দেখুন এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি তথ্য:
অমিত শাহ বিলটি "সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ০.০০১%"ও নয়। তিনি বিলটি লোকসভায় আলোচনার জন্যে উত্থাপন করার অনুরোধ করেন। কারণ এই বিলের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করা জরুরি। যদিও তিনি একথাও বলেন, এই মুহুর্তে বিলের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করা উচিত নয়।
কংগ্রেস নেতা শশী থারুর সোমবার সকালে এই বিলের বিরুদ্ধে যে নোটিস দিয়েছেন, তাতে তিনি বলেছেন যে এই বিলটি "মাত্র ছয় ধর্মের মানুষকে নাগরিকত্ব অর্জনের অনুমতি দিতে চায় এবং এটি অন্যান্য ধর্মের ব্যক্তিদের বাদ দিতে চায়, এর ফলে ধর্মীয় বৈষম্যের ধারণাটি সমর্থন করছে এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, যা অনুচিত"।
কংগ্রেস সাংসদ লোকসভার অধ্যক্ষের কাছ থেকে "পূর্ণ আলোচনায়" বক্তব্য রাখতে দেওয়ার অনুমতি চেয়েছেন যাতে বিলটিকে নিয়ে সহজেই এগিয়ে যাওয়া না যায়। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেন যে তাঁরা এই বিলের বিপক্ষে। "দল যে কোনও মূল্যেই এই বিলের বিরোধিতা করবে", বলেন অখিলেশ।
বিজেপির যুক্তি অনুযায়ী, প্রতিবেশী দেশগুলিতে "নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের" আশ্রয় দেওয়ার জন্য এই আইনী পদক্ষেপের প্রয়োজন। "এই বিলে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে যে সমস্ত মানুষজন ধর্মের কারণে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন তাঁদের রক্ষা করার প্রচেষ্টা রয়েছে ... সুতরাং আপনারা কীভাবে এই বিলটিকে অসাম্প্রদায়িক হওয়ার কথা বলতে পারেন?", এর আগে এনডিটিভিকে বলেন অসমের বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
বিজেপির প্রাক্তন মিত্র শিবসেনা বলে এই বিলটির মাধ্যমে আসলে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে "অদৃশ্য বিভাজন" তৈরি করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। শিবসেনার মুখপত্র সামনার সম্পাদকীয়তে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটির সময়কাল নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। "ভারতে এমনিতেই এখন সমস্যার কোন অভাব নেই, তার মধ্যে আবার আমরা সিএবির মতো নতুন এক সমস্যাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। দেখে মনে হচ্ছে কেন্দ্র আসলে এই বিলের মাধ্যমে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে এক অদৃশ্য বিভাজন তৈরি করছে", বলে ওই দল।
নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে আসা অ-মুসলিম শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি সহজ করার জন্য ছয় দশকের পুরনো আইনটি সংশোধন করার চেষ্টা করতে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। অনেক বিরোধী দল প্রস্তাবিত আইনটিকে বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করে বলেছে যে এটি ভারতের সংবিধানে থাকা ধর্মনিরপেক্ষতার মূল নিয়মের পরিপন্থী।
সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বলেন, এই বিলটি উত্তর-পূর্বের রাজ্য সহ সমগ্র দেশের স্বার্থে আনা হয়েছে। "এই বিলটি উত্তর-পূর্ব রাজ্য এবং দেশের স্বার্থে আনা হয়েছে, তাই এই বিল সংসদের উভয় কক্ষ থেকেই অনুমোদন পাবে", বলেন তিনি। প্রহ্লাদ জোশী আরও যোগ করেন, "প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে লোকসভায় এটি পেশ করা হবে।"
এই বিলের প্রতিবাদে উত্তর-পূর্বের একটি প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠন মঙ্গলবার ১১ ঘণ্টার বনধ পালনের ঘোষণা করেছে। তারা মনে করছে যে, এই বিলটি আসলে ১৯৮৫ সালের অসম চুক্তি ছিন্ন করার প্রয়াস। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের নির্ধারিত চুক্তি অনুযায়ী ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত অবৈধ অভিবাসীরা এ দেশে শরণার্থী হিসাবে বিবেচিত হবে। অসমে বিশিষ্ট ছাত্র সংগঠন গুলি হুমকি দিয়েছে যে বিলটি পাস হলে দেশ জুড়ে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করবে তাঁরা।
নরেন্দ্র মোদি সরকার তাঁর আগের মেয়াদেও এই বিলটির পেশ করে, এমনকি লোকসভায় পাসও করে যায় এই বিলটি, কিন্তু উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির প্রতিবাদের কারণে রাজ্যসভায় এই বিলটি পেশ করা সম্ভব হয়নি।
১৯৫৫ সালের মূল নাগরিকত্ব আইনটিতে বলা হয়েছে যে অন্য দেশে থেকে এ দেশে আসা কোনও ব্যক্তি যদি ভারতের নাগরিকত্ব প্রার্থী হন তাহলে তাঁকে গত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর এ দেশে বসবাস করছেন এই প্রমাণ দেখাতে হবে। কিন্তু সেই বিধান বদলাতেই আনা এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে যে এ দেশে টানা ৫ বছর ধরে বসবাস করা অমুসলিমরাই নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্যে অবেদন করতে পারবেন।