কলকাতা: আচ্ছা আমাকে বলুন তো বাঙালি নারী প্রতিষ্ঠা করতে গেলে সাদা শাড়ি-লাল পাড় দেখাতে কেন হবে? কেন পায়ে আলতা; কপালে বড় সিঁদুরের টিপ দেখাতে হবে? এমনি সালোয়ার বা জিন্স-টপ কিংবা বেনারসি পড়লে বাঙালি নারী বোঝা যাবে না? কোন ডিকশনারিতে লেখা বাঙালি নারী মানেই সাদা শাড়ি-লাল পাড়। বাঙালি নারী মানেই পুজোর নৈবেদ্য সাজানো! ক্রিকেটার বা আইপিএস দেখালে কি প্রতিষ্ঠিত হতো না বাঙালি নারী। ঝুলন গোস্বামী বা দময়ন্তী সেন কি বাঙালি নারী না?
আমার তো মনে হয় সব নারীদের মাঝে বাঙালি নারী বাছাই করতে গেলে, ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হবে না। কারণ মুখের লালিত্ব (একটা দেবী ভাব) আর চোখের গভীরতা দেখেই বলে দেওয়া যাবে; হ্যাঁ উনি বাঙালি নারী। এর জন্য জ্যাকলিন কেন কাউকেই সাদা শাড়ি; লাল পাড় পরিয়ে পৃথক ভাবে বাঙালি নারী চিহ্নিত করতে হবে না। বাঙালি মানে ব্রেন। আর বাঙালি নারী মানে বিউটি উইথ দ্য ব্রেন। সেটা কাশ্মীরে গেলেও বিউটি উইথ দ্য ব্রেন; বিবেকানন্দ রকে গেলেও বিউটি উইথ দা ব্রেন। আর এই কারণে ভিন রাজ্যে বাঙালি নারীদের প্রতি অবাঙালি পুরুষদের ঝোঁক একটু বেশী। হাসিটা, চোখটা, নাকটা, ঠোঁটটা'র বাইরে পুরো পার্সোনালিটির ওপর ‘ফিদা' অবাঙালি পুরুষ।
ঐশ্বর্য; মাধুরী; রবিনার আকর্ষণের মধ্যেই সুস্মিতা সেনের আকর্ষণ আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। টিপ-টিপ বরসা পানীর পরেও তুমহে জো ম্যায়নে দেখা'র প্রতি আসক্তি বেশী কিশোর-যুবদের। ঐশ্বর্য-মাধুরী সুন্দরী। ইংলিশে যাঁকে বলে বিউটি। আর সুস্মিতা সেন, মোহময়ী। খুব খারাপ ইংলিশ বলে সেক্সি।
হ্যাঁ, এঁদের বাইরে দাপট দেখিয়েছেন 'ব্ল্যাক বিউটি' মোহময়ী বিপাশা বসু। আপনাদের অনেকের হয়তো বিপসকে পছন্দ না-ই হতে পারে। কিন্তু সব চরিত্র কাল্পনিকে ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিমছাম বাঙালি পরিচ্ছদে বিপাশাকে সাজিয়ে দেখিয়েছিলেন তাঁর মোহ কোথায়। বর্ণবৈষম্য নিয়ে ইন্ড্রাস্ট্রিতে একটা অদ্ভূত বিভেদ। রঙ চাপা মানে তুমি কেন্দ্রীয় চরিত্রে মানানসই না। অনেক-ক্ষেত্রে শুনতে হয়েছে ঈশিকাকে দে'কে। টিভিসি ও টলিউডের পরিচিত মুখ এই ঈশিকা দে। আট বছর ধরে 'গায়ের রং' একাধিক কেন্দ্রীয় চরিত্র থেকে তাঁকে বঞ্চিত করেছে। হয় গৃহপরিচারিকা; নয় পতিতা, এমন চরিত্রে তাঁকে কাস্ট করতে বেশী স্বচ্ছন্দ ইন্ড্রাস্ট্রি। অভিমানের সুরে জানান ঈশিকা। তাঁর মতে, ইন্ড্রাস্টিতে অভিনয়ের বাইরে 'স্কিন টোন'-ও পৃথক প্রাধান্য পায়। যার জেরে অনেক ছবিতে ব্রাত্য ঈশিকা। এটা গেল এক খেটে খাওয়া অভিনেত্রীর জবানবন্দি।
এবার আসুন চোখের বালিতে। সে ছবিতে বাঙালি কনে বেশে ঐশ্বর্যা রাই! এর চেয়ে ভালো আর কোনও মেকআপে কি রাই সুন্দরীকে মানাবে? ঐশ্বর্যার প্রকৃত বিউটি, সেই বাঙালি কনে সাজে। মানুন বা না মানুন; এটাই বড় সত্যি। এবার যদি প্রশ্ন করি আল্ট্রা মডার্ন বাঙালি নারী শর্মিলাকে অরণ্যের দিনরাত্রিতে দেখাননি সত্যজিত রায়? সেখানে সাদা শাড়ি; লাল পাড় পরাতে হয়নি। মাথায় সিঁদুরের টিপ দিতে হয়নি। কাজল-রাণী। করিশ্মা-করিনার যুগেও তাল মিলিয়ে অভিনয় করে গিয়েছেন। আর দিয়ে গিয়েছেন করার পর একটা হিট ছবি।
এদিকে, আবার মধুবালা; ওয়াহিদা রহমান; রেখা, হেমা মালিনীর দৌরাত্ম্যের মধ্যেও সাবলীল ছিলেন আমাদের মিসেস সেন ওরফে সুচিত্রা সেন। যাঁর পার্সোনালিটি উইথ বিউটিতে মজেছিলেন সঞ্জীব কুমার। এমনটাই গুঞ্জন টিনসেল টাউনে। 'ও যেন আমাকে টাচ না করে' সেই ভঙ্গিতে তখনকার দিনে কতজন বলতে পারতেন? সে সময় বেশ মোহময়ী ছিলেন রিঙ্কু দি অর্থাৎ শর্মিলা ঠাকুর। আরও এক ব্ল্যাক বিউটি রিনা দি তথা অপর্ণা সেন। অভিনয় হোক কিংবা পরিচালনা, সব ক্ষেত্রেই বাঙালি নারীর পারফেক্ট বিজ্ঞাপন।
আমি বেট ধরতে পারি এঁদের; আর পাঁচ জনের সঙ্গে সাদামাটা পোশাকে দাঁড় করিয়ে দিলে সহজেই অনুমেয় কারা বাঙালি! তাই শুধু সাদা শাড়ি; লাল পাড় কিংবা কপালে সিঁদুরের টিপ না। ছোট টিপ; হাল্কা লিপস্টিকে আর বাঙালি নারী। বাঙালি নারী মানে অনুপ্রেরণা, প্রেম। হঠাৎ নীরার জন্য কিংবা নাটোরের বনলতা সেন।
কারণ বাঙালি নারী মানে ওই যে বিউটি উইথ দি ব্রেন।