কেবলমাত্র যাঁরা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ভালো নেতা ও যাঁদের দারুণ সাংগঠনিক ক্ষমতা, তাঁদেরই এ রাজ্যে দলে নেওয়া হবে, এমনই পরিকল্পনা বিজেপির।
হাইলাইটস
- বিজেপির লক্ষ্য আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ২৫০ আসন পাওয়া।
- বাংলায় ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি আসন দখল করেছে বিজেপি।
- তৃণমূল বিজেপির এই সব পরিকল্পনাকে পাত্তা দিতে নারাজ।
কলকাতা: লোকসভা নির্বাচনে (National Election 2019) পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) দুরন্ত সাফল্য পাওয়ার পরে এবার বিজেপি (BJP) শুরু করল রাজ্যের বিধানসভা দখলের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করা। তাদের লক্ষ্য হল আগামী বিধানসভা নির্বাচনে অন্তত ২৫০ আসন পাওয়া। তার জন্য একেবারে নিচু স্তরের সংগঠন জোরালো করার পরিকল্পনা করছে তারা। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া বাহিনী বাংলায় ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি আসন দখল করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের থেকে মাত্র চারটি আসন কম পেয়েছে তারা। তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ২২টি আসন। ২৯৪ আসনের বিধানসভা নির্বাচন হবে ২০২১-এ। সেখানে তৃণমূলকে টেক্কা দিতে বিজেপি জোর দিচ্ছে ক্ষমতায় এলে শিল্পায়নের ফলে রাজ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নাগরিকত্ব বিল বাস্তবায়িত করা এবং রাজ্যে নাগরিক পঞ্জি নির্মাণের সম্ভাবনার কথা প্রচারে তুলে ধরার জন্য।
রাষ্ট্র পরিচালিত সন্ত্রাসবাদ বিশ্বের সবথেকে বড় বিপদ: মালদ্বীপে বললেন মোদী
শাসক দল তৃণমূল অবশ্য বিজেপির এই সব পরিকল্পনাকে খুব একটা পাত্তা দিতে নারাজ। তাদের বিশ্বাস, বিজেপির এরাজ্যে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা ধূলিসাৎ করে ২০২১-এ দুরন্ত প্রত্যাবর্তন করবে তারা। এবারের নির্বাচনে বিজেপি ৪০.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। এবং বর্তমানে ৬টি বিধানসভা আসন তাদের দখলে রয়েছে। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক এবং এরাজ্যের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানান, ‘‘লোকসভায় আমরা লক্ষ্য রেখেছিলাম ২৩টি আসনের। জিতেছি ১৮টিতে। এবার আমাদের লক্ষ্য বিধানসভায় ২৫০ আসন পাওয়া। আমরা আমাদের নির্বাচনী কৌশল ঠিক করে ওই লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য কাজ শুরু করে দেব।''
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ পাওয়ার পরে বাংলার রাজনীতিতে পালা বদলের ইঙ্গিত মিলেছে। রাতারাতি বিজেপির উত্থান হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে ৩৪টি আসনে জয়লাভ করেছিল। তারা নেমে এসেছে ২২-এ। কংগ্রেস ৪ থেকে ২-এ নেমেছে। বামেরা খাতাই খুলতে পারেনি। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিজেপি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, দলের রাজ্য সংগঠন বিধানসভা দখলে তাদের কৌশল তৈরি করছে।
বিজেপির এক বর্ষীয়ান কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, তৃণমূলের বিধায়ক ও বর্ষীয়ান নেতাদের দলে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘কেবলমাত্র যাঁরা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ভালো নেতা ও যাঁদের দারুণ সাংগঠনিক ক্ষমতা, তাঁদেরই বিজেপিতে নেওয়া হবে।''
