বাবার সেতারের ঝঙ্কার এবার মেয়ের বাজনায়
হাইলাইটস
- বাবার পথে মেয়ে
- অভিযাত্রিক ছবির আবহে অনুষ্কা শংকর
- সত্যজিত রায়, পণ্ডিত রবি শংকরকে সম্মান এভাবেই
কলকাতা: সাধারণত, কিংবদন্তি পরিচালক আর কিংবদন্তি শিল্পী জুটি বাঁধলে ইতিহাস তৈরি হয়। ‘পথের পাঁচালী' ট্রিলজি কাল্ট হয়েছে পরিচালক সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray) এবং বিশিষ্ট সেতারশিল্পী রবি শংকরের (Pandit Ravi Shankar) যুগলবন্দিতে। বিশিষ্ট সেতার বাদকের সুরের ঝঙ্কারে ঋদ্ধ এই ছবির আবহে কান পাতলেই ভেসে ওঠে অপু-দুর্গার মুখ। রেললাইন, ট্রেন, কাশবন কিংবা অপু-অপর্ণার সংসার। এই স্মৃতি বাঙালির অলঙ্কার, অহঙ্কার। সেই অলঙ্কার নতুন ভাবে ফিরছে পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্রের আগামী ছবি 'অভিযাত্রিক'-এ ( Avijatrik)। এই ছবিতে পরিচালক তুলে ধরছেন অপু-কাজলের ফেলে আসা জীবন। একই ভাবে কিংবদন্তি শিল্পীর শতবর্ষে সম্মান জানাতে সেতারের সুরে আবহ রচনা করছেন পণ্ডিত রবি শংকর কন্যা অনুষ্কা শংকর (Anoushka Shankar)। ছবির প্রযোজনাতেও তারকার ছটা। তপন সিংহের প্রযোজক গৌরাঙ্গ জালানের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় রয়েছেন মধুর ভান্ডারকর (Madhur Bhandarkar)। অভিযাত্রিক দিয়ে বাংলা ছবিতে প্রযোজক হিসেবে প্রথম অভিযান তাঁর।
বসন্ত মানেই দখিনা বাতাস। বসন্ত মানেই প্রেম। প্রেমের এমন ভরা মরশুমে ছ'বার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড নমিনি অনুষ্কা ভারতে পা রেখেছেন তাঁর নতুন গানের সংকলন Love Letters নিয়ে। যে গানে প্রেম রয়েছে। আছে বিরহ, ভাঙা হৃদয় জুড়োনোর গান। দেশের মাটিতে পা রেখেই তাঁর ঘোষণা অভিযাত্রিক ছবির টাইটেল কার্ড-এর জন্য সেতার হাতে তুলে নেবেন তিনি। এবং এটিও নয়া ইতিহাস ছবির এবং সেতারবাদকের জীবনে। এই প্রথম কোনও ভারতীয় ছবিতে আবহ রচনা করবেন তিনি। ইতিমধ্যেই মুম্বইয়ে মধুর-শুভ্রজিৎ-গৌরাঙ্গের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। তখনই তিনি জানান, বাবার সম্মানেই তিনি কাজ করবেন টিম অভিযাত্রিকের সঙ্গে।
কথায় কথায় অনুষ্কা জানিয়েছেন, তিনি বেশি বলতে পারেন না। সেতারের সুরে প্রকাশ করেন মনের ভাব। বাবার শতবর্ষকে তিনি তাই উদযাপন করছেন এভাবে। ঠিক যেভাবে ৬০ বছর আগে বাবা রণ্ডিত রবি শংকর আবহ রচনা করেছিলেন অপু ট্রিলজির। মধু ভাণ্ডারকর বলেন, টিম সম্মানিত অনুষ্কাকে পেয়ে।
অপুকে নিয়ে বাঙালি কৌতূহলের অন্ত নেই। সত্যজিৎ রায় তাঁর অপু ট্রিলজির শেষ ভাগ 'অপুর সংসার'-এ অপুর সঙ্গে ছেলের বন্ডিংয়ের ঝলক দেখিয়ে ছবি শেষ করেছিলেন। সেই ছবি বাঙালির মনে 'শেষ হইয়াও হইল না শেষ' গোছের অনুভূতি রেখে দিয়েছিল। এতগুলো বছর ধরে সিনেপ্রেমীরা যতবার ছবিটিকে দেখেছেন, সম্ভবত এই প্রশ্নই তাঁদের মনে ঘোরাফেরা করেছে, বিশ্ব ভবঘুরে অপুর মনে কাজলের জায়গা কতটা? কাজল কীভাবে অপুর কোলেপিঠে চড়ে বড় হল? কেমন হয়েছে সে?
