This Article is From Jun 20, 2019

দুই হাসপাতালের মধ্যে টানাপোড়েনের জেরে ঠাকুমার কোলেই মৃত্যু চার দিনের শিশুর

সরকারি হাসপাতালের দুই শাখার মধ্যে টানাপোড়েনের জেরে মৃত্যু হল এক চার দিনের সদ্যোজাত শিশুর। বুধবার এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে।

অসুস্থ শিশুকে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে তার পরিবারের লোককে ছোটাছুটি করতে হল একই হাসপাতাল কমপ্লেক্সের মধ্যে।

হাইলাইটস

  • সরকারি হাসপাতালের দুই শাখার মধ্যে টানাপোড়েনের জেরে মৃত্যু শিশুর।
  • ভর্তি হতে না পেরে হাসপাতালের সিঁড়িতেই মারা যায় শিশুটি।
  • পুরুষ হাসপাতালের প্রধানকে এরই মধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরেলি/ উত্তরপ্রদেশ:

ঘণ্টা তিনেক ধরে সরকারি হাসপাতালের (Hospital) দুই শাখার মধ্যে টানাপোড়েনের জেরে মৃত্যু হল এক চার দিনের সদ্যোজাত শিশুর (Newborn)। বুধবার এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) বরেলিতে। হাসপাতালটির নাম মহারানা প্রতাপ জয়েন্ট হাসপাতাল উত্তরপ্রদেশ সরকার একটি হাসপাতালের প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসককে বরখাস্ত করেছে এবং অন্যটির দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। ঊর্বশী নামের ওই শিশুটি গত ১৫ জুন একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করে। বুধবার সকালে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। উদ্বিগ্ন বাবা-মা, দু'জনেই কৃষক, দ্রুত তাকে নিয়ে একটি সরকারি হাসপাতালের কমপ্লেক্সে পৌঁছয়। কিন্তু যে চিকিৎসক পুরুষদের শাখায় কর্মরত ছিলেন, তিনি শিশুটিকে পরীক্ষা করতে রাজি হননি। একই কমপ্লেক্সে অবস্থিত আর একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, যেখানে মেয়েদের চিকিৎসা হয়, সেখানে নিয়ে যেতে বলেন।

কলকাতায় প্রাক্তন ভারতসুন্দরী ঊষসী সেনগুপ্তের হেনস্থায় সাসপেন্ড পুলিশ কর্মী

তৎক্ষণাৎ শিশুকে নিয়ে সেখানে যান তার বাবা-মা। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারেন বেড নেই। আবারও অসহায় অবস্থায় শিশুকে নিয়ে পুরুষ শাখায় ফেরেন তাঁরা।

শিশুর ঠাকুমা কুসমা দেবী জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ছোটাছুটি করে বেড়াতে হয়। শেষ পর্যন্ত ঠিক করি ওকে বাড়িতেই ফিরিয়ে নিয়ে যাব। কিন্তু ও হাসপাতালের সিঁড়িতেই মারা যায়।''

মর্মান্তিক! স্বজ্ঞানেই সলিল সমাধি ঘটল কলকাতার জাদুকর চঞ্চলের

শিশুটির মেডিক্যাল স্লিপে রেকর্ড রয়েছে কীভাবে তাকেএকই কমপ্লেক্সের মধ্যে এক হাসপাতাল থেকে অন্যটিতে নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল।

0kn1pe3o

দুই হাসপাতালের মধ্যে চিকিৎসকদের মধ্যে বিবাদও সামনে এসেছে। স্থানীয় জনতা ও সাংবাদিকদের তোলা ফুটেজ থেকে পরিষ্কার কীভাবে পুরুষ শাখার প্রধান ড. কমলেন্দ্র স্বরূপ গুপ্ত ও মহিলা শাখার প্রধান ড. অলকা শর্মা পারস্পরিক দোষারোপের মাধ্যমে বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। কেউই ওই মৃত্যুর দায় নিতে চাননি।

বরখাস্ত চিকিৎসক কমলেন্দ্র স্বরূপ গুপ্ত জানিয়েছেন, ‘‘শিশুটিকে ওপিডি-তে (বহির্বিভাগ) নিয়ে গিয়েছিল ওর বাবা-মা। সেখান থেকে তাকে মহিলা শাখার এসএনসিইউ-তে (স্পেশালাইজড চাইল্ড কেয়ার ইউনিট) নিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু তারা শিশুটিকে ফিরিয়ে দেয়। শিশুটি এমার্জেন্সিতে পৌঁছলে আমরা তার চিকিৎসা করতাম। যখন শেষ পর্যন্ত তাকে নিয়ে তার বাবা-মা এমার্জেন্সিতে পৌঁছন, তখন আমরা তাকে ভর্তি করার প্রক্রিয়া শুরু করি।''

মহিলা শাখায় চারটি বেডে আটটি শিশু ভর্তি ছিল। ড. অলকা শর্মা জানান, ‘‘আমরা ওই পরিবারকে বলি পুরুষ শাখায় ফিরে যেতে। পুরুষ শাখার কর্মীরা চোখ বুজে যে কাউকে এখানে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু আমাদের সব চিকিৎসা সরঞ্জাম, যেমন ওয়ার্মার, সে সব সরকারের কাছে ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের চারটি ওয়ার্মার রয়েছে। যেখানে আমরা ইতিমধ্যেই আটটি শিশুকে ভর্তি করেছি। বেড ফাঁকা থাকলে শিশুটিকে অবশ্যই ভর্তি করতাম।''

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বুধবার রাতে বিষয়টি নিয়ে টুইট করেন। তিনি জানান, ‘‘বরেলির পুরুষ হাসপাতালের পুরুষ প্রধানকে আমি বরখাস্ত করেছি কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে। পাশাপাশি মহিলা শাখার প্রধানের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। সরকারি কর্মীদের কোনও অসংবেদনশীলতাকেই সহ্য করা হবে না নতুন উত্তরপ্রদেশে।''

আর একটি টুইটে তিনি লেখেন, ‘‘গুরুতর অসুস্থ এক শিশুকে পুরুষ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর, যেখানে যথেষ্ট পরিমাণে শিশু চিকিৎসক ছিল, তার চিকিৎসা শুরু না করে তাকে মহিলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মহিলা হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসকও শিশুটিকে ফিরিয়ে দেন।''

দেশের সবথেকে বেশি জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশে সরকারি চিকিৎসক ও হাসপাতালের বেডের খামতি রয়েছে। কেন্দ্রের হিসেব অনুযায়ী, প্রতি অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসককে গড়ে ১৯,৯৬২ জন রোগীর চিকিৎসা করতে হয়। সংখ্যাটা কেবল মাত্র বিহারের পরেই। বিহারে সংখ্যাটা ২৮,৩৯১। অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে জাতীয় গড় ১১,০৮২ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO প্রস্তাবিত হিসেবের (১:১,০০০) প্রায় দশ গুণ।

তবে উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিবৃতি থেকে পরিষ্কার ঊর্বশীর মৃত্যুর কারণ কর্মীসংখ্যা কম থাকা নয়— গাফিলতি। 

.