দোলে একাকার শিক্ষাক্ষেত্র থেকে রাজনীতি
কলকাতা: কবিগুরুর সনির্বন্ধ ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও' অনুরোধ রেখেছে ঋতুরাজ। দোল পূর্ণিমায় বর্ণময় বাংলার (Bengal) প্রকৃতি, পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার আগুন লালে। আকাশ রঙিন মুঠো মুঠো আবিরে। সেই রঙ ছড়িয়ে পড়ল বীরভূমের লালমাটির দেশে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাধের শান্তিনিকেতনে। আবির, গুলালে রক্তিম বেলুড়মঠ প্রাঙ্গন। ফি-দিনের রাজনীতি দূরে সরিয়ে ৯ মার্চ বসন্ত উৎসবে (Holi) সাধারণের দেওয়া রঙ গায়ে মাখলেন মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সুজিত বসু, বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সহ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও।
'ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল'--- বলার আগেই ভোর ভোর প্রভাতফেরিতে মেতেছে তিলোত্তমা। বিভিন্ন অঞ্চলে নারী-পুরুষ-শিশু ফুল, আবির, নতুন পোশাকে সেজে কবিগুরুর গান-কবিতা কণ্ঠে নিয়ে বেরিয়েছিলেন শহর পরিক্রমায়। তাঁদের হাতের ফাগ তখন ছুঁয়েছে শহরের স্কাইস্ক্র্যাপারের জালে বন্দি নীলাকাশকে। বসন্ত বন্দনার ঢেউ আছড়ে পড়েছিল উত্তর কলকাতার টালা পার্ক থেকে দক্ষিণ কলকাতার রাজপথে। আজকের দিনে দখিনা বাতাস কলকাতাবাসীর মন থেকে উড়িয়ে নিয়ে গেছে করোনা ভাইরাসের (coronavirus) আতঙ্ককেও। সকাল থেকে সোনা রোদে ঝলমলে দিন যেন ডেকে বলেছে, 'আজ সবার রঙে রং মেশাতে হবে'। তবে সাবধান হতে ভোলেননি কেউ। কেমিক্যাল রঙের বদলে ভেষজ আবির দিয়ে রং খেলেছেন প্রায় সবাই। মুখে ছিল মুখোশ।
একসপ্তাহ আগে থেকে নবদ্বীপের বৈষ্ণব মাজার এবং মায়াপুরের ইস্কনে সাজো সাজো রব। এদিন সকাল থেকে এই দুই স্থানে নামসংকীর্তন, প্রভাতফেরির আয়োজন ছিল। সাড়ম্বরে চলেছে দোল খেলা। তবে মন্দিরেও রাখা ছিল স্যানিটাইজার এবং মুখোশ। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে।
বীরভূমের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় এবছর ''বসন্ত উৎসব'' নিষিদ্ধ। বিশাল জনসমাগম আটকাতে ক্যাম্পাস তাই ঘিরে ফেলে প্রশাসন। অনেক দর্শনার্থী সোনাঝুরি, খোয়াইয়ের মাঠে আবির দিয়ে দোল খেলেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন টুইটে রাজ্যবাসীকে দোল পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানান। বাংলায় সর্বধর্ম নির্বিশেষে বসন্ত উৎসব পালিত হয়ে বলেই এই উৎযাপনে মেতেছিলেন রাজনীতিবিদরাও। বাংলার মন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সুজিত বসুকে দেখা গেছে নিজেদের কেন্দ্রে সাধারণ মানুষের সঙ্গে রঙের উৎসবে মেতে উঠতে। দোল উৎসবে যোগ দেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ এবং সায়ন্তন বসুও।
উৎসবের আনন্দ থেকে বাদ পড়েনি ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ দেব ও স্বামী বিবেকানন্দের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত বেলুড় মঠ। আবিরে-রঙে এদিন রঙিন হয়ে ওঠে মঠ প্রাঙ্গন। গৃহী ভক্তদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন ব্রহ্মচারী, সন্ন্যাসীরাও। খোল-করতাল নিয়ে নামগান করেন তাঁরাও।