Asansol Vote:সোমবার আসানসোলে ভোটগ্রহণ।(ছবি প্রতীকি)
আসানসোল: রাজ্যের খনি, শিল্পাঞ্চল বলতে প্রথমেই যে জায়গাটির নাম মনে পড়ে যায়, সেটি হল আসানসোল(Asansol)। বাংলার এই অঞ্চলটি কয়লাখনির এক অন্যতম এলাকা। বৈধ, অবৈধ সবরকম খনন কাজই এই এলাকায় চলে বলেই রটনা লোকমুখে। স্থানীয় মানুষজনের মধ্যে একাংশের রুটি, রুজিও হয় এই খনন কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকেই। বিশেষ করে, গরীব, প্রান্তিক মানুষরা খননকাজ করেই তাঁদের দৈনন্দিন ব্যায়ভার বহন করেন। সোমবার আসানসোলে(Asansol) ভোটগ্রহণ। তবে নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই অবৈধ কয়লা খনিতে কাজ বন্ধ হয়েছে। ফলে আয়ে কোপ পড়েছে এলাকার মানুষদের। সেই কারণেই ক্ষোভে ফুঁসছেন কয়লা খনির সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা। নোটায় ভোট দিয়ে তাঁরা প্রতিবাদ জানবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আসানসোলের কয়লাখনি এলাকার বাসিন্দারা।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ভূমিতে ধ্বনিত হচ্ছে “জয় শ্রীরাম”
পশ্চিমবঙ্গের কয়লাখনি এলাকা বলতে মূলত রাণীগঞ্জ-আসানসোল(Asansol)। বৈধ, অবৈধ, দুইরকম খনন কাজ চলে এই এলাকায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই গরীব মানুষদের অল্প পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তাঁদের খননকাজে লাগিয়ে দেয় কয়লা মাফিয়ারা। নির্বাচন কমিশনে ভোট ঘোষণা করা এবং ভোটে কালো টাকার আমদানি রুখতে বাজেয়াপ্ত করা শুরু করার পরেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছে কয়লা মাফিয়ারা। আর তাতেই সমস্যায় পড়েছেন কয়লাখনির কাজের সঙ্গে যুক্ত গরীব প্রান্তিক শ্রমিক শ্রেণীর মানুষরা।
General Elections 2019: চতুর্থ দফায় রাজ্যের ৮ আসনে ভোটগ্রহণ সোমবার
এলাকায় প্রায়৩,৫০০ অবৈধ কয়লাখনি রয়েছে, যেগুলি হয় বন্ধ হয়ে গেছে, নাহলে কাজের গতি শ্লথ হয়েছে। ফলে কাজ হারিয়েছেন এই সব কাজের সঙ্গে যুক্ত সামান্য মজুরিতে কাজ করা শ্রমিকরা। ফলে প্রতিবাদে নোটাকেই বেছে নিয়েছেন তাঁরা।
আসানসোল(Asansol) লোকসভা কেন্দ্রে গতবারের সাংসদ বিজেপির বাবুল সুপ্রিয় বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী গতবার বাঁকুড়া থেকে জয়ী অভিনেত্রী মুনমুন সেন। ইস্টার্ন কোলফিল্ডসের আধিকারিকদের মতে, নজর রাখা হচ্ছে অবৈধ কয়লাখনির ওপর এবং নির্বাচনের সময় গতি শ্লথ রয়েছে।
অতুল্য ঘোষের স্মৃতি বিজড়িত আসানসোলের দখল থাকবে কার হাতে?
