অযোধ্যা সমস্যার জট যেন কাটতে কাটতেও কাটছে না। অযোধ্যার (Ayodhya) বিতর্কিত জমিতে মন্দির হবে নাকি মসজিদ, এই দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন জলঘোলা হওয়ার পর একটি সূত্র দাবি করে যে, সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ড নাকি ওই জমি নিয়ে তাঁদের দাবি ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মধ্যস্থতা কমিটির কাছে। এমন তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরেই শুক্রবার অযোধ্যা মামলার (Ayodhya Case) মুসলিম পক্ষের এজাজ মকবুল সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের (Sunni Waqf Board) সম্পর্কে সূত্র মারফৎ করা দাবি খারিজ করে দিয়েছেন। মুসলিম আবেদনকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী পাঁচ আইনজীবীর একটি দল একটি মধ্যস্থতা প্যানেলের এ জাতীয় কোনও প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়ার করা অস্বীকার করে একটি বিবৃতি দিয়েছে। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি প্রতিবেদনও জমা দিয়েছেন তাঁরা। ওই মামলার অন্যতম আবেদনকারী এম সিদ্দিকের প্রতিনিধিত্বকারী এজাজ মকবুল বিশদ বিবৃতিতে বলেছেন, ওয়াক্ফ বোর্ডকে বাদ দিয়ে বাদ দিয়ে অন্য মুসলিম দলগুলি সুপ্রিম কোর্ট-নিযুক্ত মধ্যস্থতা প্যানেলের প্রস্তাবিত বন্দোবস্তের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করছে।
অযোধ্যা মামলায় দৈনিক শুনানি শেষ সুপ্রিম কোর্টে, রায়দান স্থগিত
বুধবার একটি সূত্র দাবি করে যে, ওয়াকফ বোর্ড, ওই বিতর্কিত স্থানের দাবি ছাড়ার পাশাপাশি সেই জমিতে রাম মন্দির তৈরি করা নিয়েও কোনও আপত্তি তোলেনি। সেই সূত্র অনুসারে বোর্ড স্পষ্টতই অন্য কোনও উপযুক্ত জায়গায় মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব করেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
আইনজীবীরা এই দাবির প্রতি তীব্র সমালোচনা করে বলেন,"আমাদের বুঝতে হবে যে শীর্ষ আদালতে দৈনিক শুনানি প্রভাবিত না করার কথা বলে যখন সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে শুনানি শুরু করে তখন মধ্যস্থতা করার জন্যে কেবলমাত্র কয়েকজন ছিলেন, এই মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তিরা হলন, নির্বানী আখড়ার ধর্ম দাস, সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের জুফার ফারুকী এবং হিন্দু মহাসভার শ্রী চক্রপাণি"।
"তাই এই প্রস্তাব মেনে নেওয়া কঠিন, কেননা প্রধান হিন্দু দলগুলি যখন প্রকাশ্যেই বলেছে যে তারা কোনও বন্দোবস্তের বিষয়ে রাজি নয় এবং অন্যান্য সমস্ত মুসলিম আবেদনকারীরাও এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তাঁরাও মানবে না", লিখেছেন আইনজীবীরা ।
অযোধ্যা প্যানেলের পরিকল্পনা হিন্দু, মুসলিমদের জয়: সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড
অযোধ্যা মামলা নিয়ে জট খুলতে, সুপ্রিম কোর্টের তৈরি করা মধ্যস্থতা প্যানেল যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে জয় হতে পারে হিন্দু, মুসলিম, দুপক্ষেরই, বৃহস্পতিবার এমনটাই জানান সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী। সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী শাহিদ রিজভি NDTV কে বলেন, “আমরা মধ্যস্থতাকারী প্যানেলকে আমাদের মতামত দিয়েছি, তবে আমরা মধ্যস্থতার বিস্তারিত পরিকল্পনা জানাতে পারি না, যেটি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এটা সবার জন্যই ইতিবাচক—হিন্দু ও মুসলিম, খুশি হবে”। এই মধ্যস্থতায় দুপক্ষই খুশি হবে কিনা, সে প্রশ্নের উত্তরে আইনজীবী শাহিদ রিজভি বলেন, “হিন্দু ও মুসলিম, দুপক্ষেরই জয়ের মতো পরিস্থিতি”।
১৭ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ অবসর নেওয়ার আগে এই মামলার রায় দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশ সরকার রায়ের প্রত্যাশায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে এলাকায়।
হিন্দু ও মুসলমান উভয় পক্ষই এই জমির দাবি করেছে। তবে অনেক হিন্দুই বিশ্বাস করেন যে এই স্থানটি ভগবান রামের জন্মস্থান ছিল এবং সেখানে একটি প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপর একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। ঘটনাস্থলে থাকা ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত বাবরি মসজিদটি ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন কিছু ডানপন্থী কর্মীরা। মসজিদ ধ্বংস হওয়ার ওই ঘটনায় সেই সময় দেশে প্রবল হিংসা ছড়ায়।
দেখুন ভিডিও: