বিক্ষোভ যেখানে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে সেখানে সেনা মোতায়েন করেছে কেন্দ্র
গুয়াহাটি: নাগরিকত্ব বিলের (Citizenship Amendment Bill) প্রতিবাদে উত্তপ্ত অসমের গুয়াহাটিতে (Assam's Guwahati) পুলিশের গুলিতে অন্ততপক্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। বুধবার রাতে সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার পরেই, সেখানে কারফিউ জারি করা হয়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেই কারফিউ অমান্য করে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েন, সেই কারণেই এই ঘটনা। এর আগে এদিনই, সেরাজ্যের ১০টি জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা আরও ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়, এবং যেখানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে, সেই চারটি এলাকায় সেনা মোতায়েন করা হয়। উত্তর-পূর্বের অন্যান্য জায়গাতেও অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে, অসম ও ত্রিপুরায় রেল পরিষেবা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে, এবং গুয়াহাটি ও ডিব্রুগড়ে বহু উড়ান বাতিল করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামেশ্বর তেলির বাড়িতে হামলা চালিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
ভারত সফর বাতিল করলেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী, সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না, বলল কেন্দ্রীয় সরকার
অতিরিক্ত মুখ্যসচিব কুমার সঞ্জয় কৃষ্ণা জানিয়েছেন, অসমের ১০ জেলায় আরও ৪৮ ঘণ্টা ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হবে, যা শুরু হবে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে। বিক্ষোভকারীরা মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল, রামেশ্বর তেলি এবং বিজেপি নেতা বিনন্দা হাজারিকার বাড়িতে বিক্ষোভকারীরা হামলা চালানোয় গুয়াহাটি ও ডিব্রুগড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে। খবর পাওয়া গিয়েছে, ছাত্র সংগঠনের ডাকা প্রথমদিকের বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ, পরে ক্ষুব্ধ বহু মানুষ যোগদান করায় তা ব্যাপক আকার ধারণ করে।
৭০ জন করে জওয়ান থাকা সেনা কর্মীদের ৫ কোম্পানি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে অসমে। গুয়াহাটিতে রুটমার্চ করেছে দু কোম্পানি সেনাবাহিনী। লেফটেন্যান্ট কর্নেল পি কোঙ্গসাইকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআই এমনটাই জানিয়েছে। তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড় এবং জোরহাটেও সেনা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে সংবাদসংস্থা জানিয়েছে।
নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভের জের, বাতিল উত্তর-পূর্বগামী বিমান
হিংসা ছড়িয়ে পড়ায়, গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার দীপক কুমারকে সরিয়ে তাঁর জায়গা.য় আইপিএস মুন্না প্রসাদ গুপ্তা নিয়ে এসেছে সরকার। বদলি করে দেওয়া হয়েছে অসমের এডিজি আইনশৃঙ্খলা মুকেশ আগরওয়ালকেও, তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে জিপি সিংহকে।
যেহেতু পরিস্থিতি একই রকম রয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে ট্যুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, অসমের মানুষের কোনও উদ্বেগ করার কারণ নেই, কারণ, “কেউই আপনাদের অধিকার ছিনিয়ে নেবে না”। একটি ভিডিও বার্তায় সর্বানন্দন সোনোওয়াল বলেন, “অসমের বাসিন্দাদের অধিকার, ঐতিহ্য এবং পরিচিতি এবং সংস্কৃতি রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর”, পাশাপাশি তাঁদের উন্নয়নের পথে আসার আহ্বান জানান, “যেখানে আমাদের সনাতনী শান্তির ঐতিহ্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব বজায় থাকবে”।
"আপনাদের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না", নাগরিকত্ব বিল বিষয়ে অসমকে আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর
অসমের ডিব্রুগড়গামী এবং সেখান থেকে সমস্ত উড়ান বাতিল করা হয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত গুয়াহাটি-ডিব্রুগড় রুটের সমস্ত বিমানের টিকিট মূল্য ফেরত এবং বাতিল করার শুল্ক মকুবের ঘোষণা করেছে স্পাইসজেট। এই দুটি শহরে উড়ান বাতিল করেছে ভিস্তারা এবং গো এয়ার, পাশাপাশি তাদের তরফেও টিকিটের মূল্য ফেরৎ এবং বাতিল করার শুল্ক মকুব করা হয়েছে।
বুধবার রাতে রাজ্যসভায় পক্ষে ১২৫টি এবং বিপক্ষে ৯৯টি ভোট পেয়ে পাশ হয় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, প্রতিবাদে অসমের রাস্তায় নেমে পড়েন হাজার হাজার মানুষ।
পুলিশ জানিয়েছে, গুয়াহাটির আমবাড়ি এলাকায় বিজেপির জোটসঙ্গী অসম গণপরিষদের সদর দফতরে হামলা চালান বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীরা। অগ্নিসংযোগ করা হয় ডিব্রুগড়ের ছাবুয়া এবং তিনসুকিয়া রেলস্টেশনে, এমনটাই জানিয়েছে উত্তর-পূর্ব ফ্রন্টিয়ার রেলের এক মুখপাত্র।
ত্রিপুরায় অসম রাইফেলসের তিন কোম্পানি বাহিনী নামানো হয়েছে বলে জানায় সেনা। এর আগে প্রতিরক্ষা বিভাগের এক মুখপাত্র জানান, ত্রিপুরায় দুই কোম্পানি বাহিনী নামানো হয়েছে।
আইনে পরিণত হওয়ার আগেই এবার সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জের মুখে নাগরিকত্ব বিল
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো থেকে আরও ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিলের প্রতিবাদে অসমে বনধ্ এর ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। অমুসলিম অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার রাস্তা সহজ করে দেওয়া হয়েছে এই বিলে। বিরোধীদের অভিযোগ, বিলটি নিয়ে পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। উত্তর-পূর্বের বিক্ষোভকারীদের দাবি, এই বিল এলাকার পরিচিতি নষ্ট করবে।
আজকের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি দেখতে ক্লিক করুন:
দুদিন আগে লোকসভায় পাস হয় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, সেখানে সরকারপক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, বিলের পক্ষে ৩৩৪টি ভোট। রাজ্যসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও, বিজু জনতা দল এবং তেলেগু দেশম পার্টির মতো দলগুলির সাহায্যে সংখ্যা জোগাড়ে সফল হয় সরকারপক্ষ।