সংবাদসংস্থা পিটিআইকে ইসিএলের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা যখনই কোনও তথ্য পাই, ব্যবস্থা নিই”। সূত্রের খবর, আসানসোল-রাণীগঞ্জ কয়লাখনি এলাকায় প্রায় ৩,৫০০ অবৈধ কয়লাখনিতে প্রতক্ষ্যভাবে যুক্ত রয়েছেন ৩৫,০০০ মানুষ, সেখানে পরোক্ষভাবে যুক্ত ৪০,০০০ মানুষ।
খনন কাজের সঙ্গে যুক্ত চল্লিশোর্ধ্বো আশিস সর্দার(নাম পরিবর্তিত) বললেন, “সারাদিন হাড় ভাঙা খাটুনির পর আমরা ৮০-১০০ টাকা পাই। কোনও মতে আমরা দুবেলা দুমুঠো অন্নের সংস্থান করি। আমাদের বাচ্চাদের আমরা এই কাজের লাগাতে চাই না। এখানে আমাদের না আছে কোনও চাষের জমি, না আছে অন্য কোনও শিল্প, ফলে এই কাজের ওপরেই আমাদের ভরসা করতে হয়। সরকারের উচিত, আমাদের সঠিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং শিশুদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা”।
বোলপুরে এবার জিতবেন কে
আরেক এক খননকর্মী রাণীবালা মুণ্ডা জানালেন, আগের কয়েকবার ভোটের সময় অতিরিক্ত নজরদারির কারণে, কাজ বন্ধ রেখেছিল কয়লা মাফিয়ারা। ফলে ব্যপক বেকারত্ত্ব দেখা দিয়েছিল।তাঁর কথায়, “আমাদের নিয়ে কোনও মাথাব্যাথা নেই সরকার বা রাজনৈতিক দলগুলির।কিন্তু যখনই ভোট আসে, তারা আমাদের প্রতিশ্রুতি দেয়, এই খনিগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে।তাহলে আমরা কী খাব?আমাদের সংসার চালাব কীভাবে?এবার আমাদের পুরো পরিবার নোটায় ভোট দেবে”।
এখন গড় কিন্তু কবে প্রথম বহরমপুরে জেতে কংগ্রেস?
খনন কর্মীদের দেখভালের সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদার রাজুর(নাম পরিবর্তিত)গলাতেও শোনা গেল একই সুর। তিনি বললেন, “ভোটের সময় অনেক প্রতিশ্রুতি দেয় রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু সেগুলি পূরণ করে না। আমাদের মনে হয়, এই কাজকে বৈধ করে দেওয়া উচিত, যাতে আমাদের উপকার হয় এবং সন্তানদের এই কাজ করতে না হয়। আমাদের শিশুদের সুস্বাস্থ্য চাই আমরা, এবং সংসার চালাত ভাল কাজ চাই। কিন্তু আমাদের আশা আকাঙ্খা আগাধ জলেই পড়ে থাকে। আমাদের নোটাতেই ভোট দেওয়া উচিত”।
কী হবে এবার বীরভূমে, রণভূমে মুখোমুখি কারা কারা, জেনে নিন বিস্তারিত
বেশীরভাগ খননকর্মী, যাঁরা কাজ ছেড়ে দিয়েছেন, তাঁদের দাবি, ভোটের সময় তাদের হয় কাজ করতে বলেছে বহু রাজনৈতিক দল। সূত্রের খবর, অবৈধ কয়লাখনিতে দৈনিক প্রায় কোটি টাকার লেনদেন হয় এবং আসানসোল ও তার পাশ্বর্বতী অঞ্চলে এটি একটি সমান্তরাল অর্থনীতি হিসাব কাজ করছে। এমনকী, এই নিজেদের জীবন বাজি রেখে যাঁরা এই খনন কাজ চালিয়ে যান, সেই সমস্ত শ্রমিকদের ভাগ্যেও সেভাবে কিছু জোটে না। অবৈধ কয়লাখনি থেকে তোলা কয়লা বিক্রি হয় টন প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে, সেখানে ১২ ঘন্টা কাজ করে এক জন শ্রমিক পান মাত্র ৮০-১০০ টাকা।
কংগ্রেস বা তৃণমূল নয় বামেদের থেকে এই লোকসভা কেন্দ্র ছিনিয়ে নিয়েছিল বিজেপি
গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার শ্রমিক আটকে বা মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেছে।নাম জানাতে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক নেতা জানালেন, স্থানীয় কোনও শ্রমিকের কিছু হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ লাখ টাকা পান, পাশ্বর্বতী এলাকার উপজাতির হলে হলে তিনি পান ৫০,০০০ টাকা।তিনি বলেন, “কেউই তাঁদের কথা বলতে সাহস পান না, নাহলে তাঁদের প্রাণে মেরে ফেলা হবে”।
বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় বলেন, “সবাই জানে, স্থানীয় প্রশাসন এপবং তৃণমূলের সঙ্গে গোপন আঁতাত রয়েছে কয়লা মাফিয়াদের। কাজটা এখন ধীরে চললেও, নির্বাচন হয়ে গেলেই গতি আসবে”।
বাঁকুড়ার মতো আসানসোলেও মিরাকেল করতে পারবেন মুনমুন?
প্রাক্তন সিপিআইএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীও প্রায় একই সুরে অভিযোগ করেন, অবৈধ কয়লাখনি থেকে আসা টাকা তৃণমূলের ভোটের কাজে ব্যবহৃত হয়।
যদিও সেই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মলয় ঘটক। পুরো বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদনা করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে।)