তিনি ‘ভুল' না ‘ঠিক', এই বিতর্কে আধাআধি ভাগ হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ার সমাজ। (ছবি সৌজন্য: ফেসবুক)
কলকাতা: পুলওয়ামায় ভয়াবহ জঙ্গিহানার পর ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি। সেই পোস্টে স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন, মৃত সিআরপিএফ জওয়ানদের তিনি কোনওভাবেই ‘শহিদ' তকমা দিতে রাজি নন। কেন রাজি নন, তার ব্যাখাও দিয়েছিলেন ওই পোস্টটিতে। তার ফলে চাকরি চলে গেল নর্থ ক্যালকাটা দিল্লি পাবলিক স্কুলের ৩৬ বছর বয়সী ইতিহাসের শিক্ষক চিত্রদীপ সোমের। তাঁর কথায়, “সিআরপিএফের জওয়ানরা আর পাঁচজন পেশাজীবীর মতোই নিজেদের কর্তব্য পালন করছিলেন। তাহলে তাঁদের ‘শহিদ' তকমা দেওয়া হবে কেন? এই দায়িত্বের জন্য তো তাঁরা বেতন পান”। ফেসবুকে তাঁর এই পোস্টের ফলে কয়েকজন তাঁর বাড়িতে রীতিমত চড়াও হয়ে তাঁকে দিয়ে জোর করে মাটি ছুঁইয়ে ‘ভারতমাতা কি জয়' বলান। তাঁর বকতব্যের জন্য ক্ষমা চাইতেও বাধ্য করেন। সেই ভিডিও প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভাইরাল হয়ে যায় গোটা সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে।
ভারত হামলা করলে জবাব দেবে পাকিস্তান, হুমকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর
তিনি ‘ভুল' না ‘ঠিক', এই বিতর্কে আধাআধি ভাগ হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ার সমাজ। তাঁর নামে থানায় অভিযোগ দায়েরও করা হয় ‘দেশবিরোধী কথা' বলার জন্য।
তিনি বলেন, সোমবার স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে তাঁদের সঙ্গে অবিলম্বে দেখা করতে বলেন। তারপরই আমাকে চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য জোর করা হয়। তাই, আমার কাছে চাকরি ছেড়ে দেওয়া ব্যতীত আর কোনও উপায় ছিল না।
যদিও, তিনি যে কোনও ভুল করেননি বা ভুল কিছুই বলেননি, সেই ব্যাপারে পুরোপুরি অনড় এই মধ্যবয়স্ক ইতিহাস শিক্ষক। সংবাদসংস্থা পিটিআই-এর মুখোমুখি হয়ে চিত্রদীপ সোম বলেন, “আমি কোনও ভুল কাজ করেছি বলে মনে করি না। আমি কোনওভাবেই আমাদের দেশের জওয়ানদের অপমান করার চেষ্টা করিনি। আমার পোস্টের একটি অংশ সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে যায়। তার ফলেই এত বড় গণরোষের শিকার হতে হচ্ছে আমাকে। আমার বাড়িতেও হানা দেওয়া হয়”।
কাশ্মীরে জঙ্গি হানার ১০০ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে জইশ নেতৃত্বকে নিকেশ করা হয়েছে: সেনা
উত্তর ২৪ পরগণার পুলিশের কাছে তাঁর বাড়িতে হানা দেওয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, নর্থ ক্যালকাটা দিল্লি পাবলিক স্কুলের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা বলেন, “আমরা চিত্রদীপ সোমের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে একের পর এক পড়ুয়াদের অভিভাকদের ফোন ও মেসেজ পেতে থাকি। তাঁরা আমাদের ক্রমাগত একই প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন, যে, তাঁর মতো একজনকে কীভাবে আমাদের স্কুলের শিক্ষক পদে রাখা হয়েছে? কে চাকরি দিল তাঁকে, এমন প্রশ্নও করেন তাঁরা। আমরা অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, এর ফলে আমাদের স্কুলের ওপরেও আক্রমণ নেমে আসতে পারে। তার ইঙ্গিতও ছিল যথেষ্ট। কোনওভাবেই, আমরা আমাদের পড়ুয়াদের বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারি না। তাই এই সিদ্ধান্ত”।
তিনি আরও বলেন, চিত্রদীপ সোম নিজেই জানিয়েছেন যে, তাঁর জন্য স্কুল ও স্কুলের পড়ুয়ারা বিপদের মধ্যে পড়ুক, তা তিনি চান না। তিনি নিজেই পদত্যাগ করেন।