প্রতীক হাজেলা নাগরিকপঞ্জী সংকলনের ত্রুটির জন্য রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের সমালোচনার মুখেও পড়েন
গুয়াহাটি: শনিবার অসমের নাগরিকদের চূড়ান্ত তালিকা (National Register of Citizens) প্রকাশের পরে ওই রাজ্যের এই বিশাল তথ্য সংগ্রহ ও শ্রেণিবিন্যাসের নেপথ্যে থাকা মানুষটির কথা জানতে উন্মুখ হয়ে রয়েছেন দেশবাসী। এই সমগ্র নাগরিকপঞ্জী তদারকি করার (NRC coordinator) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হলেন প্রতীক হাজেলা (Prateek Hajela)। সংবেদনশীল ইস্যুতে সাম্প্রদায়িক ও ভাষাতাত্ত্বিক বিষয়ে রাজনৈতিক ঘোলা জলেও অবিচল রইতে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক এনআরসি সমন্বয়ক (NRC coordinator) হিসাবে নিযুক্ত করা হয় অসম-মেঘালয় ক্যাডারের ১৯৯৫ ব্যাচের আইএএস আধিকারিক প্রতীক হাজেলাকে (Prateek Hajela)। মধ্য প্রদেশের বাসিন্দা প্রতীক হাজেলা (Prateek Hajela) ৫২,০০০ কর্মকর্তার একটি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৩.৩ কোটি আবেদনকারীদের ছয় কোটি তথ্যের মাধ্যমে এই ভারতীয় নাগরিকত্বের বৈধতা যাচাই করতে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে নিজেকে গণমাধ্যম থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখছেন হাজেলা। শুক্রবার রাতে মুখে চওড়া হাসি নিয়েই তাঁর কার্যালয় থেকে বেরোতে দেখা যায় তাঁকে। তিনি শনিবারও কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন, যদিও চূড়ান্ত এনআরসি অনলাইনে প্রকাশিত হওয়ার পরেও সাংবাদিকদের কাছে ধরা দেননি তিনি।
Assam NRC:অসমের এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়ল ১৯ লক্ষ মানুষের নাম
চূড়ান্ত এনআরসি তালিকাটি শনিবার সকাল ১০ টায় প্রকাশিত হয়েছিল এবং ১৯,০৬,৫৭৭ জন মানুষকে সেই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ তাঁর আমলে এনআরসির কাজ শুরু করার কৃতিত্ব দাবি করেছেন। ২০১৩ সালে নাগরিকত্বের তালিকা আপডেট করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পরেই প্রতীক হাজেলাকে রাজ্য সমন্বয়কারী (NRC coordinator) হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন তরুণ। নাগরিকত্বের বৈধতা পাওয়ার জন্য কোনও আবেদনকারীর পারিবারিক শিকড়কে সনাক্ত করে “পারিবারিক উত্তরাধিকারের তথ্য” (family legacy data) ধারণার প্রবর্তন করেন প্রতীক।
প্রতীক হাজেলার প্রযুক্তিগত দক্ষতা বেশ প্রশংসনীয়। আইআইটি দিল্লি থেকে ইলেক্ট্রনিক্সে বিটেক ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি, আসামের প্রতিটি বাসিন্দার পরিবারের শিকড়ের উৎস সংগ্রহ (family legacy data) ও জড়ো করার জন্য একটি উদ্ভাবনী ব্যবস্থা চালু করেছিলেন তিনি।
তথ্যগুলিতে ১৯৫১ সালে প্রস্তুত প্রথম এনআরসি, বা ২৪ মার্চ, ১৯৭১ সালের মধ্যরাত পর্যন্ত কোনও ভোটার তালিকায় বা অন্য যে কোনও স্বীকৃত দলিল যা নাগরিকদের বা তাদের বংশধরদের আসাম বা ভারতের কোনও অংশে উপস্থিতি প্রমাণ করবে তাঁদেরই নাম রয়েছে।
প্রতীক হাজেলা নাগরিকপঞ্জী সংকলনের ত্রুটির জন্য রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের সমালোচনার মুখেও পড়েন। গুয়াহাটির নাগরিক সমাজ গোষ্ঠী ‘সচেতন নাগরিক মঞ্চ' ভুলভাবে তালিকা থেকে বাদ এবং তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ তুলেছে।
বাংলাতেও চালু হবে NRC , বললেন দিলীপ ঘোষ
প্রতীক হাজেলা এর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন: “প্রথমবার কেবলমাত্র আসামের এনআরসি আপডেটের সময় সমগ্র দেশে এই মাপকাঠি নতুন একটি ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। এই সিস্টেমটি অবশ্যই যাচাইয়ের অন্যতম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেই।"
মজার বিষয় হল, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭ সালে প্রকাশিত প্রথম এনআরসি খসড়ায় প্রতীক হাজেলা এবং তার কন্যার নামই বাদ পড়েছিল। এরপরে দু'জনই শুনানির জন্য হাজির হন যার পরে তাদের নাম চূড়ান্ত খসড়ায় ধরা পড়ে।