This Article is From Jul 02, 2018

দিল্লীর মৃত্যুকান্ডে চিঠি থেকে উঠে এলো ভয়ঙ্কর তথ্য

একজন পুলিশ অফিসার জানান চিঠিতে লেখা ছিল একজন মানুষ কীভাবে মোক্ষলাভ করতে পারে এবং মানব দেহ ক্ষণিকের কিন্তু আত্মা চিরকাল বিরাজমান

পুলিশ ওই পরিবারের সঙ্গে কোনও তান্ত্রিক বা মহাপুরুষের যোগাযোগ ছিল কি না তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে। (এএফপি)

নিউ দিল্লী:

উত্তর দিল্লীর বুরারিতে একই পরিবারের 11 জন সদস্যের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নতুন দিশা দেখাল হাতে লেখা একগুচ্ছ চিঠি। ওই চিঠিতে বিভিন্ন ধরণের ধর্মীয় মনোভাবের উল্লেখ আছে- যার থেকে এই ঘটনার কিনারা করা যাবে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। পুলিশ প্রথমে ভেবেছিল এটা গণআত্মহত্যা বা গণহত্যার ঘটনা, যা পরিবারেরই কোনও সদস্য ঘটানোর পর নিজে আত্মহত্যা করেছে।  

ওই পরিবারের 11 জন সদস্যের মধ্যে দশজন- দুইজন পুরুষ, ছয়জন মহিলা এবং দুইজন অপ্রাপ্তবয়স্ককে বাড়ির উঠোনে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মৃতদেহের মুখে চোখ ও মুখ বরাবর ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল। কিছু কিছু দেহের আবার হাত-পাও বাঁধা ছিল। অন্য একজন মহিলা, 77 বছরের নারায়ণ দেবীকে বাড়ির অন্য একটা ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। তাঁকে দেখে প্রাথমিকভাবে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বলে মনে করেছিল পুলিশ।  

কিন্তু চিঠিতে ভয়ঙ্কর তথ্য পাওয়া গেছে। “মানুষের দেহ ক্ষণিকের এবং একজন মানুষ চোখ ও মুখ ঢেকে ভয় দূর করতে পারে”, একটা চিঠিতে লেখা ছিল বলে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে।

burari deaths

একজন পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, একজন কীভাবে মোক্ষলাভ করতে পারে তার উপায় চিঠিতে লেখা ছিল।

হাতবাঁধা ও ঝুলন্ত অবস্থায় একই পরিবারের এগারো জনের দেহ উদ্ধার দিল্লিতে

একজন পুলিশ অফিসার জানান চিঠিতে লেখা ছিল একজন মানুষ কীভাবে মোক্ষলাভ করতে পারে এবং মানব দেহ ক্ষণিকের কিন্তু আত্মা চিরকাল বিরাজমান।

“চিঠির বয়ান অনুযায়ী, 11 জনই যদি এই পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে, সব সমস্যার সমাধান হবে এবং তারা সকলে মোক্ষলাভ করতে পারবে। কয়েকটা চিঠিতে কবে লেখা হয়েছে সে তারিখ পাওয়া গেলেও সব চিঠিতে তারিখ উল্লেখ করা ছিল না। প্রতিটা চিঠিতেই শেষ সীমায় পৌঁছে শান্তি লাভের কথা লেখা ছিল”, পিটিআই রিপোর্ট অনুসারে ঘটনার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন।

পুলিশ ওই পরিবারের সঙ্গে কোনও তান্ত্রিক বা মহাপুরুষের যোগাযোগ ছিল কি না তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে।

“চিঠিতে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে হাত পা মুখ বাঁধতে হবে এবং বেশ কিছু দেহে একইভাবে বাঁধা ছিল। চিঠিগুলো সাংঘাতিক এবং আমরা ওগুলো পড়ে দেখছি”, পিটিআই সূত্রে জানা গেছে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপরাধদমন শাখা) অলোক কুমার জানিয়েছেন।

burari deaths

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ওই পরিবারের সদস্যরা ধার্মিক ছিলেন কিন্তু তারা সন্দেহজনক কিছু আগে লক্ষ্য করেননি।

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ খুনের মামলা দায়ের করেছে। যদিও পিটিআই সূত্রে জানা গেছে তদন্তে এটা আত্মহত্যার ঘটনা বলেই মনে করা হচ্ছে। “হয়তো বয়স্ক মহিলা টুলে ওঠার মতো ক্ষমতায় ছিলেন না। কিন্তু আমরা ভাবছি শিশুদের কি খুন করা হয়েছে নাকি তাদেরকে এই পরিণতির জন্য বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করানো হয়েছিল”, অন্য একজন অফিসার জানান।

কেতান নাগপাল, ওই মৃত সদস্যদের মধ্যে একজনের দিদিমা, দাবী করেন ওই সদস্যদের খুন করা হয়েছে। “তাদের কোনও আর্থিক সমস্যাও ছিল না, কোনও লোনও ছিল না। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। তারা কেন আত্মহত্যা করবে?”, বলেন নাগপাল।

নাগপাল আরও বলেন, ওরা যদি আত্মহত্যাই করে তবে নিজেদের মুখ কেন ঢাকবে?  

প্রতিবেশীরা জানিয়েছে ওই পরিবারের সদস্যরা ধার্মিক ছিল কিন্তু কখনওই সন্দেহজনক কিছু দেখা যায়নি। ওই পরিবার তাদের বাড়ির বাইরে বোর্ডে প্রতিদিন ধর্ম সংক্রান্ত শ্লোক লিখে রাখত। “তারা প্রতিদিন গায়েত্রী মন্ত্র জপ করত এবং প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যে ঈশ্বরের আরাধনা করত। আমরা কখনও কোনও তান্ত্রিক বা মহাপুরুষকে ওদের বাড়িতে আসতে দেখিনি। ওরা সকলকে সাহায্য করত এবং বিনয়ী ছিল”, একজন প্রতিবেশি পিটিআইকে জানায়।  

পুলিশ এখন ময়না তদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে, যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাবে ওই পরিবারের একজন সদস্য বাকিদের খুন করে আত্মহত্যা করেছে নাকি সকলে মিলে আত্মহত্যা করেছে।

burari deaths

পুলিশ এখন ময়না তদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষা করছে।

77 বছরের নারায়ণ দেবীকে মেঝেতে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। বাকী মৃত সদস্যদের মধ্যে তার মেয়ে প্রতিভা (57), তার দুই ছেলে ভবনেশ (50) এবং ললিত ভাটিয়া (45), ভবনেশের স্ত্রী সবিতা (48) এবং তাদের তিন সন্তান- মীনু (23), নিধি (25) এবং ধ্রুব (15) কে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বাকী ললিত ভাটিয়ার স্ত্রী টিনা (42), তাদের ছেলে শিবমকেও (15) মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

প্রতিভার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা (33), যার গত মাসে বাগদান সম্পন্ন হয়েছে এবং এই বছরের শেষে বিয়ে হওয়ার কথা, তাকেও ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

 

.