সোমবারই চাঁদের উদ্দেশ্য়ে রওনা দেবে চন্দ্রায়ন 2
শ্রীহরিকোটা:
আন্তর্জাতিক মহাকাশ দৌড়ে সামিল হওয়ার জন্যে প্রস্তুত ভারত। সোমবার বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসাবে তুলনামূলক কম ব্যয়ের (Low-cost mission) একটি মহাকাশ অভিযান (India Moon Mission) শুরু করতে চলেছে দেশ যা চাঁদের মাটিতে নেমে বিভিন্ন বিভিন্ন বিষয় খুঁটিয়ে দেখবে। মানুষের প্রথম চন্দ্রাভিযানের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে তার মাত্র পাঁচ দিন আগে এক দশক ধরে নির্মাণ করা ওই চন্দ্রায়ন -2 বা চাঁদ রথ 2-কে অন্ধ্রপ্রদেশের একটি দ্বীপ থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে।এই অভিযানের মাধ্যমে এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে যে অ্যাপোলো 11 অভিযানের সময় নীল আর্মস্ট্রংয়ের চাঁদের মাটিতে পা রাখা থেকে এই মহাকাশ অভিযান কতদূর এগিয়েছে। ভারত প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে চন্দ্রায়ন 2 (Chandrayaan-2) নির্মাণে যা সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে রওনা হয়ে ৩৮৪,৪০০ কিলোমিটার (প্রায় ২৪০,০০০ মাইল)পথ পেরিয়ে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছবে।
এখানে দেওয়া হল এই মহাকাশযাত্রার ১০ টি তথ্য:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে (বর্তমান সময়ের ১০০ বিলিয়ন ডলারের সমতুল্য)১৫ টি অ্যাপোলো অভিযান চালায়, যার মধ্যে ষষ্ঠটি আর্মস্ট্রং এবং অন্যান্য মহাকাশচারীদের চাঁদের মাটিতে পৌঁছে দেয়। চীন জানুয়ারিতে ৮.৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করে তাঁদের চন্দ্রাভিযানের পিছনে এবং ১৯৬০ এবং ৭০ দশকে ২০ বিলিয়ন খরচ করে চন্দ্রাভিযান চালায়।
প্রায় সমগ্র চন্দ্রায়ন -২ এর অরবিটার, ল্যান্ডার এবং রোভার ভারতেই নকশা তৈরি করে নির্মাণ করা হয়েছে, এবং এটি তার সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট লঞ্চার, জিএসএলভি এমকে তৃতীয় ব্যবহার করবে, যা ২.৪ টন অরবিটার বহন করবে, যার প্রায় এক বছরের অভিযান আয়ু থাকবে।
মহাকাশযানটি ১.৪ টন ল্যান্ডার বিক্রম বহনে সক্ষম - যা আবার ২৭ কিলোগ্রাম রোভার প্রজ্ঞানকে বহন করবে-যা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছে দেবে।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা(ইসরো)-এর প্রধান কে সিভান জানিয়েছেন, "আমরা এর আগে কখনও এমন জটিল অভিযান করি নি, এই অভিযানের শেষ ১৫ মিনিট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ"।
সৌর চালিত রোভারটি ৫০০ মিটার পর্যন্ত সফর করতে পারে এবং এটি পৃথিবীর ১৪ দিনের সমতুল্য এক চন্দ্র দিবসের জন্য কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। শ্রী সিভান বলেন, এই অভিযানে চাঁদে জলের সন্ধান চালাবে এবং "প্রাথমিক সৌরজগতের জীবাশ্মের রেকর্ড" সন্ধান করবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২২ সালে মহাকাশে মানব অভিযানের শপথ নিয়েছেন। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই ভূ-কৌশলগত অংশগুলি ছোট হলেও কম খরচে ভারতের এই মডেল বাণিজ্যিক উপগ্রহটি সফল হতে পারে।
ইসরোর প্রাক্তন প্রধান কে কস্তুরিরঙ্গন বলেন, "এই প্রসঙ্গে আমাদের নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করা উচিত যে, ভারত এ ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী মহাকাশযানের উদ্যোগ নিতে সমর্থ হবে কিনা, তবে ভারত এটিকে উপেক্ষা করতে পারবে না বলেই মনে হয়"। তিনি আরও বলেন, মহাকাশে নেতৃত্ব করার লক্ষ্যে ভারতকে অগ্রসর হওয়া উচিত।
মঙ্গলবার নাসার রোভার মিশনের বিজ্ঞানী অমিতাভ ঘোষ বলেন, চন্দ্রায়ণ -2 এর সুবিধা তার খরচের তুলনায় অনেক বেশি। "চন্দ্রায়ণ -2 এর মতো এই জটিল মহাকাশযানের মাধ্যমে চালানো অভিযান একটি বার্তা দেয় যে ভারত কঠিন প্রযুক্তি উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালাতে সক্ষম।"
প্রাক্তন নাসা গবেষক যিনি বর্তমানে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সেই স্কট হুবার্ড আমেরিকান মাভেন মিশনের সঙ্গে ভারতীয় মঙ্গল অভিযানের ব্যয়বহুলতার মূল্যায়ন পরীক্ষা করে দেখেছেন।
২০১৩ সালে প্রায় একই সময়ে শুরু হওয়া ওই অভিযানে, একবছরের প্রস্তুতিতে হওয়া ভারতের মঙ্গলায়নের থেকে মার্কিন মহাকাশযান মাভেন তৈরিতে ১০ গুণ বেশি খরচ হয় ।"মার্কিন অভিযানটির জন্যে দুই বছর ধরে প্রস্তুতির সময় লেগেছিল । এটা দুটি অভিযানের মধ্যে ব্যয়ে একটি বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে," বলেন হুবার্ড । তবে মঙ্গলায়নের মাত্র ১৫ কেজির ওজন বইতে সক্ষম ছিল, আর মাভেন আরো অত্যাধুনিক যন্ত্র সহ ৬৫ কেজি বহন করতে সক্ষম।
Post a comment