সিবিআইয়ের সল্ট লেক অফিসে হাজিরা দিতে যাওয়ার পরেই গ্রেফতার করা হতে পারে তাঁকে
কলকাতা: কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে (Rajeev Kumar) আজই সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) দফতরে (CBI) প্রশ্নোত্তরের জন্য আসতে বলা হয়েছে। সারদা (Sarada) চিট ফান্ড কাণ্ডের সঙ্গে তাঁর সংযোগ নিয়েই তাঁকে প্রশ্ন করা হবে। রাজীব কুমারের (Rajeev Kumar) বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি শীর্ষ পদে থাকাকালীন সারদা কেলেঙ্কারির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ নষ্ট করেছেন। NDTV-কে সূত্র জানিয়েছে,১৯৮৯-ব্যাচের এই আইপিএস আধিকারিককে কালই গ্রেফতার করা হতে পারে। যখন তিনি সিবিআইয়ের কলকাতা অফিসে হাজিরা দিতে সল্ট লেকে যাবেন। এর আগে আজই সিবিআই জানিয়েছিল, রাজীব কুমারকে দেশ ছেড়ে যেতে দেওয়া হবে না। বিমানবন্দর ও বন্দরে লুক আউট নোটিশ জারি করা হয়। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট সারদা কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতারি এড়াতে আইনি সুরক্ষার মেয়াদ বাড়ানোর রাজীব কুমারের আবেদন খারিজ করে দেয়।
বিশেষ বেঞ্চ তৈরির জন্য রাজীব কুমারের আর্জি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে
প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারকে সাত দিনের গ্রেফতারি থেকে সুরক্ষা দেওয়ার মেয়াদ শেষ হয় ওইদিনই অর্থাৎ ২৪ মে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সিবিআইয়ের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক NDTV-কে বলেন, ‘‘যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের সাত দিনের মেয়াদ শুক্রবার শেষ হয়েছে এবং কোনও আদালতের পক্ষ থেকেই আগাম জামিন দেওয়া হয়নি কুমারকে, তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে হেফাজতে নিতে সিবিআইয়ের কোনও বাধা নেই। রাজীব কুমারকে শিগগিরি সমন পাঠানো হবে হাজিরা দেওয়ার জন্য।''
কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে আটকাতে সিবিআইয়ের নির্দেশ বিমানবন্দরকে
সিবিআইকে সারদা কাণ্ডে তদন্তের ভার দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সম্প্রতি সিবিআই সুপ্রিম কোর্টের কাছে রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করে। সিবিআই জানায়, তাদের কাছে প্রাথমিক প্রমাণ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তাদের অভিযোগ রাজীব প্রমাণ লোপাট ও বিকৃতির চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি প্রভাবশালীদের আড়াল করার চেষ্টাও করেছেন। কেসটির বিষয়ে আরও বিশদে জানতে রাজীবকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা জানায় সিবিআই।
রাজীব কুমারের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, সিবিআই রাজীবকে হেফাজতে চায় তাঁকে ‘কেবল অপমান' করার জন্য এবং সিবিআইকে আইনের অপব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি, সিবিআই আধিকারিকদের একটি দল রাজীব কুমারের বাড়ি ঢুকতে গেলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। তাঁরা রাজীব কুমারকে ওই চিট ফান্ড কাণ্ডের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নিয়ে প্রশ্ন করতে গিয়েছিলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) শহরের কেন্দ্রে ধরনায় বসেন। তিনি একে ‘সাংবিধানিক নিয়মের উপরে আক্রমণ' আখ্যা দিয়েছিলেন।
এক সপ্তাহ পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই শিলংয়ে রাজীবকে জেরা করে পাঁচদিন ধরে। শীর্ষ আদালত এই নির্দেশও দিয়েছিল, রাজীবের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না এবং তাঁকে গ্রেফতারও করা যাবে না।
এরপর রাজীব কুমারকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অধীনস্থ সিআইডির তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসা হয়। গত ১৬ মে কলকাতায় একটি মিছিলে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ-র উপরে হওয়া একটি হামলার ঘটনায় নির্বাচন কমিশন রাজীবকে নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে ডিউটি করতে বলা হয় তাঁকে। কিন্তু তিনি ওইদিনই ছুটিতে চলে যান। আজ, নির্বাচনী সংস্থার মডেল আচরণ বিধির মেয়াদ শেষ হতেই তিনি বাংলায় তাঁর পোস্টিং ফিরে পান।
সারদা কেলেঙ্কারি এক বিপুল আর্থিক তছরুপের মামলা। চকচকে প্রচার পুস্তিকা ও অবিশ্বাস্য রিটার্নের লোভ দেখিয়ে বহু মানুষকে ঠকাতে তাঁদের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। এক সরকারি হিসেব বলছে, প্রায় ১,২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় এই কেলেঙ্কারিতে। যদিও অন্য কোনও কোনও হিসেব বলছে অঙ্কটা ৪,০০০ কোটির কাছাকাছি। ২০১৩ সালের এপ্রিলে সংস্থাটি বন্ধ হয়ে যায়।