১৯৬০ সালের দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডের ৪২৩ মিটার দখল করেছে চিন (PLA Intrusion in Indian Territory)। এনডিটিভি'র হাতে আসা সাম্প্রতিক উপগ্রহ চিত্র দেখে তেমনটাই ইঙ্গিত। ২৫ জুনের সেই চিত্রে একটা বড় ছাউনি, ১৬টি তাঁবু এবং ত্রিপল আর ১৪টি সাঁজোয়া গাড়ির অস্তিত্ব মিলেছে। দ্রাঘিমা ও অক্ষরেখা হিসেব করে গালোয়ানের বিশেষ এলাকা (423 Mtrs as per 1960's claim) নিজের বলে দাবি করেছিল বেজিং। সাম্প্রতিক উপগ্রহ চিত্রে সেই জায়গায় লাল ফৌজের উপস্থিতি উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
একমাসের উপগ্রহ চিত্র এনডিটিভির হাতে এসেছে। ২২ মে থেকে ২৬ জুনের সেই চিত্রে চিনের দ্বিচারিতা ধরা পড়েছে। দেখা গিয়েছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে গালওয়ান নদী এলাকায় দিব্যি নির্মাণ জারি রেখেছে পড়শি দেশ। এই চিত্র ঠিক সেই এলাকার অর্থাৎ পেট্রলিং পয়েন্ট ১৪-এর। গত ১৫ জুন এখানেই সংঘাতে জড়িয়েছিল দুই দেশের বাহিনী। সেই সংঘাতে ভারতীয় তরফে ২০ জন শহিদ হয়েছিলেন। চিনের তরফে সংখ্যা আরও বেশি। এমনটাই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে দাবি। আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত আছে পেট্রলিং পয়েন্ট ১৪ ভারতীয় ভূখণ্ড। অর্থাৎ উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে লাল ফৌজের অনুপ্রবেশের ছবি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের গোয়েন্দাদের দাবি, এই অনুপ্রবেশ গালোয়ান নদী বরাবর সীমান্ত পেরিয়ে প্রায় ১৩৭ মিটার। এখন প্রশ্ন উঠছে, যে এলাকায় উপগ্রহ চিত্র আনা অনুপ্রবেশ চিহ্নিত করেছে, সেখানে গত এক দশক ধরে পেট্রলিং করে ভারতীয় বাহিনী। তাহলে কী করে গালোয়ান নদী উপত্যকা এলাকায় এই নির্মাণ সম্ভব হল? অতএব অনুপ্রবেশ করে অবৈধ নির্মাণ চালাচ্ছে লাল ফৌজ। যে নির্মাণ ঘিরে চড়েছে ইন্দো-চিন উত্তেজনার পারদ।
চিনা দাবির প্রতিলিপি ১৯৬০ সালে প্রকাশিত করে বিদেশ মন্ত্রক।
সেই চিত্রে ইগলুর মতো কুঁড়ে ঘর দেখা গিয়েছে। আর প্রায় ২০ জন ফৌজের উপস্থিতি পরিলক্ষিত। যদিও নিশ্চিত নয়, সেই ফৌজ ভারতীয় না চিনা বাহিনী।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর কালো ত্রিপলের ছবি সম্প্রতি ধরা পড়েছে উপগ্রহ চিত্রে। সেই ত্রিপল লাল ফৌজি ঘাঁটি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে এই সম্ভাবনা উসকে দেওয়া হয়েছে। এনডিটিভি'র হাতেও এসেছে সেই চিত্র। সেই সেক্টরে ৯ কিমির মধ্যে প্রায় ১৬টি শিবির চিহ্নিত করেছে সেই চিত্র। সেই চিত্র দেখে স্পষ্ট, সামরিক স্তরের আলোচনায় চিন বাহিনী সরানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও, সেটা খাতায়-কলমে। শুধু তাই নয় এলএসি বরাবর ব্যাপক সামরিক সম্ভার বাড়াচ্ছে বেজিং।
সেই চিত্র পর্যবেক্ষণ করে এমন দাবি করা হয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরের সম্ভাবনা তৈরি করতে এই উদ্যোগ। এমনটাও দাবি করেছেন প্রাক্তন সেনাকর্তারা। গত ২২ জুন লেফটান্যান্ট পদমর্যাদার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে দুটি দেশ সীমান্ত থেকে নিরাপদ দূরত্বে বাহিনী সরানোর পক্ষে সম্মতি দিয়েছিল।
এদিকে, প্রতি মাসের 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানের এই পর্বে লাদাখ নিয়ে রবিবার সরব হলেন প্রধানমন্ত্রী। নরেন্দ্র মোদি বলেন, "লাদাখে ভারতীয় ভূখণ্ডে যাদের নজর পড়েছে, তাদের যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে। ভারত যেমন বন্ধুত্ব করতে জানে, তেমন শত্রুদের জবাব দিতে জানে। আমাদের সাহসী জওয়ানরা নিশ্চিত করেছে, মাতৃভূমিকে আক্রমণে কাউকে রেয়াত করবে না।" যে হারে দেশের মানুষ চিনা পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে, তার প্রভাব সে দেশের অর্থনীতিতেও পড়বে। এমন বার্তাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, "সাহসী জওয়ানদের কাছে আমরা মাথা নত করি। এঁরাই দেশকে নিরাপদ রেখেছেন। ওঁদের আত্মত্যাগ সবসময় স্মরণ করবে দেশ।"