Child Marriage: একদিকে কন্যাশ্রী আরেকদিকে ইউনিসেফ, লড়াইয়ের ময়দানে হাত শক্ত হচ্ছে পুরুলিয়ার নারীদের
পুরুলিয়া: তার যখন পনেরো বছর বয়স, সেই সময় তার বিয়ে (Child Marriage) দিতে চেয়েছিল তার বাবা-মা। কিন্তু সে তাতে বাধ সাধে নিজেই। জানায়, এত অল্পবয়সে কিছুতেই বিয়ে করবে না সে। তার বদলে নিজের এত দীর্ঘদিনের লালন করে রাখা স্বপ্ন, ডাক্তার হয়ে সাধারণ গরীব মানুষের সেবা করা, তার দিকেই বেশি মনোসংযোগ করতে ইচ্ছুক। বাবা-মা তার কথা রেখেছিল। দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে তারপর। প্রিয়াঙ্কা বাউরী তার নিজের যোগ্যতাতেই হয়ে উঠতে পেরেছে তার গ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ ‘মুখ’। বহু নাবালিকার বিয়ে, তাদের বাবা-মা’দের ‘বুঝিয়ে’, একা হাতে রুখে দিয়েছে মাত্র সতেরো বছরের মেয়েটি।
“আমি আরও পড়তে চাই। ডাক্তার হতে চাই। গরীব ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের সেবার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই। এই কথাগুলি বলেই আমার বাবা-মা’কে আমি বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। তাঁরা বুঝেছিলেন। আমার বিয়েটা দেননি তাই। মা’কে বলেছিলাম, অল্পবয়সে বিয়ে করলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আমার শরীরেও”, তার সঙ্গে কথা বলতে আসা একাধিক সাংবাদিককে বলছিল পুরুলিয়ার সতেরো বছরের মেয়েটি।
পুরুলিয়ার নেতুরিয়া ব্লকের পর্বতপুট গ্রামের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা বলছিল, তার বাবা-মা চূড়ান্ত দারিদ্রের সঙ্গে আর লড়াই করতে না পেরে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিতে চাইছিল। ঠিক হয়ে গিয়েছিল বয়সে অনেকটা বড় পাত্রও। কিন্তু সেই সময় সে বাবা-মা’কে বোঝাতে সক্ষম হয় যে, অত অল্পবয়সে বিয়ে করলে ক্ষতি বই লাভ হবে না। এছাড়া, পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারলে এই ভয়ানক দারিদ্রের সঙ্গেও লড়াইটা করা যাবে চোখে চোখ রেখে। তার বাবা-মা তার কথা রেখেছিল।
“এখন আমি আমার মতোই আরও মেয়েদের বাবা-মা’কে বোঝাই। তাতে খুব ভালো সাফল্য পেয়েছি”, বলছিল প্রিয়াঙ্কা।
তবে, শুধু প্রিয়াঙ্কা একাই নয়, পুরুলিয়ার আনাচকানাচ জুড়েই রয়ে গিয়েছে এমন অজস্র ‘প্রিয়াঙ্কা’। যারা ইউনিসেফের সহায়তাকে পাথেয় করে নিজেদের লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছে। অপরকেও লড়াইটি চালিয়ে যেতে সহায়তা করছে। পুরুলিয়া এমনই এক জেলা যেখানকার 38.3 শতাংশ নাবালিকার বিয়ে হয়ে যায় আঠারোতে পড়ার অনেক আগেই।
এই জেলাটি নারী-স্বাক্ষরতার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে রয়েছে ভয়াবহভাবে। এই জেলায় নারী-স্বাক্ষরতার হার মাত্র 50.52 শতাংশ। গোটা রাজ্যে সামগ্রিকভাবে গড় নারী স্বাক্ষরতার হার 70.54 শতাংশ।
রয়েছে নবমী বেসরা বা রেনুকা মাঝির মতো পুরুলিয়ার একদম প্রত্যন্ত গ্রামের দুই লড়াকু মেয়েও। যাদের পড়াশোনা মাঝপথে থামিয়ে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের ব্যবহারে তিতিবিরক্ত হয়ে তারা নিজের পরিবারের কাছে ফিরে এসে পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছে আবার।
“আমি স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই। একজন পুলিশ অফিসার হয়ে উঠতে চাই”, জানায় নবমী বেসরা।
এই সকলকে নিয়েই পুরুলিয়া জেলায় কাজ করে চলেছে ইউনিসেফ। বাল্যবিবাহ রুখে দিয়ে পড়াশোনা করিয়ে মেয়েদের সমাজের মূল আলোটির দিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই যাদের উদ্দেশ্য। তাদের সঙ্গেই যোগ হয়েছে রাজ্য সরকারের প্রকল্প ‘কন্যাশ্রী’। আর, রয়েছে প্রিয়াঙ্কা, নবমী, রেনুকাদের মতো মেয়েদের কিছুতেই না হারার জেদ।
এই জেদই বলে দেয়, এত অন্ধকারেও কোথাও ঠিকই পাতা আছে আলোর সিঁড়িটি…