ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে অভিযুক্ত মহিলার সঙ্গে বাকিদের তর্কাতর্কি।
নিউ দিল্লি: এই দেশের নাম ভারত। হেথায় জলে (এবং স্থলেও) Moral চলে। চলে Moral (অস্যার্থে, মোড়ল) জেঠু ও জেঠিমারাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় মঙ্গলবার রাতে পোস্ট করা একটি ভিডিও ফের একবার বুঝিয়ে এর সত্যতা। নারীর পোশাক নিয়ে ফতোয়া দেওয়া যেন সমাজের সবথেকে বড় দায়িত্ব। দেশে চাকরি থাকুক বা না থাকুক, অনাহারে মারা যাক হাজার হাজার কৃষক, তিন মাসের শিশু থেকে আশি বছরের বৃদ্ধার ধর্ষণ হয়ে চলুক। সে সব আসলে যেন কিছুই না! যেন গিলি গিলি গে! যেন ভ্যানিশ! আসল লক্ষ্য যেন একটাই, কত ছোট বা কত খোলামেলা পোশাক পরে রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক নারী। মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা একটি ভিডিও'তে দেখা যাচ্ছে এক মধ্যবয়স্কাকে। অভিযোগ, ওই মলের এক রেস্তোরাঁয় খেতে আসা কয়েকজন অল্পবয়সী যুবতীর পোশাকের দিকে আঙুল তুলে তিনি ওই যুবতীদের ধর্ষণ করতে বলেন কয়েকজন পুরুষকে।
ভিডিও'টিতে দেখা যাচ্ছে, ওই মহিলাকে তারপর ঘিরে ধরেছেন ওই যুবতীরা। তাঁকে বারবার ক্ষমা চাইতে বলছেন ক্যামেরার সামনে। তা না হলে যে ভিডিওটি 'ভাইরাল' করে দেওয়া হবে, সেই কথাও জানাচ্ছেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই ক্ষমা চাইতে রাজি নন।
ফেসবুকে একটি ন'মিনিটের ভিডিও শেয়ার করে শিবানী গুপ্তা নামের এক মহিলা লেখেন, "ভিডিওতে যে মধ্যবয়স্ক মহিলাকে দেখতে পাচ্ছেন আপনারা, তিনি একটি রেস্তোরাঁয় অন্তত সাতজন পুরুষকে ডেকে আনেন। তারপর নিদান দেন, আমাদের এই বন্ধুদের গ্রুপের প্রত্যেকে ধর্ষণ করা উচিত! কেন জানেন? তার কারণ, তাঁর মতে, যেহেতু আমরা ছোট পোশাক পরেছি, তাই আমাদের নাকি ধর্ষণই করা উচিত। এরপরও তিনি একনাগাড়ে করে যেতে থাকেন একের পর এক অবমাননাকর মন্তব্য আমাদের উদ্দেশ্য করে"।
ওই ঘটনার পরই শিবানী গুপ্ত সহ ওই গ্রুপের অন্যান্যরাও ওই মহিলাকে ক্ষমা চাইতে বলেন। ভিডিওটিতে শোনা যাচ্ছিল একজন বলছেন, "আপনি ক্ষমা না চাইলে আমি এই ভিডিওটি ভাইরাল করে আপনার জীবনটাকে নরক বানিয়ে দেব"।
ভিডিওটিতে ওই অল্পবয়সীদের যুবতীদের বলতে শোনা যায় যে, মূল ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে তাঁদের কাছে। তিনি ক্ষমা না চাইলে তাঁরা পুলিশে অভিযোগ জানাবেন। যদিও, এখনও পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ঘটনা নিয়ে কোনও অভিযোগ তাদের কাছে জমা পড়েনি বলে জানানো হয়েছে গুরগাঁও পুলিশের পক্ষ থেকে।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, এই তর্কাতর্কির সময় আরও একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা এগিয়ে এসে ওই অল্পবয়সী যুবতীদের পাশে দাঁড়ান।
ন'মিনিটের ভিডিওটি শেষে অভিযুক্ত মহিলার পক্ষ থেকে কেবল রয়ে গেল গায়ে কাঁটা দেওয়া একটি বয়ান, "বন্ধুরা, এই যে মহিলাদের দেখছেন এখানে, এরা সবাই ছোট থেকে ছোটতর পোশাক পরেছে, যাতে বাইরের লোকরা তাদের সবকিছু দেখতে পারে। ঠিক আছে? বাহ! দারুণ! যে যে মহিলারা ছোট পোশাক পরে, তারা আসলে তা পরে ধর্ষিতা হওয়ার জন্যই। সবাইকে বলছি, আপনারা যদি অভিভাবক হন, তাহলে নিজেদের কন্যাসন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করুন। তার পোশাক-আশাক'কে নিয়ন্ত্রণ করুন"।