বহু রাজনৈতিক নেতা, যাঁরা রাজ্য স্তরের রাজনীতিতে শীর্ষে পৌঁছেছিলেন, তাঁরা জাতীয় রাজনীতিরও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছেন।
নয়াদিল্লি: গত ১০ বছরে (Indian Politicians Who Had The Most Impact This Decade) ভারতীয় রাজনীতি (Indian Politics) নানা পালা বদলের সাক্ষী। বহু রাজনৈতিক নেতা, যাঁরা রাজ্য স্তরের রাজনীতিতে শীর্ষে পৌঁছেছিলেন, তাঁরা জাতীয় রাজনীতিরও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছেন। এই দশকে দু'টি জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। দশকের শেষ বছরে নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে জোট বেঁধে প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ বিরোধী দলগুলি। সব মিলিয়ে বহু চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যে দিয়ে যে রাজনীতিবিদরা ভারতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছেন, রইল তাঁদের সেরা দশের তালিকা।
যে ১০ জন রাজনীতিবিদ ভারতীয় রাজনীতিতে সব থেকে প্রভাব বিস্তার করেছেন এই দশকে রইল তাঁদের তালিকা
স্মৃতি ইরানি
টিভি সিরিয়ালের দুনিয়া থেকে রাজনীতির আঙিনায় পা রাখা স্মৃতি বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের খুব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। দশকের সূচনাতে তিনি বিজেপির মহিলা শাখার প্রধান হন। এরপর গুজরাত থেকে রাজ্যসভার সদস্য হওয়ার পর ক্রমেই প্রভাব বাড়তে থাকে তাঁর। যদিও ২০১৪ সালে অমেঠিতে রাহুল গান্ধির বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়ে বিপুল ভোটে হারেন তিনি। কিন্তু ২০১৯ সালে কংগ্রেসের দুর্গ অমেঠি থেকে রাহুলকে ৫৫,০০০ ভোটে হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নেন তিনি। বর্তমান সরকারের দু'টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্বে রয়েছেন স্মৃতি ইরানি।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা
২০১৪ সালে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কংগ্রেসে ছিলেন। উত্তর-পূর্বে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে প্রচার চালান তিনি। কিন্তু পরে রাহুল গান্ধির সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় কংগ্রেস ছেড়ে তিনি বিজেপির নেতৃত্বাধীন নর্থইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের সভাপতি হন। ২০১৮-র ডিসেম্বরের মধ্যে তিনি সাতটি রাজ্যে দলের কৌশল তৈরি করে দেন। ২০১৯ সালে তিনি নির্বাচনের টিকিট পাননি। গেরুয়া শিবিরের হয়ে গোটা দেশে নির্বাচনি প্রচার কৌশলের দায়িত্বে ছিলেন হিমন্ত।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল
অরবিন্দ কেজরিওয়ালের রাজনীতিতে আগমন এক বিস্ময়। ২০১১ সালে আন্না হাজারের দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে রাজনীতির সঙ্গে তাঁর সংস্রব তৈরি হয়। পরে ২০১২ সালে আম আদমি পার্টি তৈরি করেন তিনি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদে শপথ নেন তিনি। কিন্তু সেই সরকার ৪৯ দিনের বেশি টেকেনি। কিন্তু ২০১৫ সালে ৭০টির মধ্যে ৬৭টি আসনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে আম আদমি পার্টি। মুখ্যমন্ত্রী হন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
জগন্মোহন রেড্ডি
২০১০ সালে কংগ্রেসের সাংসদ থেকে ২০১৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন জগন্মোহন রেড্ডি। বাবা ওয়াইএস রাজাশেখরা রেড্ডির মৃত্যু হয় ২০০৯ সালে। অন্ধ্রপ্রদেশের প্রবল জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। জগন্মোহন চেয়েছিলেন বাবার জায়গায় এবার তিনি মুখ্যমন্ত্রী হোন। কিন্তু কংগ্রেসের তাতে সায় ছিল না। ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে তিনি তাঁর দল তৈরি করেন— ওয়াইএসআর কংগ্রেস। ২০১৪ সালে তাঁর দল কংগ্রেসকে সরিয়ে প্রধান বিরোধী দল হয়। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের সময় বিধানসভায় ১৭৫ আসনের মধ্যে ১৫১টিতে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে ওয়াইএসআর কংগ্রেস। লোকসভায় ২৫টির মধ্যে ২২টিতে জেতে তারা।
