কলকাতা: ১২৬ বছর। এতটা সময়ে জাতি বদলে যায়, রাষ্ট্রও। ক্ষমতা হস্তান্তর হয়, মানসিকতাও। সহনশীলতা ও সাহচর্যের কথা বলতে বলতে একদিন সেই মানুষই বিধর্মীর নাম দিয়ে পুড়িয়ে মারে মানুষকে, পুড়িয়ে মারার আনন্দ বন্দীও করে রাখে নিজস্ব ক্যামেরায়। ইতিহাস কেবল এর নিস্তব্ধ সাক্ষ্মী। ১৮৯৩, ১১ সেপ্টেম্বর। শিকাগোর ধর্ম মহাসম্মেলনে দাঁড়িয়ে স্বামী বিবেকানন্দ বললেন, “আমি গর্বিত! কারণ আমি এমন এক ধর্মের মানুষ যা আমাদের বিশ্বকে সহনশীলতা আর গ্রহণশীলতা দুই'ই শিখিয়েছে। আমরা বিশ্ব শান্তিতেই বিশ্বাস করিনা, আমরা সকল ধর্মকেই সত্য বলে গ্রহণ করি।” (I am proud to belong to a religion which has taught the world both tolerance and universal acceptance. We believe not only in universal toleration, but we accept all religions as true.)
২০১৫, ২৮ সেপ্টেম্বর। বিবেকানন্দের সহনশীলতা আর গ্রহণশীলতার উত্তর দিয়েছিল ভারতবর্ষ। উত্তরপ্রদেশের দাদরি গ্রামে গরুর মাংস খাওয়ার ‘অপরাধে' মহম্মদ আকলাখকে পিটিয়ে হত্যা করে একদল মানুষ। ২০১৭, ৭ ডিসেম্বর, মুসলিম হয়ে হিন্দু মেয়ের সঙ্গে প্রেমের ‘অপরাধে' পশ্চিমবঙ্গের মহম্মদ আফরাজুলকে পুড়িয়ে সেই পাশবিক হত্যাকাণ্ড নিজের ১১ বছরের শিশু ও ১৪ বছরের ভাইপোকে দিয়ে ভিডিও করে ‘লাভ জিহাদ' ঘোষণা করে ‘সকল ধর্মকে সত্য' বলে গ্রহণ করে দেখায় রাজস্থানের শম্ভু লাল।
সময়টা ১২৬ বছর, শিকাগোর সম্মেলন থেকে ধর্ম নেমে এসেছে পাঁকে। যে হিন্দুধর্মে গর্ব খুঁজে পেয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ, যে ধর্ম দিয়ে মন জয় করেছিলেন আমারিকাবাসী ভাই ও বোনেদের- সেই ধর্মই এখন ব্যুমেরাং হয়ে ভারতীয় সংস্কৃতি ও রাজনীতির মূল নিয়ন্ত্রক হয়ে দেখা দিয়েছে। শিকাগোর ওই ধর্ম সম্মেলনে আজকের দিনেই দাঁড়িয়ে বিবেকানন্দ আরও বলেছিলেন, “সাম্প্রদায়িকতা, সংকীর্ণতা এবং তার ভয়ঙ্কর বংশধর ধর্মান্ধতা দীর্ঘকাল ধরে এই সুন্দর পৃথিবীকে হিংসায় ভরিয়ে তুলছে, মানুষের রক্তে ভরিয়ে তুলছে। সভ্যতাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।” (Sectarianism, bigotry, and its horrible descendant, fanaticism, have long possessed this beautiful earth. They have filled the earth with violence, drenched it often and often with human blood, destroyed civilization and sent whole nations to despair.)
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা উঠেছে তখনও, সাম্প্রদায়িকতা বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ভোটঅস্ত্র। শিকাগোর সভার এই দিনটিকে বারেবারেই ভারতের ও হিন্দু ধর্মের গর্বের দিন হিসেবেই তুলে ধরা হয়। এত বছর আগেও ধর্মকে ধর্মান্ধতায় রূপান্তরকারীদের পৃথক করে শনাক্ত করতে চেয়েছিলেন স্বামীজী। ভারত তথা বিশ্ব তথা সভ্যতাকে আরও প্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়া থেকে আটকাচ্ছে যে এই ধর্মান্ধতাই তা স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ (Had it not been for these horrible demons, human society would be far more advanced than it is now.)
জনগণ সেই ভয়ানক রাক্ষসদের চিনতে পারছে কিনা এই প্রশ্নই ভাবাক আজ। আজ এই দিনে আরও একবার বিবেকানন্দের কথার স্মরণেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠুক ধর্ম ও সহিষ্ণুতার চিরন্তন পাঠ।
Click for more
trending news