লকডাউনে স্তব্ধ পরিষেবা: বাড়ি পৌঁছতে দীর্ঘ পথ হাঁটলেন শ্রমিকরা
লখনউ: মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে দেশব্যাপী লকডাউন (Nationwide Lockdown)। "লকডাউন মানে দেশের প্রতি কোণা, প্রান্তে, জেলায়-রাজ্যে লকডাউন।" মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে এমন বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী (PM Modi)। সেই ঘোষণার পর থেকেই নাগরিকদের 'গৃহবন্দি' করতে সক্রিয় হয়েছে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের প্রশাসন। খোলা শুধু জরুরি পরিষেবা। সেই লকডাউনের প্রভাব পড়েছে উত্তরপ্রদেশেও। কিন্তু এই সরকারি বিধিনিষেধ, পুলিশের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই ৮০ কিমি (80-KM Long Walk by labours) পথ হাঁটতে উন্নাওয়ের রাস্তায় নামলেন বছর ২০-এর অবধেশ কুমার। কোনওরকম বিশ্রাম ছাড়া এই পথ পাড়ি দিতে তাঁর সময় লাগবে ৩৬ ঘণ্টা। তারপরেই লখনউ (Lucknow) হয়ে নিজের গ্রাম বারাবাঙ্কি পৌঁছতে পারবেন তিনি। জানা গিয়েছে, অবধেশ ও আরও ২০ জন উন্নাওয়ের একটি কারখানার শ্রমিক। সেই তালিকায় অবধেশের মতো তরুণ যেমন আছে, তেমন আছেন ষাটোর্ধ্ব শ্রমিকও। প্রত্যেকের গ্রাম বারাবাঙ্কি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী লকডাউনের নির্দেশ দেওয়ার পরেই মাথা গোঁজার ঠাই না পেয়ে, ওরা রাস্তায় নেমে পড়েন। রাত ১২টা বাজলেই পথে কেন জানতে চেয়ে পুলিশ চোখ রাঙাবে! সেই আতঙ্ক বুকে নিয়েই গ্রামের পথে পা বাড়িয়েছেন অবধেশরা।
২১ দিনের লকডাউন শুনেই হুড়োহুড়ি, দোকানে দোকানে ভিড়-ঠেলাঠেলি: ১০ তথ্য
ওরা জানিয়েছেন, সামান্য বিশ্রাম নিয়ে ক্রমাগত হাঁটলে বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে গ্রামে পৌঁছে যাবেন তাঁরা।
প্রত্যেকের সঙ্গেই একটা ব্যাগ। তাতে জামা-কাপড়, পানীয় জল আর বিস্কুট।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণার পরে করজোড়ে বলেছিলেন, দেশের নাগরিকরা; যে যেখানে আছেন; দয়া করে সেখানেই থাকুন। সেই বার্তাই ভিন রাজ্য বা এলাকা থেকে কাজ করতে আসা শ্রমিকদের উদ্দেশেও দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।এ বিষয়ে অবধেশকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি এনডিটিভি-কে বলেন, "আমি এটা একদম করতে চাইনি। কিন্তু এ ছাড়া কোনও বিকল্প ছিল না। যখন কাজ চলে, তখন ফেব্রিক কারখানার মধ্যেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে নিই। কিন্তু মঙ্গলবার ঘোষণা হওয়ার পরেই আমাদের বলা হয় জায়গা খালি করতে, এখানে থাকা যাবে না। তাহলে কী করব? রাস্তায় কোনও গাড়ি নেই! তাই আমরা এক গ্রামের সবাই মিলে স্থির করলাম হেঁটেই বাড়ি ফিরব।"
করোনার মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম মেনেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার বৈঠক
বছর ৫০-এর রাজমলের দাবি, "আমার কাছে যা খাওয়ার আছে, সেটা খেয়ে গ্রামে পৌঁছে যাব। কিন্তু পরিবার আমার উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল। আমি শুনেছি উত্তরপ্রদেশ সরকার অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের এই বিপর্যয়ের সময় মাসিক হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু আমার নাম কোনও প্রকল্পে নেই। সরকারি তরফে কেউ এসে যোগাযোগও করেনি।তাই আমাদের মতো মানুষদের কী হবে, সেটাই ভাবছি।"
জানা গিয়েছে সেই শ্রমিকদের ব্যাগে কাপড়, জল, বিস্কুট। আর সূর্যের তেজ থেকে বাঁচতে তোয়ালে ভিজিয়ে কপালে দেওয়া। কিন্তু ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ব্যবস্থা? নেই কোনও সচেতনতা। এখানেই প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। মানুষকে বাইরে না রাখতেই আর্থিক ক্ষতির পূর্বাভাস নিয়ে এই লকডাউনের সিদ্ধান্ত। তারপরেও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা মাথার ছাঁদ খুঁজতে এভাবে পথে নামলে, সমূহ বিপদ। এই শঙ্কায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন সকলেই।