তৃণমূল নেতা মনিরুল ইসলামকে দলে নেওয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা জানাচ্ছেন, মনিরুলের অন্তর্ভুক্তি থেকে ভুল বার্তা যাচ্ছিল। তিনি স্পষ্ট করে জানান, ‘‘আমরা নিজেদের ভালো বিকল্প হিসেবে দেখাতে চাই। তৃণমূলের অবিকল প্রতিলিপি হিসেবে নয়।'' মনিরুলকে দলে নেওয়ার পরে বিজেপির বাংলা সংগঠন কার্যত দু'ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একদল মনে করছে মনিরুল বিজেপিতে এলে রাজ্যের মানুষের কাছে বিজেপির ভাবমূর্তি খারাপ হবে। দলের অন্দরে প্রতিবাদের ঢেউ ওঠার পরে মনিরুলকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এপ্রসঙ্গে বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘আমরা দলের সংগঠন পুনর্গঠন করতে চাই। বিশেষ করে যে সব জেলা ও এলাকায় আমরা দুর্বল। যে সমস্ত জেলা ও অঞ্চলে আগে নেতাদের আনা হয়েছিল কেবল সেখানে সংগঠন তৈরি করার জন্য, তাদের সরিয়ে ভালো ও দক্ষ লোকদের নিয়ে আসা হবে। কিন্তু দলের পুরনোরা, যাঁরা দক্ষ সংগঠক ও নেতা তাদের নতুন কমিটিতে রাখা হবে।''
সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন তৃণমূলের বড় ভুল ছিল: মুকুল রায়
দলের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা করা হয়েছে, বিধানসভা অঞ্চলগুলিকে এ, বি, সি, ডি অঞ্চলে ভাগ করা হবে। লোকসভা নির্বাচনে কোথায় কেমন ফল করেছে বিজেপি, সেই অনুসারে এই ভাগ করা হবে।
বিজেপির এক সূত্র জানাচ্ছে, যে ১৩০টি আসনে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে সেগুলি ‘এ'। যে ৬৫টি আসনে খুব কম ব্যবধানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তারা সেগুলি ‘বি'। বড় ব্যবধানে দ্বিতীয় হওয়া আসনগুলি ‘সি'। আর যেখানে তারা তৃতীয়, সেগুলি ‘ডি'।
রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক সক্রিয়তা বাড়াবে দল। পরিকল্পনা করা হয়েছে মানুষের কাছে পৌঁছনোরও। বিশেষ করে ‘এ', ‘বি' ও ‘সি' অঞ্চলগুলিকে ফোকাস করা হবে। এক বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা জানাচ্ছেন, ‘‘ওই তিন ক্যাটাগরিতে জয় নিশ্চিত করার ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করব।'' রাজ্য ও লোকসভাভিত্তিক ইস্যুগুলি ভেবে নিয়ে একটা রোডম্যাপ করতে চায় তারা। ওই নেতা বলেন, ‘‘উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, শিল্প নির্বাচনের হাতিয়ার হতে পারে, বিশেষ করে সিঙ্গুরের মতো এলাকাতে। ওখানে টাটা মোটর তাদের কারখানা নির্মাণ সম্পূর্ণ করতে পারেনি তৃণমূলের খারাপ রাজনীতির জন্য।''
সীমান্তবর্তী এলাকা ও জেলাগুলিতে নাগরিকত্ব বিলের মাধ্যমে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব প্রদান ও নাগরিক পঞ্জি তৈরি করে অনুপ্রবেশকারীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার ব্যাপারে প্রচার চালানো হবে। এক বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘ঠিক তেমন ভাবেই, বিভিন্ন জেলায় কৃষি, শিল্প নিয়ে বিভিন্ন ইস্যু রয়েছে। সেগুলিকে চিহ্নিত করে সেই নিয়ে কাজ করতে হবে।''
১৮ সাংসদ, ৬ বিধায়ক ও যে পৌরসভাগুলি দলের নিয়ন্ত্রণে এসেছে, সেগুলিকেই উন্নয়নের মডেল তৈরি করে জনগণের কাছে বিজেপির ভাবমূর্তি মজবুত করা দলের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে।