বালাকোটে ফের সক্রিয় হচ্ছে জঙ্গি শিবিরগুলি, বললেন সেনাপ্রধান বিপীন রাওয়াত। এর আগে ফেব্রয়ারিতে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান বালাকোটে (Balakot) বোমাবর্ষণ করে ধ্বংস করে জয়েশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠীর (Jaish-e-Mohammed) বেশ কিছু শিবির। জেনারেল রাওয়াত (Bipin Rawat) বলেন, "বালাকোটকে পাকিস্তান আবারও সক্রিয় করে তুলেছে। এই ঘটনাই প্রমাণ করে যে বালাকোট ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানহানায় সেইসময় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল, এই ঘটনা এই বাস্তবও তুলে ধরে যে বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনী কিছু পদক্ষেপ করেছিল কিন্তু এখন ওই জঙ্গিরা আবার সেখানে ফিরে এসেছে"। এর আগে একটি সংবাদপত্রের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে বালাকোটে ফের সক্রিয় হচ্ছে জঙ্গি শিবিরগুলি। এরপরেই ভারতের সেনাপ্রধান এই মন্তব্য করেন।
সরকারি সূত্রগুলি এনডিটিভিকে জানিয়েছে যে প্রায় ১২৯ জন জইশ জঙ্গি ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য এবং ইসরায়েলের তৈরি লেজার-গাইড বোমা দিয়ে আঘাত করার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে ও সুযোগের অপেক্ষায় ওই শিবিরগুলিতে আত্মগোপন করে আছে।
২৬ ফেব্রুয়ারি, ভারতীয় বিমান বাহিনী ফ্রান্স থেকে কেনা এক ডজন মিরাজ ২০০০ বিমান নিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ শিবিরগুলিকে বোমা মেরে ধ্বংস করে। তার আগে ভারতের পুলওয়ামায় একটি আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা চালানো হয় জঙ্গিদের তরফে। জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হওয়া ওই হামলায় আধাসামরিক বাহিনীর (সিআরপিএফ) ৪০ জন সেনা জওয়ান শহিদ হন ।
এই ঘটনা তখনই প্রকাশ্যে এল যখন আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশন (ইউএনজিএ)-এ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। আবার মোদির ভাষণের পরেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সেখানে ভাষণ দেওয়ার কথা। যেখানে ইমরান খান আগেই জানিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদাকে বাতিল করতে নেওয়া ভারতের পদক্ষেপের প্রসঙ্গ তুলবেন তিনি। মোদি সরকার অগাস্টের প্রথমেই জানায় যে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করে রাজ্যটিকে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ, দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করবে।
বালাকোটে ধ্বংস হওয়া জঙ্গি শিবিরগুলিকে পুনরায় উজ্জিবীত করতে সক্রিয় প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তান। অথচ পাকিস্তানের মাটিতে কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীকে আশ্রয় না দেওয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্তরের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ওই দেশ। তা সত্ত্বেও তলে তলে জঙ্গিদের মদত দিয়েই চলেছে ইমরানের দেশ এমনটাই বারবার অভিযোগ করেছে ভারত।
ইতিমধ্যেই পাকিস্তানকে বিশ্ব সন্ত্রাস ফিনান্স ওয়াচডগ ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ) তাদের "বর্ধিত কালো তালিকাভুক্ত" করেছে। পাকিস্তানকে এফএটিএফের ২৭-দফা কর্ম পরিকল্পনায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য ১৫ মাসের সময়সীমা দেওয়া হয়, যার মধ্যে জঙ্গিদের গ্রেফতার করা এবং তাদের তহবিলের জোগান বন্ধ করাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, আর এই সময়সীমা আগামী অক্টোবরেই শেষ হবে।
এফএটিএফ-এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না করলে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের কাছে ডাউনগ্রেড করার পাশাপাশি মুডিজ, স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুয়ারস এবং ফিচের মতো ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলির কাছেও নেতিবাচক মূল্যায়নের মুখোমুখি হবে। এটি পাকিস্তানের আর্থিক বোঝা আরও বাড়িয়ে তুলবে। কেননা পাকিস্তানের অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে সমস্ত সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক উত্স থেকে সহায়তা প্রয়োজন সে দেশের।