এ এক অদ্ভুত দেশ। এখানে এখনও যুক্তির আগে আগে চলে অন্ধধারণা, অধিকারের আগে চলে বদ্ধমূল বিশ্বাস। আর এই ভ্রান্ত বিশ্বাসেই মিলে গিয়েছে কেরলা থেকে বাংলা। কেরলার শবরীমালা মন্দিরের ঋতুমতী নারীদের প্রবেশাধিকার নিয়ে লড়াইয়ের মাঝেই খবরে উঠে এসেছে কলকাতা শহরের 34 বছর বয়সী একটি কালীপুজো, যেখানে মহিলাদের কোনও প্রবেশাধিকার নেই।
"আমাদের 34 বছর বয়সী পঞ্চমুণ্ড কালীপুজো তন্ত্র (প্রাচীন এক হিন্দুধর্মীয় সাধনা রীতি) অনুসরণ করে। তারাপীঠের তান্ত্রিক পুরোহিতরা প্রতি বছর এই পুজো পরিচালনা করেন। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রশ্ন করেছিলাম, কিন্তু তারা বলেছিলেন যে, কোনও মহিলাকে এখানে কিছু স্পর্শ করার অনুমতিও দেওয়া হয় না," বলেন চেতলা প্রদীপ সঙ্ঘের কার্যনির্বাহী বিভাগের সদস্য গঙ্গারাম সাও।
গঙ্গারাম জানান যে, প্রথম যখন পুজো হয় সেই সময় থেকেই মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। কমিটির অন্য সদস্য মনোজ ঘোষ বলেন, "সংগঠক হিসাবে আমরা নারীদের পুজোয় অন্তর্ভুক্ত করতেই চাই, কিন্তু এটি আমাদের নিজেদের পুজো নয়, তান্ত্রিকরা যা বলবেন আমাদের তা অনুসরণ করতে হবে।"
বীরভূম জেলার দ্বারকা নদীর তীরে অবস্থিত তারাপীঠ মন্দিরের এক পুরোহিত যদিও এ বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তারাপীঠ তন্ত্র সাধনার জন্যই বিখ্যাত। 81 বছরের এই পুরোহিত মূলমন্ত্র রায় বলেন, "আমি এখানে বয়স্ক পুরোহিতদের মধ্যে একজন এবং আমি জানি যে এমন কোন নিয়ম নেই যা মহিলাদের প্রবেশকে বাধা দেয়। আমাদের মন্দির সকলের জন্য উন্মুক্ত এবং আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি সেই পুরোহিতদের কথা ভেবে যারা এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে কথা বলছেন!"
300,000 টাকা বাজেটের এই পুজোয় প্রতিবারই বিশাল ভিড় হয় এবং এই বছর, সংগঠকরা পনেরো ফুট লম্বা প্রতিমাটি 4 নভেম্বর নিয়ে আসছেন মণ্ডপে। 9 নভেম্বর বিসর্জন হবে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে কোনও পরিবর্তন আনতে তাঁরা নিরুপায়। গঙ্গারাম বলেন, “ যে দেবী নিজেই একজন নারী তাঁর পুজোয় এই নিষেধাজ্ঞা সত্যিই বিস্ময়কর। কিন্তু এটি পরিবর্তনও করা যাচ্ছে না।"
পুরাণ বিশেষজ্ঞ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি বলেন, "এটি আসলে একটি পিতৃতন্ত্রের প্রবর্তিত শর্ত। বেশিরভাগ শক্তি পুজোই তন্ত্র রীতি অনুসরণ করে সম্পন্ন হয় এবং এই ধরণের নিষেধাজ্ঞা কোন জায়গায় প্রযোজ্য নয়, এটা অযৌক্তিক। যদি তান্ত্রিকদের এতই সমস্যা, তাহলে তাঁরা কেন একজন মহিলা দেবী পুজো করছেন?" আরও মজার ব্যাপার, এই এলাকার নারীরাও পুরনো ঐতিহ্য ভেঙে দিতে ইচ্ছুকই নন।
"আমার শৈশবকাল থেকে আমি এই পুজো দেখেছি। নারীরা মূর্তি আনতে যেতে পারে, বিসর্জনে যোগ দিতে পারে। কিন্তু একবার পুজো শুরু হওয়ার পর আমরা মণ্ডপের ভিতরে যেতে পারি না। এটাই নিয়ম ছিল এবং আমরা ভক্তিভরে এটি অনুসরণ করেছি," বলেন ওই এলাকার বাসিন্দা মিঠু মন্ত্রী।
(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদিত করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে.)