নির্মলা সীতারামন
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার চার বছরের মধ্যে ২০১০ সালে দলের মুখপাত্র হন নির্মলা সীতারামন। তারপর গত একদশকে ক্রমে তিনি হয়ে উঠেছেন মোদি সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী মন্ত্রী। ২০১৯ সালের নির্বাচনের পর দেশের প্রথম পূর্ণ সময়ের অর্থমন্ত্রী হন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
২০১১ সালে ৩৪ বছরের বাম শাসনের সমাপ্তি ঘটিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন হয় তৃণমূল কংগ্রেস। দলের প্রধান কাণ্ডারি ‘দিদি' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৪ সালে লোকসভায় ৪২টি আসনের মধ্যে ৩৪টি আসনে জয়লাভ করে তৃণমূল কংগ্রেস। পরে ২০১৬ সালের বিধানসভাতেও জিতে আবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অরুণ জেটলি
কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্য বা কোনও বিতর্কিত নীতির সপক্ষে বক্তব্য পেশ— অরুণ জেটলিই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাজের মানুষ। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা নয়ের দশকের শেষ থেকেই দিল্লির প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠেন। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে তিনি ছিলেন সরকারের দ্বিতীয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কিন্তু শারীরিক অসুস্থার কারণে এবছর নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভায় থাকতে চাননি। ২৬ আগস্ট তিনি প্রয়াত হন।
কে চন্দ্রশেখর রাও
কে চন্দ্রশেখর রাওকে সবাই চেনে কেসিআর নামে। তেলেঙ্গানায় তাঁর দল বিরোধী দলকে মুছে দিয়েচে। কিন্তু ১০ বছর আগে তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মুখ ছিলেন তিনি। আলাদা তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল তাঁর অবদান। ১৯৮৩ সালের পর থেকে কোনও নির্বাচনে হারেননি তিনি! ২০১৪ সালে ১৭টির মধ্যে ১১টি আসনে জেতে টিআরএস। পাশাপাশি বিধানসভায় ১১৯টির মধ্যে জয়ী হয় ৬৩টিতে। ২০১৮ সালে মেয়াদ শেষের আট মাস আগে সরকার ভেঙে দিয়ে আরও লাভবান হন তিনি। আরও বেশি আসনে জয়ী হয় তাঁর দল। ২০১৯ লোকসভাতেও তাঁর জল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় রাজ্যে।
নরেন্দ্র মোদি
২০১৪ সাল পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদি ছিলেন একজন মুখ্যমন্ত্রী, যিনি এক দশকের বেশি সময় ধরে তাঁর রাজ্যে ক্ষমতাসীন ছিলেন। ২০০২ গুজরাত দাঙ্গার পিছনে তাঁর ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। অবশেষে ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে সব বদলে গেল। প্রধানমন্ত্রী হলেন নরেন্দ্র মোদি। দেশে প্রথমবার অ-কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন করল কোনও দল। ২০১৯ লোকসভায় গত ৩০ বছরের রেকর্ড ভেঙে বিপুল আসন পেয়ে জয়ী হল গেরুয়া শিবির। ভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রীয় ভূমিকায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
অমিত শাহ
বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলী হিসেবে অন্যতম প্রধান কারিগর অমিত শাহ পেরিয়ে এসেছেন দীর্ঘ পথ। দশকের শুরুতে তিনি ছিলেন গুজরাতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ২০১৪ সালে তিনি বিজেপির জাতীয় সভাপতি হন। আর দশকের শেষে এসে তিনি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও নরেন্দ্র মোদির সবচেয়ে বিশ্বস্ত সেনানী। এই মুহূর্তে দলের নীতি নির্ধারক হিসেবে তিনি নরেন্দ্র মোদির পরেই।