জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় বা জেএনইউ-তে দীপিকা পাডুকোন।
হাইলাইটস
- মঙ্গলবার জেএনইউ-তে গিয়েছিলেন দীপিকা পাডুকোন।
- তাঁর এই অবস্থান ঘিরে দ্বিধাবিভক্ত নেট দুনিয়া।
- বয়কট দীপিকা, সাপোর্ট দীপিকা হ্যাশট্যাগে চলছে সমর্থন আর বিরোধিতার পালা।
নয়াদিল্লি: জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় বা জেএনইউ (JNU)-তে দীপিকা পাডুকোন! মঙ্গলবার দিল্লিতে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা 'ছপক' ছবির প্রচার (Promotion) শেষে আচমকা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে যান সেলুলয়েডের 'পিকু'। রবিবার জেএনইউ-তে যে তাণ্ডব চলেছে তার প্রেক্ষিতে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে দীপিকা পাডুকোনের (Deepika Padukone) এই সফর। আর তারপরেই তাঁকে ঘিরে দ্বিধাবিভক্ত নেট দুনিয়া। সোশাল সাইটগুলোতে হ্যাশট্যাগসাপোর্ট দীপিকা (পক্ষে) (#Support) আর হ্যাশট্যাগবয়কট (#Boycott) দীপিকা (বিপক্ষে) ব্যানার ছেয়ে গিয়েছে। বলিউডের (Bollywood) অনেক প্রথমসারির তারকা তাঁর এই অবস্থানকে কুর্নিশ করেছেন। অনেক নেটিজেন আবার হ্যাশট্যাগশেম বলিউড (#Shame) ব্যানারে তাঁর এই অবস্থানের প্রতিবাদ করে 'ছপক' ছবির না দেখার আবেদন করেছেন। সিএএ কিংবা কেন্দ্রের সরকারের সমালোচনা, বরাবর এগিয়ে পরিচালক-প্রযোজক অনুরাগ কাশ্যপ।
মঙ্গলবারই তিনি নিজের টুইটার প্রোফাইলের ছবি বদলে ফেলেছেন। তাঁর নতুন প্রোফাইল ছবিতে দেখা যাচ্ছে দীপিকা করজোড়ে সম্বর্ধনা জানাচ্ছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষকে। প্রতীকী সেই ছবি, প্রোফাইল ছবি করে অনুরাগ কাশ্যপ লিখেছেন, 'সাহসী এই পদক্ষেপের জন্য তোমাকে কুর্নিশ।' পাশাপাশি সাংবাদিক রানা আয়ুবের একটা টুইট শেয়ার করে তিনি লেখেন, 'যেখানে ছবি মুক্তির দু'দিন বাকি। আর সে ছবির প্রযোজক দীপিকা নিজে, সেখানে এমন একটা সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে যথেষ্ট মনের জোর লাগে।'
একই কথা শোনা গিয়েছে 'কাল হো না হো' খ্যাত পরিচালক নিখিল আদবানির গলাতে। 'ছপক'-এ দীপিকা পাডুকোনের সহ-অভিনেতা বিক্রান্ত মেসে, ওই অভিনেত্রীর এমন পদক্ষেপে গর্বিত বলে টুইট করেছেন। অভিনেত্রী সায়নী গুপ্ত, সিমি গারেবল টুইটে দীপিকা পাডুকোনকে 'সাহসী' তোমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন, বলিউডের প্রথমসারির একজন অভিনেত্রীর এমন পদক্ষেপ আরও অনেককে এগিয়ে আসার পথ দেখাবে।
প্রবীণ অভিনেত্রী শাবানা আজমি একধাপ এগিয়ে মন্তব্য করেন, "পদ্মাবতের মুক্তির সময় যখন তাঁকে ক্রমাগত আক্রমণ করা হচ্ছিল, তখন সে বুঝেছিল আক্রান্ত শব্দের অর্থ। তাই জেএনইউ'র আক্রান্তদের পশে দাঁড়িয়ে দীপিকা খানিকটা সেই ক্ষতে মলম লাগালেন। তোমার আরও মানসিক জোর বাড়ুক।"
