরিক।''
৫৫ বছরের বিমল মণ্ডল দাঁড়িয়েছিলেন কেএমসির ল্যান্ড রেকর্ড দফতরের সামনে। পাঁচ দশক আগে তাঁর বাবা-মা যে জমি কিনেছিলেন তার কাগজের জন্য।
একই ছবি রাজ্যের গ্রামাঞ্চলের সরকারি ও পঞ্চায়েত অফিসের সামনেও।
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘আমরা মানুষকে আতঙ্কিত না হতে অনুরোধ করছি। বাংলায় কোনও এনআরসি হবে না। তৃণমূল সরকার তা কখনওই অনুমোদন করবে না। যতদিন তৃণমূল সরকার রয়েছে, একটি মানুষের গায়েও হাত দেওয়া যাবে না।''
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য বিজেপিকে দায়ী করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যে তিনি এটি হতে দেবেন না।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, ‘‘রাজ্যে এনআরসির জন্য যাঁদের মৃত্যু হয়েছে সেজন্য দায়ী কেবল তৃণমূল কংগ্রেস। আমরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি, যে হিন্দুরা অন্য দেশ থেকে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে নাগরিক সংশোধন বিলের অধীনে। এবং তারপর নাগরিক পঞ্জি তৈরি হবে অনুপ্রবেশকারীদের দূর করার জন্য।''
দেখুন ভিডিও