This Article is From Aug 16, 2018

দেখা ও না দেখার মাঝের এক প্রদর্শনী, এই শহরেই

কী দেখছেন তিনি? তা জানার জন্য আমাদের যেতে হবে, হো-চি-মিন সরণীতে। আমেরিকান কনস্যুলেটের ঠিক বিপরীত দিকে। হ্যারিংটন আর্ট সেন্টারে।

অমিত চৌধুরী ওই মাহেন্দ্রক্ষণটিকেই যেন দেখালেন নিজের তর্জনীটি তুলে।

কলকাতা:

শিল্প কী? যা আমরা দেখছি এবং যা আমরা দেখছি না- এই দুইকেই স্বপ্নের একটি ক্ল্যাসিক লেয়ার দিয়ে জুড়ে দেওয়াই হল শিল্প। ঠিক এরপরেই খুব স্বাভাবিকভাবেই যে প্রশ্নটি উঠে আসে, তা হল- শিল্পী কে? যিনি প্রথম প্রশ্নের উত্তরটির মধ্যে কখনও বা কোনও একটি মুহূর্তে একদম আচম্বিতেই খুঁজে পেয়ে যান নিজেকে, তিনিই শিল্পী। অথবা, বাক্যটিকে আড়াই পোঁচ অবদমিত করে দিয়ে বলা যেতে পারে যে, তিনিই বুঝতে পারেন, তাঁর মধ্যে রহস্যাবৃত হয়ে যে সত্তাটি লুকিয়ে ছিল এতদিন, তা এবার প্রকাশ করার সময় এসে গিয়েছে। অর্থাৎ, চিনে নিতে পারেন সেই মাহেন্দ্রক্ষণটিকে।

অমিত চৌধুরী, একজন শিল্পী হিসাবে ওই মাহেন্দ্রক্ষণটিকেই যেন দেখালেন নিজের তর্জনীটি তুলে। তিনি উপন্যাস লিখেছেন, আমরা জানি। তাঁর প্রবন্ধের ভাষায় বুঁদ হয়ে থেকে অনন্তের তীব্র ক্ল্যাসিকত্বের ধারেকাছে পৌঁছে যেতে চেয়েছেন, এমন পাঠকের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। কিন্তু, এইসব কিছুকে ছাড়িয়েও তো তিনি একজন শিল্পী। তার মানে, তিনি একজন দ্রষ্টা। যিনি নিজে দেখেন এবং অপরকে তা নিজের মতো করে দেখাতে চান। পাঠক এতদিন এই দুটি ব্যাপারের মধ্যে দ্বিতীয়টির উপস্থিতি টের পেয়েছিল পুরোমাত্রায়। এই প্রথমবার তাদের সামনে খুব প্রাঞ্জলভাবে জেগে উঠল প্রথমটিও। অর্থাৎ, যা তিনি নিজে দেখছেন।

কী দেখছেন তিনি? তা জানার জন্য আমাদের যেতে হবে, হো-চি-মিন সরণীতে। আমেরিকান কনস্যুলেটের ঠিক বিপরীত দিকে। হ্যারিংটন আর্ট সেন্টারে।

যে প্রদর্শনীটি চলছে এখানে, আদতে তাঁর বিষয়টি হল- পোর্ট্রেট। যে পোর্ট্রেটগুলি অমিত চৌধুরীর চোখে পড়েছে বা পড়েছিল। কিন্তু, কীসের পোর্ট্রেট? এটি একইসঙ্গে একটি প্রশ্ন এবং একটি বাঁক। সেই বাঁকটি ধরে এগোলে আমরা পৌঁছে যাব, অস্যার্থে, ওই প্রদর্শনীর দর্শক পৌঁছে যাবেন কলকাতার বিভিন্ন মিষ্টির দোকানের দেওয়ালে টাঙানো প্রতিষ্ঠাতাদের ছবির কাছে। কেউ বসে আছেন- হাঁটুর ওপর হাত জড়ো করা। কেউ রয়েছেন দাঁড়িয়ে...যে ছবিগুলিকে আমরা দেখেও দেখি না, সেই ছবিগুলোই।

এই প্রদর্শনীটিতে আরও রয়েছে, অমিত চৌধুরীর উপহার পাওয়া বিভিন্ন অব্যবহৃত জিনিসপত্র। অব্যবহৃত মানেই যে অবাঞ্ছিত নয়, তা প্রদর্শনীটিতে ঘুরে দেখলেই বোঝা যায়। তাঁর স্ত্রীকে একটি শাড়ি উপহার দিয়েছিলেন তিনি। স্ত্রী কোনও বিশেষ কারণে সেই শাড়িটি কখনওই পড়েননি। শাড়িটি একধারে পড়েছিল। এবার চলে এলো প্রদর্শনীতে। এক বিখ্যাত শিল্পীর কন্যাকে একটি বই উপহার দিতে চেয়েছিলেন তিনি। উপহার দিতে যাওয়ার সময় রাস্তায় বহুক্ষণ জ্যামে আটকে থাকার পর গাড়ি ঘুরিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। সেই বইটিও রয়েছে এই প্রদর্শনীটিতে। একটি নাইটল্যাম্প রয়েছে। এক আত্মীয় উপহার দিয়েছিলেন তাঁকে। পছন্দ না হওয়ায় খাটের তলায় রেখে দিয়েছিলেন তিনি। খাটের তলার অন্ধকারে পড়ে থাকা সেই রঙিন আলোকপিণ্ডটিও রয়েছে এই প্রদর্শনীটিতে। আর রয়েছে, রাস্তায় ব্যবহৃত বিভিন্ন চিহ্ণ! যা, ওঁর চোখে পড়েছিল...

শিল্পীর যা চোখে পড়েছে, তা-ই দিয়েই একটি প্রদর্শনী চলছে তিলোত্তমায়। প্রত্যেকটির সঙ্গেই জড়িয়ে একটি করে গল্প। প্রদর্শনীটির আনাচকানাচে ঘুরলে বোঝা যায়, এও  আসলে একরকম বৃহত্তর কোনও গল্পের প্রস্তুতিই…

,

,

 

.