রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে বৈঠকের পর বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে
কলকাতা: বিজেপি বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের (Debendra Nath Roy) মৃত্যু নিয়ে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি রামনা কোবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করল রাজ্য বিজেপি, সেখানেই বিধায়ককে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার বাতিলের দাবি তুললেন বঙ্গ বিজেপি নেতারা। সোমবার উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদে (Hemtabad in North Dinajpur district) একটি বন্ধ দোকানঘরের বারান্দা থেকে দেবেন্দ্রনাথ রায়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। এটিকে আত্মহত্যা বলে জানিয়েছে রাজ্য পুলিশ, যদিও বিজেপির দাবি “খুন করা হয়েছে” বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়কে। এদিন বিজেপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, দলের সাংসদ রাজু ভিস্ত, এবং রাজ্যসভায় মনোনীত প্রার্থী স্বপন দাশগুপ্ত।
ফাঁসেই মৃত্যু হয়েছে বিজেপি নেতার, জানাল ময়নাতদন্তের রিপোর্ট
এদিনের প্রতিনিধি দলের তরফে রাষ্ট্রপতিকে জানানো হয়, দেবেন্দ্রনাথ রায়ের “খুন” “ক্রমাগত রাজ্যে রাজনৈতিক খুনের মধ্যে আরও একটি”। যদিও বিজেপিকে “নোংরা রাজনীতি” না করতে বলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের তরফে বলা হয়, “বিজেপির নোংরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে থাকা উচিত। দেবেন্দ্রনাথ রায়ের পকেটে নোটে যে দুই ব্যক্তির নামোল্লেখ করা ছিল, তাদের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ”। রাজ্য সরকারের এক আমলা জানান, দেবেন্দ্রনাথ রায়ের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ফাঁসের কারণেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর এবং “অন্য কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি”।
হেমতাবাদের বিজেপি বিধায়কের রহস্যমৃৃত্য়ুতে তৃণমূল যোগ? সিবিআই তদন্তের দাবি
এদিকে, বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গে ১২ ঘণ্টার বনধ্ ডাকে বিজেপি। এদিন সকাল ৬টা থেকে বনধ্ কার্যকর হয় এবং মিশ্র সাড়া পড়ে। বেশ কিছু জায়গা দোকানপাট বন্ধ ছিল এবং রাস্তায় নেমেছে কম সংখ্যক যানবাহন। আবার এদিন বনধ্কে কেন্দ্র করে বিজেপি সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয় এবং বাসে পাথর ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠে বনধ্ সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে বৈঠকের পর বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মীদের খুন করা হচ্ছিল এখনও, এবার নির্বাচিত নেতাদের খুন করা হচ্ছে এবং আত্মহত্যা বলে চালানো হচ্ছে। রাজ্যে নৈরাজ্য বেড়েই চলেছে, এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোনও অধিকার নেই...আমরা বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার দাবি করেছি”।
রাষ্ট্রপতি ছাড়াও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে সিবিআই তদন্তের দাবি জানান রাজ্য বিজেপি নেতারা। কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের অভিযোগ, গত তিন বছরে বিজেপির ১০৫ জনকে খুন করা হয়েছে রাজ্যে।
রাষ্ট্রপতি ছাড়াও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও দেখা করেন বিজেপি নেতারা
রাজ্য বিজেপি সাংসদ রাজু ভিস্তের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হেনস্থা করতে রাজ্য পুলিশ এবং অন্যান্য প্রশাসনিক যন্ত্রকে কাজে লাগাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার, ফলে প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন। দলের আরেক নেতা তথা সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত বলেন, “রাজ্যে প্রচুর রাজনৈতিক খুন হচ্ছে, দেবেন্দ্রনাথ রায়ের খুন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়”। তাঁর কথায়, “আমরা অনেক দেখেছি...সমস্ত গণতান্ত্রিক নিয়ম ভেঙে দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হেনস্থা করা হচ্ছে”।
নবান্নে সাংবাদিকদের দেওয়া বিবৃতিতে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বল স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, “ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং প্রত্যক্ষদর্শী ও অন্যান্য তথ্যপ্রমাণ যাচাই করে প্রাথমিকভাবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের প্রাথমিক ধারণা এটি সন্দেহভাজন আত্মহত্যা”। তিনি আরও জানান, মৃতের জামার পকেট থেকে এলোমেলোভাবে লেখা পেপার নোট পাওয়া গিয়েছে, সেখানে “দুজনের নাম, তাঁদের ছবি এবং মোবাইল নম্বরের উল্লেখ রয়েছে”।
ভারভারা রাওয়ের মুক্তির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুন প্রধানমন্ত্রী, অনুরোধ অধীর চৌধুরীর
তিনি আরও বলেন, “মৃতের পকেটে থাকা নোটে যে দুই ব্যক্তির নাম, ছবি ও মোবাইল নম্বর পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের পরিচয় ও কাজকর্ম খতিয়ে দেখেছে রাজ্য পুলিশ, এবং মনে হয়েছে যে, এলাকায় টাকা ধার দেওয়ার কারবার করতেন তাঁরা”। স্বরাষ্ট্রসচিবের ভাষায়, রাজ্য সরকার “ঘটনার যথাযথ এবং স্বচ্ছ তদন্তের প্রতি দায়বদ্ধ”, এবং তদন্তে কোনওরকম রাজনৈতিক বা বাইরে থেকে কোনওরকম প্রভাব খাটাতে দেওয়া হবে না। তাঁর কথায়, “ইতিমধ্যেই সিআইডির হাতে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে কোনওরকম রাজনৈতিক বা বাইরের কোনও প্রভাব খাটাতে দেওয়া হবে না”।
বিজেপির জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেন, “রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর আমাদের কোনও আস্থা নেই। তারা বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে চায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে খুনকে আত্মহত্যা বলা হয়েছে, ফলে এই রিপোর্টে আমাদের কোনও বিশ্বাস নেই”। তিনি আরও বলেন, “রাজ্য সরকারের উচিত ঘটনাটিরর তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে দেওয়া অথবা হাইকোর্টের বিচারপতির তত্ত্বাবধানে বিচারবিভাগীয় তদন্ত করা”।
(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদনা করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে।)