This Article is From Dec 21, 2018

ভয় থেকে জয়, এক অসম্ভবকেই সম্ভব করল রোহিঙ্গা যুবতী ফরমিন

''যে অন্ধকারে ওই দেশ ছেড়ে এসেও এখনও রয়ে গিয়েছে আমাদের আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবরা... তা মুছে ফেলার জন্য বাবার স্বপ্ন দেখা আলোটুকুর যে আমাদের দরকার...শিক্ষার আলোটুকু যে আমাদের বড় দরকার..."

ভয় থেকে জয়, এক অসম্ভবকেই সম্ভব করল রোহিঙ্গা যুবতী ফরমিন

চট্টগ্রামের স্কুলে যাওয়ার আগে, ফরমিন আখতার।

বাংলাদেশ:

দক্ষিণ বাংলাদেশের এশিয়ান মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরুর প্রথম দিন টাইট জিনস, স্লিভলেস টপ এবং টি-শার্ট পরে কথা বলছিল নতুন ছাত্রীরা। তাদের হাসির রব বাতাসে মিশে গিয়ে মুছে দিচ্ছিল তখন সমস্ত নেতিবাচক যা কিছু, তার সবটাই। তাদের ক্লাসের এক কোণে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল যে ১৯ বছরের মেয়েটি, তার নাম ফরমিন আখতার। প্রবল আত্মবিশ্বাসী ও আধুনিক ছাত্রীদের ক্লাসে এসে খুব স্বাভাবিকভাবেই যেন, অত্যন্ত কুণ্ঠিত হয়ে পড়েছিল সে। একটি ঢোলা প্যান্ট আর জামা পরে ক্লাসের একপাশে দাঁড়িয়েছিল ফরমিন। মাথা থেকে খালি পড়ে যাচ্ছিল বাদামি স্কার্ফটা। এদিকওদিক তাকিয়ে সেটি ঠিক করে নিচ্ছিল সে। ওই সময়ই ক্লাসের বাকি মেয়েরা তাকে লক্ষ করে। আচমকা। সকলের চোখ মুহূর্তের মধ্যে গিয়ে পড়ল ফরমিনের ওপর। সে কী করবে তৎক্ষণাৎ বুঝতে না পেরে তুলে ধরেছিল নিজের আইডেন্টিটি কার্ডটিই। "এই দেখো আমার আইডেন্টিটি কার্ড! আমিও তোমাদেরই একজন", বলেছিল ফরমিন।

যেন বহুদিন বাদে, বহু বহুদিন বাদে, সে কোনও খেতাব জিতেছে!

একটি ক্লাসে ঢোকার জন্য প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্রটি হাতে পাওয়ার ঘটনা অন্যান্য পড়ুয়াদের কাছে কিছুটা চিত্তাকর্ষক হলেও হতে পারে, কিন্তু, মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান ফরমিনের কাছে তার মানে ছিল হাতে একটা গোটা বিশ্ব পাওয়া।

দীর্ঘদিন ধরে এই মুহূর্তের জন্যই অপেক্ষা করছিল তো ফরমিন। ভেবেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিকই পড়বে একদিন। কিন্তু মায়ানমারের রোহিঙ্গা শিবিরে থাকতে থাকতে মৃত্যু আর ধর্ষণ চোখের সামনে দেখতে দেখতে স্বপ্নগুলো ভিতর থেকে খুবলেই নিয়েছিল যেন কেউ। ফরমিন আর তার দিদি নুরজাহানকে তাদের বাবা খুব যত্ন করে মানুষ করেছিল। তাঁর ইচ্ছে ছিল, এই প্রবল অন্ধকারের মধ্যে থেকেও যেন নিজের মতো করে বাঁচতে পারে মেয়েদুটো। নিজের নিজের আনন্দের মধ্যে থেকে খুঁজে নিতে পারে জীবনের অমোঘ আলো। 

পুরোটা সম্ভব হয়নি। নুরজাহানের বিয়ে হয়ে যায়। সে এখন অন্তঃসত্ত্বা। তার কাছে থেকেই পড়াশোনা ফের নতুন করে শুরু করেছে ফরমিন। সুযোগ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়েও।

এই দুজনের ৭৯ বছর বয়সী দাদু বলছিলেন, "ফরমিনের থেকেও বেশি প্রতিভাবান হল নুরজাহান। কিন্তু, ও পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে পারল না। বিয়ে হয়ে গেল। ইচ্ছে ছিল ওর অনেক। কিন্তু, আমাদের মতো জীবনে সব ইচ্ছে তো সফল হয় না আর"।

নুরজাহানের বাবা এক রোহিঙ্গার সঙ্গেই বিয়ে দিয়ে দেয় তার। পাত্রের সৌদি আরবে কাজের কথা শুনে আর স্থির থাকতে পারেনি এই দুই কন্যার বাবা। কক্সবাজারের রিফিউজি ক্যাম্পে দীর্ঘদিন পড়াত নুরজাহান।

ফরমিন চায় আইন নিয়ে পড়তে। রোহিঙ্গাদের অসহ্য যন্ত্রণা আইনি লড়াই করে মেটাতে চায় উনিশশো নিরানব্বি সালে জন্মানো মেয়েটি। যে ক্লাস তাকে প্রথমবার কুণ্ঠাভরে গ্রহণ করেছিল, সে এখন সেই ক্লাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।  তার ইচ্ছে, সূ কি'র সঙ্গে কখনও দেখা হলে একবার জানতে চাইবে, আপনিও তো আমার মতো একজন নারী। একবার আমার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে দেখবেন, আপনার ঠিক কেমন লাগে?

আর, একদম একলা সময়গুলো, নিজের সময়গুলোতে, প্রিয় গোলাপি ডায়েরিতে লেখে, "দিদিকে বেশিদিন কষ্ট করতে হবে না। ওকেও কলেজে পড়াব আমি। আমরা একসঙ্গে পড়ব। দিদি না থাকলে আমার পড়া হত না। মায়ানমারের বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাই মেরে ফেলত আমাদের মতো রোহিঙ্গাদের। সেখান থেকে দিদি না থাকলে আমি বেরিয়ে আসতে পারতাম না। হয়তো এতদিনে মরেই যেতে হত। অথবা, দিনের পর দিন ধরে ধর্ষিত হয়ে পড়ে থাকতে হত কোনও অন্ধকার কুঠুরিতে। যে অন্ধকারে ওই দেশ ছেড়ে এসেও এখনও রয়ে গিয়েছে আমাদের আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবরা... তা মুছে ফেলার জন্য বাবার স্বপ্ন দেখা আলোটুকুর যে আমাদের দরকার...শিক্ষার আলোটুকু যে আমাদের বড় দরকার..."

p1ikdf4

 

vjuro5c8

 

5tm5hblo

 

3bgd62u8

 



(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদিত করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে.)
.