প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত সংসদীয় পরামর্শ কমিটিতে রয়েছেন ফারুক আবদুল্লাহ এবং শরদ পাওয়ার
নয়া দিল্লি: ২০০৮ সালে মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় (Malegaon Blast Case) অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুরকে (Pragya Thakur) প্রতিরক্ষা বিষয়ক ২১ সদস্যের এক সংসদীয় পরামর্শদানকারী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হল, ওই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। ২০০৮ সালে মালাগাঁও বিস্ফোরণ মামলার অন্যতম অভিযুক্ত প্রজ্ঞা ঠাকুর বর্তমানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি কর্মকাণ্ড প্রতিরোধক আইন, ভারতীয় দণ্ডবিধি, অস্ত্র আইন এবং বিস্ফোরক পদার্থ আইনের বিভিন্ন ধারায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে । এমন একজনকে প্রতিরক্ষা কমিটির মধ্যে রাখায় নিন্দায় সরব হয়েছে কংগ্রেস। বিরোধী দলটি প্রজ্ঞা ঠাকুরের এই নিয়োগকে "আমাদের দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর অপমান" বলে অভিহিত করেছে।
"বিজেপি সরকারের প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য বিজেপি সরকার মনোনীত করেছে সন্ত্রাসবাদি ও গডসের থেকে অনুপ্রাণিত ধর্মান্ধ প্রজ্ঞা ঠাকুরকে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আসলে আমাদের দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী, আমাদের দেশের সম্মানিত সাংসদ এবং প্রত্যেক ভারতীয়কে অপমান করা হয়েছে", বৃহস্পতিবার সকালে একটি টুইট বার্তায় জানায় কংগ্রেস।
কংগ্রেস সচিব প্রণব ঝাঁ সংবাদসংস্থা আইএএনএসকে বলেছেন যে তাঁর নিয়োগ "গণতন্ত্রের পক্ষে ভাল পদক্ষেপ নয়" এবং বিজেপিকে এই মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, "যাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলছে, এই জাতীয় ব্যক্তিকে নিয়ে আসা গণতন্ত্রের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়। সংবিধানের দ্বারাই তো সবকিছু পরিচালিত হয় না, নৈতিক কারণেও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়"।
প্রতিরক্ষা বিষয়ক ২১ সদস্যের এক সংসদীয় পরামর্শদানকারী কমিটির কেবল পরামর্শ দানেরই ক্ষমতা রয়েছে তবে এই কমিটির করা সুপারিশগুলি গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক নয়। এই কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরে আটক ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লা এবং এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের মতো ব্যক্তিত্বও।
গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা দিগ্বিজয় সিংকে ৩.৬ লক্ষ ভোটে হারিয়ে মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন প্রজ্ঞা ঠাকুর।
পরামর্শমূলক কমিটি গঠনের বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত নেয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রক
নির্বাচিত হওয়ার পরেই একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে আসেন প্রজ্ঞা ঠাকুর। "আমরা আপনাদের ড্রেন পরিষ্কার করার জন্য নির্বাচিত হইনি, ঠিক আছে? আপনাদের দয়া করে এটাও বুঝতে হবে যে আমরা আপনাদের শৌচাগার পরিষ্কার করার জন্যেও নির্বাচিত হইনি। আমি যে কাজটির জন্য নির্বাচিত হয়েছি, আমি সততার সঙ্গে সেটি করব এটুকু বলতে পারি", ভোপালের সংসদীয় আসনের অংশ সেহোরে গিয়ে ওই বিতর্কিত মন্তব্য করেন বিজেপির ওই সাংসদ।
মাত্র কয়েক মাস আগে, লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে প্রচার চালানোর সময়, মহাত্মা গান্ধির হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে "দেশপ্রেমিক" হিসাবে বর্ণনা করার পরে বিরোধী দলের ক্ষোভের মুখে পড়েন প্রজ্ঞা ঠাকুর।
এই ঘটনায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজনীতির মঞ্চে বিরোধীদের ফুঁসে ওঠা ক্ষোভ সামাল দিতে হাল ধরতে হয় অমিত শাহকে। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন প্রজ্ঞা ঠাকুর। কিন্তু তারপরেও প্রধানমন্ত্রী মোদিও বলেন, "গান্ধিজি সম্পর্কে এই ধরণের বক্তব্য নিন্দনীয় এবং সভ্য সমাজে এই ধরণের মন্তব্য করার জন্যে কাউকেই অনুমতি দেওয়া যায় না। উনি হয়তো ক্ষমা চেয়েছেন, তবে আমি ওনাকে কখনও ক্ষমা করব না"।