কবে আমূল বদলে গেল সময়? কবেই বা সমাজে চালু হল শিশুশ্রম? সমাজ খবর রাখে না। কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোর একসপ্তাহ আগে থেকে রকমারি, নানা রঙের ঘুড়িতে আকাশ ঢেকে ফেলার রেওয়াজ একটু একটু করে ফিকে হতে হতে সত্যিই ম্লান। এই নিয়ে কথা হচ্ছিল এন্টালির ঘুড়ির দোকানের মালিক কৈলাশ সাহুর সঙ্গে। ৭০ বছরের দোকান কৈলাশবাবুর। আপশোসের সঙ্গে জানালেন, আগে কী রমরমা ছিল ঘুড়ি ওড়ানোর। পুজোর প্রায় একসপ্তাহ আগে থেকে বিক্রিবাটা শুরু হয়ে যেত। আস্তে আস্তে কমতে কমতে সেই বিক্রি ৮০ শতাংশের নীচে নেমে গেছে।
কী কী ঘুড়ি বিক্রি হত তখন বা এখনও হয়? কৈলাশবাবু জানালেন, মোমবাতি, বক্কা, পেটকাটা, চাঁদিয়াল, মুখপোড়া--- কত রকমের নাম ছিল সেসব ঘুড়ির। এখনও সেই ঘুড়িই আছে। তবে খুব সমঝদার ছাড়া এই ঘুড়িগুলোর খোঁজ করে না কেউ। এবং এই ঘুড়ি ওড়ানোর চল বেশি ছিল উত্তর কলকাতায়। তখন আড্ডা চলত পাড়ার মোড়ে মোড়ে। এখন তো পড়ার চাপে ছোটরা সারাক্ষণ ব্যস্ত। খেলাধুলোও কেউ করে না। আর মোবাইল এসে যাওয়ার পর থেকে সবাই তাতেই বিনোদন খোঁজে। ফলে, ঘুড়ির খোঁজ আর কেউ করে না। কী ধরনের ঘুড়ি এখন চায় সবাই, বড় না ছোট? কৈলাশবাবু জানালেন, নানা সাইজ আছে--২ সেল, দেড় সেল, এক সেল, হাফ সেলের। সবচেয়ে বড়ে ঘুড়ি ২ সেলের। সাইজ যত কমে মাপ তত ছোট হয়। বিক্রি বেশি দেড় সেলের।
কী কী মেটিরিয়ালের ঘুড়ি থাকে দোকানে? কৈলাশবাবু জানালেন, কাগজের ঘুড়ি তো আছেই। আর আছে প্লাস্টিক, সেরিবিন পেপারের। এই পেপার আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে আসত। এখন দেশেই পাওয়া যায়। খুবই পাতলা হয়। তবে বেশি ভালো ওড়ে কাগজের ঘুড়ি। ঘুড়ি তো অনেক রকমের নামের রয়েছে। কোনটা কেমন? কৈলাশবাবুর বর্ণনায়, পেটকাটি হল দুই রঙের কনট্রাস্টে তৈরি ঘুড়ি। মুখপোড়ার ঘুড়ির মুখের কাছে অন্য রঙ থাকে বলে ওর এরকম নাম। চাঁদিয়ালের বুকে চাঁদের মোটিফ। মোমবাতি ঘুড়ির বুকে লম্বালম্বিভাবে সাদা চওড়া দাগ থাকে।
দাম কেমন? এবার তৃপ্ত হাসি হেসে জানালেন কৈলাশবাবু, ২ টাকা থেকে দাম শুরু! কারা বেশি কিনতে আসেন? ১২ বছরের ছেলেও আসে। আবার ৮০ বছরের দাদুও ঘুড়ি কিনে নিয়ে গেলেন ওড়াবেন বলে!, উত্তর কৈলাশ সাউয়ের।