এদিকে দীর্ঘ একসপ্তাহ অবরুদ্ধ ছিল অসম, মেঘালয় ও ত্রিপুরার মতো রাজ্যগুলো
গুয়াহাটি, অসম: শান্তি চাই, পরিযায়ী নয়। এই দাবিতে শনিবার অসমজুড়ে বিক্ষোভ দেখালেন সে রাজ্যের কয়েক হাজার মহিলা। অসমিয়া পরিধানে এদিন প্রতিবাদী মহিলারা স্লোগান দিতে থাকেন। স্লোগানের মধ্যে থেকে উঠে আসে তাঁদের পূর্বসূরিরা মুঘলদের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে থেকে এক প্রতিবাদী রুবি দত্ত বরুয়ার দাবি; "আমরা মুলা ঘাভারু; কনকলতা এবং বীর লচিত বরফুকনের মতো যোদ্ধাদের উত্তরসূরি। অসমের সংগ্রাম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইতিহাস আছে। তাই আমরা ফের একবার আমাদের সঙ্গে অন্যায় হতে দিতে পারবো না। এ রাজ্যে সিএএ আইন লাগু করতে দেবো না। এটাই অসমের মহিলাদের তরফে বলা না।' এদিন গুয়াহাটির লতাশীল মাঠে সবচেয়ে বড় জমায়েত হয়েছে।
সিএএ বিভ্রান্তি দূর করতে জনসংযোগে জোর বিজেপির
একই জমায়েত দেখে গেছে জোরহাট, গোলঘাট এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা এলাকায়। সেখানেও মহিলারা সে রাজ্যের মেখলা চাদর গায়ে জড়িয়ে এবং মাথায় অসমিয়া গামছার ফেট্টি বেঁধে প্রতিবাদ দেখিয়েছেন। প্রতিবাদী এক মহিলা এনডিটিভিকে বলেছেন; "আমরা বহুদিন ধরেই এই আইনের বিরোধিতা করছি। কিন্তু সরকার আমাদের কথা শুনছেই না। এই আইন আমাদের রাজ্যের ভাষা, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির পরিপন্থী।"
সিএএ বিরোধী মিছিলে এবার পথে নামছেন রাহুল
একই ভাবে অপর এক মহিলার বক্তব্য ছিল; যতক্ষণ না এই আইন বিলোপ করা হচ্ছে আমরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাবো। আমরা শান্তি চাই, বাংলাদেশী পরিযায়ীদের চাই না। শান্তি তখনই ফিরবে যখন সরকার আমাদের মা-বোনেদের কথা শুনবে। এই আইনের বিলোপ চাই। এদিনের প্রতিবাদে অংশ নেওয়া বৃদ্ধা মামণি কলিতা বলেন, "৮০ সালের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ আমি দেখেছি। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর ও অপ্রত্যাশিত।" সে বার ছ'বছর ধরে প্রতিবাদে সরব হয়েছিল অসম। এবার গত একবছর ধরে একই ইস্যুতে প্রতিবাদে পথে নামছে পূর্বের এই রাজ্য। যদিও সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল আশ্বাস দিয়েছেন, অসমের সংস্কৃতি, ভাষা ও জমির অধিকার অক্ষুন্ন রেখেই সিএএ লাগু হবে।
শুধু অসম বা উত্তর-পূর্ব না, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, ব্যাঙ্গালুরু, ম্যাঙ্গালুরু; মুম্বই ও হায়দরাবাদে এর প্রতিবাদে পথে নেমেছেন নাগরিকরা। সিএএ মূলত অমুসলিম সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেবে। মুসলিম অধ্যুষিত পড়শি দেশগুলো থেকে ধর্মের ভিত্তিতে বাস্তুহারা উদ্বাস্তুদের ঘর দিতে এই উদ্যোগ বলেই খবর। দাবি, দেশের নাগরিকদের এই প্রথম নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। এই আইন সে সব সংখ্যালঘুদের সাহায্য যাঁরা ধর্মীয় কারণে মুসলিম অধ্যুষিত পড়শি পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ২০১৫-র আগে শরণার্থী হয়ে এদেশে এসেছে।
এদিকে দীর্ঘ একসপ্তাহ অবরুদ্ধ ছিল অসম, মেঘালয় ও ত্রিপুরার মতো রাজ্যগুলো। পিছিয়ে ছিল না পশ্চিমবঙ্গও। ট্রেনে হামলা, পথ অবরোধে রুদ্ধ হয়েছিল সে রাজ্য। এখনও পর্যন্ত গোটা দেশ থেকে হিংসার কারণে প্রায় ২০ জনের বেশি মৃত্যুর খবর মিলেছে।