ক্ষুব্ধ, ক্ষিপ্ত তিলোত্তমা
কলকাতা: আক্রমণের শেষ নেই। জামিয়া বিশ্ব বিদ্যালয়, আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের পর গতকাল সন্ধেয় ফের হিংসা দিল্লি দক্ষিণে। এবার আক্রান্ত জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (JNU) কমবেশি ৩০ জন শিক্ষক-ছাত্র। এভিবিপির দিকে আক্রমণের আঙুল উঠলেও প্রকৃত দোষী এখনও অধরা। কিন্তু এভাবেই কি প্রশ্ন তুলে বারবার বর্তমান প্রজন্মের হাতে নিগৃহীত হবে আগামী প্রজন্ম? সোমবার বিকেলে গতকালের হামলার প্রতিবাদ মিছিল বের করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। কী বলছেন কলকাতার বুদ্ধিজীবী মহল? জানালেন Aparna Sen, কৌশিক সেন, অনীক দত্ত----
প্রতিবাদ জানাতে জানাতে ক্লান্ত (অপর্ণা সেন, অভিনেতা-পরিচালক): খুব স্পষ্ট করে জানালেন ৩৬ সিক্স চৌরঙ্গি লেন ছবির পরিচালক। বললেন, প্রতিবাদ জানাতে জানাতে ক্লান্ত আমি। আর কত প্রতিবাদ জানাব? তাতেও কি থামবে হিংসা? কাল রাতে ঘটনা জানার পরেই টুইটে জানতে চেয়েছি, এভাবে মুখোশে মুখ ঢেকে গুণ্ডামি করছে কারা? এবিভিপি? আরএসএস? জানি না, বললেও প্রশ্ন কিন্তু উঠবেই। বিশ্ব জুড়ে সারাক্ষণ হিংসাত্মক কার্যকলাপ। কেন হচ্ছে এমন? গতকাল সন্ধেয় যখন দিল্লি দক্ষিণের এই ঐতিহ্যপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চলছিল তখন কী করছিল দিল্লি পুলিশ? আমাদের দেশে এসব হচ্ছেটা কী? খুল্লামখুল্লা 'গুণ্ডারাজ' চলছে?
ভয় পেয়ে মুখোশের আড়াল নিচ্ছে শাসক (কৌশিক সেন, অভিনেতা): ধন্যবাদ নরেন্দ্র মোদি। ধন্যবাদ অমিত শাহ। আপনারা রাজনীতিকে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দিলেন। এতদিন রাজার নীতি সীমাবদ্ধ ছিল প্রধানমন্ত্রী-সোনিয়া গান্ধির মধ্যএ। অমিত শাহ-রাজীব গান্ধি-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে। কেন্দ্রের কল্যাণে এবার ব্যাটন হাতে তুলে নিয়েছে আগামী প্রজন্ম। এর খুব দরকার ছিল। আসলে, মোদি-শাহ খুব ভয় পেয়েছেন। তাই সন্ধের অন্ধকারে, মুখোশের আড়ালে গুণ্ডারাজ চালাচ্ছেন। আর একের পর এক ব্লান্ডার করছেন। জামিয়া-আলিয়া-জেএনইউ--- তারই উদাহরণ। শুধু রাজনীতি নয়, সব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার আছে আগামী প্রজন্মের। বর্তমান প্রজন্মের কাছে। সেই অধিকার এভাবে কেড়ে নিচ্ছে শাসক! লাঠি-রডের বাড়ি মেরে রক্তাক্ত করে! এটাই কি রাজার নীতি?
'বলা নয়, এবার সময় কিছু করার' (অনীক দত্ত, পরিচালক): বলার আর কিছুই নেই। এবার কিছু করতে হবে। এতদিন ধরে কতিপয় কিছু মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। সমাবেশ, মঞ্চ, মোমবাতি মিছিল করেছেন। আজও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় জমায়েতেরডাক দিয়েছে প্রতিবাদের উদ্দেশ্যে। শুধু মোমবাতি মিছিল দিয়ে আর কী হবে! সত্যিই এখন খুব দরকার যুব প্রজন্মের এগিয়ে আসার। সাতের দশক এগিয়ে এসেছিল। নিজেদের ভবিষ্যতের তোয়াক্কা না করেই। আমরা, বর্তমান প্রজন্ম তা করিনি। তারই ফলে, আগামী প্রজন্ম বিপর্যস্ত। ওরা বুঝেছে, এদের অস্তিত্ব সংকটে। পড়াশোনা, চাকরি, নাগরিকত্ব সব নিয়ে। বিশ্বাস ভাঙছে সবার। কলকাতা, ভারত, আমেরিকা--- বিশ্বের কোনও জায়গা আর নিরাপদ নয়। এবার বদল আনতে হবে। আর সেটা আনবে যুবসমাজ। আমরা ওদের পাশে থাকব অবশ্যই।
এছাড়াও প্রতিবাদ টুইটে প্রতিবাদ জানিয়েছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, আবীর চট্টোপাধ্যায়। যুবশক্তিকে হাল ধরতে আহ্বান জানিয়েছেন আবীর।
আমরা কোন দেশে বাস করছি? (অরিন্দম শীল, অভিনেতা-পরিচালক): যুবশক্তি মুখ খুললেই পুলিশি অত্যাচার শুরু। মুখোশ পরে, লাঠি হাতে বেধড়ক মারধর। আমরা কোন দেশে বাস করছি? এভাবে ভয় দেখিয়ে দাবিয়ে রাখা ফ্যাসিবাদের লক্ষ্মণ। এভাবে দিনের পর দিন চলতে পারে না। ষুবশক্তিকে প্রতিবাদ করতেই হবে। পাশে থাকতে হবে সবাইকে। তবে যদি রাষ্ট্রের চোখ খোলে।