This Article is From Jul 15, 2018

11 রাজ্যের 30 জনের মৃত্যুর কারণ কী ? প্রশ্নে সংবাদ মাধ্যমের ভুমিকা

 ছেলেধরা  সন্দেহে পিটিয়ে মারার ঘটনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে । জুন মাস পর্যন্ত  11 টি রাজ্যের 18টি ঘটনায় 30 জনের মৃত্যু  হয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকদের ভুমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন ।

11 রাজ্যের 30 জনের মৃত্যুর কারণ কী ? প্রশ্নে সংবাদ মাধ্যমের ভুমিকা

গত বছর মে মাসে গণপিটুনিতে সাত জন প্রাণ হারিয়েছেন ঝাড়খণ্ডে

চাকুলিয়া, ঝাড়খণ্ড:

ছেলেধরা  সন্দেহে পিটিয়ে মারার ঘটনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে । জুন মাস পর্যন্ত  11 টি রাজ্যের 18টি ঘটনায় 30 জনের মৃত্যু  হয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে সূত্রপাত ঝাড়খণ্ড থেকে। গত বছর মে মাসে গণপিটুনিতে সাত জন প্রাণ হারিয়েছেন এ রাজ্যে। আর তার সবটাই ছেলেধরা সন্দেহে।  ব্যাপারটা শুরু হয় স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত কয়েকটি খবরের মধ্যে দিয়ে । কিন্তু এবার প্রকাশ্যে এলো মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া একটি তথ্য। বলা হচ্ছে ওই খবরগুলি নাকি ছাপা হয়েছিল নেহাত সন্দেহের ভিত্তিতে, পুলিশ রিপোর্ট  ছাড়াই।

মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সুপাই হাম্ব্রাম নামে এক কিশোররে খবর ছাপা হয় স্থানীয় কাগজে।  সুপাইয়ের বাড়ি জামসেদপুর থেকে প্রায় 100 কিলমিটার দূরে আবস্থিত চাকুলিয়া গ্রামে । প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায় বাড়ির সবাই যখন    ঘুমিয়ে ছিলেন তখন সুপাইকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এক ব্যক্তি। তার  মুখ ছিল কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। প্রভাত খবর ও হিন্দুস্তান নামে দুটি সংবাদ পত্রে খবরটি ছাপা হয়। দুটির কোনওটিতে ছিল না পুলিশের বয়ান। এমনকী কে লিখেছেন তাও স্পষ্ট করে বলা হয়নি ।  কিন্ত এর প্রভাব পড়ে মারাত্মক । ঠিক সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই পিটিয়ে মারার প্রথম ঘটনাটি ঘটে।  দিন কয়েকের মধ্যেই  মে মাসের  11 তারিখ প্রভাত খবর আরও একটি খবর প্রকাশ করে । তাতে বলা হয় বছর পাঁচেকের এক শিশুকে অপহরণ করার সময় ধরা পড়ে যাওয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারে স্থানীয় মানুষ । এই খবরেও সুত্র উল্লেখ করা ছিল না ।  শুধু তাই নয় পুলিশ  সূত্র বলছে এমন কোনও ঘটনাই নাকি ঘটেনি!

 এ ব্যাপারে বিশদে জানতে এনডিটিভি কথা বলে সুপাইয়ের সঙ্গে ।  চাকুলিয়ায়  গিয়ে তার সঙ্গে আমরা  দেখা করি । সে যা বলছে তার সঙ্গে কিন্ত ছাপা খবেরর বিস্তর আমিল ! সুপাই জানিয়েছে , সে রাতে  একজন  তার বাড়িতে ঢুকেছিল চুরি করতে। সে জেগে যাওয়ায় তার মুখ চেপে ধরে ওই ব্যক্তি।  তবুও প্রাণপণে চিৎকার করে সুপাই ।  ভয় পেয়ে  পালিয়ে যায় কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা ওই ব্যক্তি। খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু একটা গোলমাল যে হয়েছে টা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন  প্রভাত খবরের জামশেদপুর সংস্করণের সম্পাদক রাজনীত সিং। তিনি বলেন প্রথম খবরটি সুপাইয়ের বয়ানের ভিত্তিতে ছাপা হয়েছিল। তবে তারপর থেকে গোটা ব্যাপারটাই আরও দায়িত্বের সঙ্গে করা হচ্ছে ।  তার কথায়, ‘ গণপিটুনি শুরু হওয়ার পর আমরা বুঝলাম এটা বড় ব্যাপার। তখন থেকে খবর করার  আগে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগে বিষয়টি এত বড় ছিল না।‘

শুধু প্রভাত খবর বা হিন্দুস্তান নয় আরও অনেক সংস্থার স্থানীয় সাংবাদিকরাই জড়িয়ে আছেন ভুয়ো খবর ছড়িয়ে দেওয়ার নেপথ্যে। উত্তর মহারাষ্ট্রের এক সাংবাদিক শিশু পাচার সংক্রান্ত একটি বিভ্রান্তকর ভিডিয়ো তৈরি করেন বলে জান গিয়েছে। একই ভাবে ঝাড়খণ্ড এবং হায়দ্রাবাদের কিছু সাংবাদিকও অকারণে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। অসমে এমন কাজ করার ভার নিয়েছেন একজন সাংবাদিক। এনডিটিভির চার রাজ্যের সাংবাদিকরা পুলিশ সূত্র থেকে  পেয়েছেন এমন খবর । আর এদের পাঠানো ভুল খবর  ও ছবিই এতগুলো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল বলে মনে করা হচ্ছে ।

উত্তর মহারাষ্ট্রের ধুলে নামক একটি জায়গায় জুলাই মাসের প্রথম দিন পাঁচ জনকে পিটিয়ে মারে জনতা। জানা যায়  সাংবাদিক রফিক সেখ  পরিচালিত মিডিয়া লাইভ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে বলা হয় বোরখা পরিহিত কয়েকজন লোক  বাচ্চাদের অপহরণ করার পরিকল্পনা নিয়ে ঘুরছে । এরই ফলশ্রুতিতে পাঁচ জনের প্রাণ যায়  বলে দাবি পুলিশের। যদিও ওই সাংবাদিকের দাবি মিনিট দশেকের মধ্যেই সেটি তিনি তুলে নেন । কিন্ত ওই সময়ের মধ্যেই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এক  বা একাধিক সংস্থা  ভিডিওটি ডাউনলোড করে ছড়াতে থাকে বলে তাঁর দাবি। নিজের ভিডিও-র স্বপক্ষে তাঁর যুক্তি স্থানীয় গ্রামের একটি এরকম একটি ঘটনার কথা তিনি এক মহিলার থেকে শুনেছিলেন। আর তাই ওরকম ভিডিও বানিয়েছিলেন।

দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানাতে  27 মে এভাবেই গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে । সেখানেও গুজব ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে সুভান ও সৈয়দ সেলিম নামে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ।

.