এখনও পর্যন্ত এই খেলা খেলতে গিয়ে এই রাজ্যে প্রাণ হারিয়েছেন দুজন।
কলকাতা/বর্ধমান: রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি তাদের সরকারি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রাণঘাতী অনলাইন গেম ‘মোমো চ্যালেঞ্জ’ নিয়ে সতর্ক করে দিয়ে জানাল, কোনওভাবে এই খেলার আমন্ত্রণ কারও কাছে এলে তিনি যেন কালবিলম্ব না করে তা পুলিশের নজরে আনেন। গত কয়েকদিন ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে এই মারণ অনলাইন গেম খেলার আমন্ত্রণ আসছে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়েছে পুলিশের কাছে। ‘মোমো চ্যালেঞ্জ’কে ‘প্রাণঘাতী খেলা’ বলে উল্লেখ করে সিআইডির পক্ষ থেকে অভিভাবকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা কোনওভাবেই নিজের সন্তানদের ওই খেলা খেলতে না দেয়।
“দয়া করে আপনার সন্তানকে এই প্রাণঘাতী অনলাইন গেমের থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। এই গেমের সম্বন্ধে কোনও তথ্য জানতে পারলেই তা স্থানীয় থানা অথবা সিআইডিকে জানান”, বলা হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিটিতে।
এর মধ্যেই পূর্ব বর্ধমান জেলার এক ব্যবসায়ী পার্থ বিশ্বাস বর্ধমান থানায় গিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন যে, তাঁর কাছে হোয়াটসঅ্যাপে ‘মোমো চ্যালেঞ্জ’ খেলার আহ্বান এসেছে। গত শনিবার মেমারির ওই বাসিন্দা পরপর দুটি মেসেজ পান। তিনি নম্বরটিকে ব্লক করে দিয়ে ঘটনাটি জেলা পুলিশের সাইবার সেলে জানান।
তদন্তকারীদের অনুমান জাপান, মেক্সিকো এবং কলম্বিয়ার মতো দেশ থেকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে খেলার আহ্বান আসছে । শুধু কলকাতার একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীই নয়, জলপাইগুড়ি থেকে উত্তরবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর বা দক্ষিণবঙ্গের হুগলির মতো জেলাতেও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের কাছে ‘মোমো চ্যালেঞ্জ’-এর আহ্বান আসছে বলে জানা গিয়েছে। দার্জিলিং জেলার কার্শিয়াঙে চলতি মাসের কুড়ি ও একুশ তারিখ পরপর দুটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তা জনমানসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। যদিও, ‘মোমো চ্যালেঞ্জ’-এর জন্যই ওই আত্মহত্যার ঘটনাগুলি ঘটেছে কি না, তা এখনও পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। দার্জিলিং জেলার এসপি অখিলেশ চতুর্বেদীও ওই দুই মৃত্যুর সঙ্গে এই খেলাটির জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের জুলাই মাসের 25 তারিখ মোমো চ্যালেঞ্জ খেলতে গিয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটি সামনে আসে আর্জেন্টিনায়। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, গত দু’বছর ধরেই ঘুরে বেড়াচ্ছে মোনো চ্যালেঞ্জ খেলার এই ছবিটি।
এই খেলার নিয়ম হল, একটি মেসেজ করে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীকে খেলার নিয়মগুলো জানানো হবে। সেখানে কিছু ‘কাজ’ বলে দেওয়া হবে। যার প্রতিটাই ব্যবহারকারীর পক্ষে ক্ষতিকর। সেই ‘কাজ’টি করার সময় তা ফোনে রেকর্ড করে পাঠাতে হবে। যদি কোনওভাবে ওই কঠিন কর্মভার সামলাতে না পেরে হাল ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ‘খেলোয়াড়’টি, তবে তাকে নানারকম ছবি ও হুমকির মাধ্যমে ফের খেলাটিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।
যে অদ্ভুত ছবিটিকে হোয়াটসঅ্যাপের প্রোফাইল পিকচার করে মোমো চ্যালেঞ্জ খেলার জন্য আহ্বান জানানো হয়, তা জাপানের এক শিল্পীর তৈরি। যদিও, প্রথমে সেই ছবিটির তৈরির কথা স্বীকার করলেও, পরে, এত কিছু ঘটার পর তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।
ক্রমশ দ্রুতগামী হতে থাকা এই দুনিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে ল্যাপটপ, ইন্টারনেট, মোবাইলে বুঁদ হয়ে পড়ছে নতুন প্রজন্ম। অভিভাবকদের আতঙ্ক এখন একটাই। একা একা বড় হয়ে ওঠা কোনও ফুটফুটে কৈশোর তাঁদের অজান্তেই ‘শিকার’ হয়ে যাবে না তো এই মারণঘাতী অনলাইন গেমের…