এই কৌতূহল বোধহয় পরিচালকেরও ছিল। নচেৎ, যে উপন্যাস বিশ্বের দরবারে ভারতকে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা এনে দিয়েছে তাকে নতুন করে পর্দায় দেখানোর লোভ সামলাতে পারলেন না কেন? এই প্রশ্নের জলবততরলং উত্তর দিয়েছেন শুভ্রজিৎ, 'সত্যজিৎ রায়কে ছোঁয়া বা অতিক্রমের কোনও স্পর্ধা বা ইচ্ছেই আমার নেই। আমি শুরু করছি ঔপন্যাসিকের অপু ট্রিলজির শেষ ১৫০-২০০ পাতা নিয়ে। সেই অংশ আজও কেউ ছোঁয়নি। যেখানে আস্তে আস্তে কাজল বড় হবে বাবার কাছে থেকে। একসময় বাবা-ছেলে হয়ে উঠবে খুব ভালো বন্ধু। কারণ, অপু আর কাজল যে একে অন্যের পরিপূরক। কারণ, আপন বলতে তাদের যে আর কেউ নেই। কাজলকে সঙ্গে নিয়ে অপু আবার ফিরে যাবে বারাণসীতে। নিশ্চিন্দিপুরে। ফেলে আসা ছোটবেলা দেখতে। একইসঙ্গে অপু তার চরৈবেতি মন্ত্র ছড়িয়ে দেবে কাজলের মনেও। ১৯৪০ সালের কলকাতা, নিশ্চিন্দিপুর নতুন করে গড়ে নেব আমরা।'
ছবিতে অপু ওরফে অপূর্ব অর্জুন চক্রবর্তী। যাঁর বিষ্ময় মাখানো দুই চোখ আর পরিণত বয়সেও সারল্য মাখানো মুখ টেনেছে শুভ্রজিৎকে। কাজলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। ৮২ জন বাচ্চাকে দেখার পর ৮৩ নম্বরে থাকা আয়ুষ্মান মুখোপাধ্যায় নির্বাচিত হয়েছে কাজলের ভূমিকায়। 'অভিযাত্রিক'কের যাত্রাপথ আরও সুগম করতে ছবিতে থাকছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র, দ্বিতিপ্রিয়া রায়, রূপাঞ্জনা মিত্র, তনুশ্রীশংকর, সোহাগ সেন, বরুণ চন্দ, বিশ্বনাথ বসু, সোহাগ সেন। শুভ্রজিৎ জানিয়েছেন, সব্যসাচী চক্রবর্তীকে দেখা যাবে বিশ্বপরিব্রাজকের ভূমিকায়। এই চরিত্র উপন্যাসেও ছিল। যাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে অপুর। এভাবেই অফস্ক্রিন বাবা-ছেলের রসায়ন ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করেছি। গত তিন-চার মাস ধরে বাচাচদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করাচ্ছেন 'হামি' খ্যাত সঙ্গীতা চক্রবর্তী। যিনি পেশায় সাউথ পয়েন্টের শিক্ষিকা। এছাড়া, ফ্লোরে বাকিটা দেখাশোনা করবেন সোহাগ সেন। সঙ্গীতে বিক্রম ঘোষ। পোশাক পরিকল্পনায় অগ্নিমিত্রা পাল।