কলকাতা: সন ১৯২৭। তারিখ ২৬ অগাস্ট। কলকাতার প্রথম প্রেম আকাশবাণীর (Aakashbani Kolkata Radio Station) সঙ্গে। ওই দিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া নাম ‘আকাশবাণী' (আকাশ থেকে ভেসে আসা ইথার তরঙ্গের মাধ্যমে সম্প্রচারণ) সবার ঘরে প্রথম পৌঁছে (First Day Of Radio Broadcasting) দেয় দৈব কণ্ঠস্বর। কলকাতার সেইসময়ের সাধাসিধে মানুষদের কাছে। বিনোদন বলতে যখন তাঁদের কাছে শুধুই বাংলা টকি। পাশাপাশি, বারো ঘর এক উঠোনের সুখী গৃহকোণে যত্নে শোভা পেত রেডিও। সবার ঘরে যদিও তখনও দেখা যেত না একে। তাই সবাই এসে ভিড় জমাতেন পড়শির ঘরে। যাঁর বা যাঁদের ঘরে এই দুর্লভ বস্তুর অস্তিত্ত্ব ছিল।
Watch Video: রানাঘাটের স্টেশনে অনবদ্য ‘এক প্যায়ার কা নাগমা'! গান গেয়ে ভাইরাল এই মহিলা
যাই হোক, যেদিন তৈরি হল কলকাতা রেডিও, এলেন একদল অসামান্য প্রতিভাসম্পন্ন ব্যাক্তি। যাঁদের হাত ধরে গড়ে উঠল আকাশবাণী কলকাতা৷ নয় দশক আগে চলতি মাসের ২৬ তারিখ দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্ঠে রবীন্দ্রগীতি আর আঙুরবালার গলায় কাজী নজরুল ইসলামের গান দিয়ে প্রথম মুখর হল আকাশবাণী। এই আকাশবাণীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির অনেক সাংস্কৃতিক ইতিহাসের টুকরো টুকরো ছবি৷ নয় দশক আগে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল গাস্টিন প্লেসের তথাকথিত ভূতের বাড়ীতে। সেই যাত্রার এবছর ৯২ বছর। সেই উপলক্ষে ২৩ অগাস্ট, সন্ধে ৬টায় (শুক্রবার) রবীন্দ্রসদনে আয়োজন করা হয়েছে এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান, 'রেডিওর গান গপ্পো' (Radior Gaan Goppo)।
ইদানিং, এফএমের দাপটে যাঁরা মিস করেন আকাশবাণীর সিগনেচার টিউনকে, এদিনের অনুষ্ঠানে শুনতে পাবেন সেই সুর। একসময় যা বাঙালির ঘুম ভাঙাত। সঙ্গে থাকবে আকাশবাণী নাম কি করে এল সেই গল্প। সিগনেচার টিউন তৈরির কথা। চেনা-অচেনা রেডিও প্রোগ্রামের চমকপ্রদ নেপথ্য কাহিনি। অনুষ্ঠান পরিকল্পনা করতে গিয়ে নানা বিভ্রাটের মজাদার গল্প। আর শুনতে পাবেন ‘মহিষাসুরমর্দিনী' আর সঙ্গীত শিক্ষার আসরের জন্মবৃত্তান্ত। সঙ্গীতাচার্য্য জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের হাত ধরে বাংলা আধুনিক গানের জগতে আকাশবাণীর ভূমিকা, তাঁর অবিস্মরণীয় অবদান রম্যগীতি যে জোয়ার এনে দিয়েছিল বাংলা গানে, তারও ইতিহাস৷ থাকবে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম সহায়ক হয়ে কলকাতা রেডিও যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল সেই কাহিনি। শুনতে পাবেন আকাশবাণীর নিজস্ব কিছু ঐতিহাসিক প্রোগ্রামের অংশ বিশেষ৷
দর্শক-শ্রোতাদের সঙ্গে আড্ডায় মাতবেন বেতার নাটকের অন্যতম অভিনেতা শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, আকাশবাণীর প্রাক্তন সংবাদপাঠক দেবাশিস বসু, বিখ্যাত বাচিকশিল্পী প্রণতি ঠাকুর। শিশুমহলে অংশগ্রহণ করে যাঁর বাচিকশিল্পের হাতেখড়ি৷ পুরনো এবং নতুন বিখ্যাত কিছু নাটকের অংশ পাঠ করবেন বরুণ চন্দ, শুভাষিশ মুখোপাধ্যায়৷ বেতারের নিজস্ব গান ও বেতারের মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা আধুনিক গান শোনাবেন উপালি চট্টোপাধ্যায়, অরিজিৎ চক্রবর্তী, জীমূত রায়, জয়তী ঘোষ ও "পটলকুমার গানওয়ালা" খ্যাত শিশুশিল্পী অরুণা দাস৷ অনুষ্ঠান রূপায়ণে বন্দনা মুখোপাধ্যায়। পরিবেশনায় পিকাসো এবং সূর্য্যাবর্ত৷ অনুষ্ঠানে প্রাপ্ত অর্থ বলরামপুর পুরুলিয়া গান্ধি মেমোরিয়াল কুষ্ঠ হাসপাতালে দান করা হবে৷