বিজেপি নেতা চিন্ময়ানন্দের (Chinmayanand) চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের একটি দল গঠন করা হয়েছে
শাহজাহানপুর, উত্তরপ্রদেশ: এক আইনের ছাত্রীর করা ধর্ষণ ও ব্ল্যাকমেলিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত চিন্ময়ানন্দ (Chinmayanand) নাকি বর্তমানে শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করছেন। অস্বস্তি অনুভব করায় তাঁর বাড়িতেই চিকিৎসা শুরু হয়েছে ওই প্রবীণ বিজেপি (BJP) নেতার। আগের দিন, অভিযোগকারী মহিলা আদালতে নিজের অভিযোগের (Chinmayanand Accused of Rape) বিবরণ দিয়ে পাঁচ ঘণ্টার একটি বিবৃতি রেকর্ড করেন। তাঁর সহযোগীদের দ্বারা প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে যে, উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরে নিজের বাড়ি দিব্যা ধামে সারা শরীরে চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি জড়িয়ে ডিভানে শুয়ে আছেন প্রবীণ ওই বিজেপি নেতা। চিন্ময়ানন্দের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের একটি দল গঠন করা হয়েছে।
ওই চিকিৎসক দল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন চিন্ময়ানন্দ ডায়রিয়ায় ভুগছেন। "তিনি আবার ডায়াবেটিস রোগী, তাই এর ফলে প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েছেন তিনি। আমরা তাঁকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়েছি এবং তাঁকে পুরোপুরি বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি" চিকিৎসক দলের নেতৃত্বে থাকা চিকিৎসক এমএল আগরওয়াল এ কথা বলেছেন।
আদালতে হাজির করা হল চিন্মায়ানন্দের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা ছাত্রীকে
গতকালই (সোমবার) চিন্মায়ানন্দ পরিচালিত একটি আইন কলেজের ২৩ বছর বয়সী ছাত্রী যিনি ওই বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ব্ল্যাকমেলিংয়ের অভিযোগ তুলেছেন, তিনি ৫০ জনেরও বেশি মহিলা পুলিশের নিরাপত্তা সহযোগে আদালতে গিয়ে নিজের বক্তব্য রেকর্ড করে আসেন। এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অসুস্থ বোধ করেন বিজেপি নেতা চিন্ময়ানন্দ।
এই বিবৃতি দেওয়ার পরে, বিজেপি নেতা চিন্মায়ানন্দের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ সহ একগুচ্ছ অভিযোগ এনে চার্জশিট দেওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তরফে। যদিও এখনও পর্যন্ত তাঁরা সেটা করেনি। ওই অভিযোগকারী মহিলা দিল্লি পুলিশের কাছে গিয়ে ঘটনার অভিযোগ দায়ের করেন। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের সামনেও ঘটনার সম্পর্কে একটি বিবৃতি দেন আইনের ছাত্রীটি।
চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তিনি ওই আইনের ছাত্রীকে তাঁর ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে, তাঁর স্নান করার একটি ক্লিপ দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে মেয়েটিকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন। নিগৃহীতা মহিলার অভিযোগ, তাঁকে প্রায়শই ওই ঘর থেকে চিন্ময়ানন্দের সহায়তাকারীরা বন্দুক দেখিয়ে তাঁকে চিন্ময়ানন্দের ঘরে নিয়ে যেতেন। এমনকি ওই বিজেপি নেতাকে ম্যাসেজ করাতেও বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
ওই মহিলা জানান, নিরুপার হয়ে তিনি ওই বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেইমতো নিজের চশমায় একটি ক্যামেরা লাগিয়ে গোটা বিষয়টি রেকর্ড করেন তিনি। এরপর বিজেপি নেতা চিন্মায়ানন্দের নাম উল্লেখ না করেই গত ২৪ অগাস্ট ফেসবুক একটি পোস্ট দিয়ে ওই মহিলা নিখোঁজ হয়ে যান। তারপরেই ঘটনাটি ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসে। যুবতীর পরিবার বিজেপির (BJP) ওই প্রবীণ নেতার বিরুদ্ধে তাঁকে অপহরণ করার অভিযোগ তোলে। নিরুদ্দেশ হওয়ার ছয় দিন পর উত্তরপ্রদেশ পুলিশ তাঁকে খুঁজে বের করে। এরপর ওই মহিলা সুপ্রিম কোর্টে এক দ্বাররুদ্ধ শুনানিতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে করা ওই পোস্ট সম্পর্কে আদালতকে বিস্তারিত জানান। এরপরেই সুপ্রিম কোর্ট উত্তরপ্রদেশ পুলিশের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে তাঁর অভিযোগটি তদন্ত করে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়।
ধর্ষণে অভিযুক্ত বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে প্রমাণ পেন ড্রাইভে, দাবি তরুণীর
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি নেতা চিন্মায়ানন্দকে গত সপ্তাহে সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল সিটের পক্ষ থেকে। তবে এখনও পর্যন্ত ওই বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে ভয় দেখানো ও ব্ল্যাকমেলিংয়ের অভিযোগ দায়ের হলেও ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
তবে পুলিশ সূত্র মারফৎ জানা গেছে, চিন্মায়ানন্দের বিরুদ্ধে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করাই এই তদন্তের পরবর্তী সম্ভাব্য পদক্ষেপ, তবে ওই প্রবীণ রাজনীতিবিদকে এখনই গ্রেফতার করা নাও হতে পারে।