এমন অনেক নেটিজেন দেখা গিয়েছে যারা দীপিকার অবস্থানে উৎফুল্ল। যেখানে আমির, সলমন আর শাহরুখ খানের মতো প্রথমসারির তারকারা চুপ, সেখানে দীপিকার এই অবস্থান অনেক কথা বলে দেয়, দাবি নেটিজেনদের।
বিজেপি নেতা তেজিন্দর সিং বাগ্গা-সহ অনেক নেটিজেন আবার প্রতিবাদে সরব। হ্যাশট্যাগবয়কট দীপিকা, হ্যাশট্যাগশেম বলিউড ব্যানারে তাদের বক্তব্য, 'আমাদের উচিত ওর ছবি বয়কট করা। যে টুকরে-টুকরে গ্যাং আর আফজল গুরুর সমর্থকদের প্রতি সহমর্মী তাঁর সিনেমা আমরা কেন দেখবো।'
সিদ্ধান্ত প্রধান নাম জনৈক নেটিজেন আবার ছপক দেখতে আগে থেকে বুক করা টিকিট (অ্যাডভান্স বুকিং) ক্যানসেল করে আবেদন করেন, "এই ছবি যাতে ফ্লপ করে সেই ব্যবস্থা করুন। আমি আমার টিকিট ক্যান্সেল করলাম। আপনারাও করুন। ওকে শিক্ষা দিন।' এই প্রচারের বিরোধিতা করেও আবার অনেক নেটিজেন সরব হয়েছেন। রবিবারের হামলার ঘটনার নিন্দা করে সরকারি টুইটার পেজে বিবৃতি দিয়েছিল বিজেপি। সেই টুইট তুলে ধরে নেটিজেনদের প্রশ্ন, 'এ কেমন দ্বিচারিতা?' তেজিন্দর পাল সিং বাগ্গার টুইটের প্রেক্ষিতে আকাশ স্বামী নামে এক নেটিজেনের টুইট: এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। টুইটারে নিজেকে চৌকিদার দাবি করা এক নেটিজেনের আবার দীপিকার পক্ষ নিয়ে টুইট: আপনাকে ধন্যবাদ। এটা জানিয়ে দিলেন যে ওরা ভারতকে, ভারতীয়দের থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না।
সোমবারই ওই হামলার প্রতিবাদ করে বলিউডের একঝাঁক তারকা মুম্বইয়ের কার্টার রোডে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করেছিলেন। সেই তালিকায় ছিলেন, বিশাল ভরদ্বাজ, তাপসী পান্নু, অনুরাগ কাশ্যপ, জোয়া আখতারের মতো তারকারা।
একইভাবে শতাধিক ছাত্র-যুবকে দেখা গিয়েছে, 'অকুপাই ইন্ডিয়া গেট' ব্যানারে মুম্বইয়ের ঐতিহাসিক ইন্ডিয়া গেটের সামনে অবস্থান করেছেন।
এদিকে সোমবার এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দীপিকা বলেছিলেন, "আমি এটা দেখে গর্বিত যে নিজেদের মতপ্রকাশ করতে আমরা ভীত নই। মানুষ পথে নামছেন, যেখানে প্রয়োজন নিজেদের মতামত রাখছেন।" অপরদিকে, রবিবার বিকেলের পর ৫০-৭০ জন মুখোশধারী জেএনইউ ঢুকে ভাঙচুর চালায়। সে সময় ক্যাম্পাসে উপস্থিত পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের রেয়াত করেনি তারা। এই ঘটনায় প্রায় ৩০-এর ওপর পড়ুয়া জখম। মাথায় আঘাত পেয়েছেন ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ। বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপির দিকে ওই হামলার অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও, তারা এই অভিযোগ নস্যাৎ করে, পরীক্ষার ফর্ম পূরণ ঘিরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে কাঠগড়ায় তুলেছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে ঐশী ঘোষ-সহ একাধিক পড়ুয়ার বিরুদ্ধে এফএইআর দায়ের করেছে পুলিশ।