দেখে নিন এই সংক্রান্ত ১০টি তথ্য:
রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি উত্থাপন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন যে, প্রতিবেশী দেশগুলিতে সংখ্যালঘু হিসাবে বছরের পর বছর অত্যাচার সহ্য করার পর, যাঁরা এদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁদের সম্মানজনক জীবনযাপন করার সুযোগ এবং স্বাধীনতা দিতেই এই বিলের প্রবর্তন করা হয়েছে "।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিরোধীদের আচরণে উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সূত্রের খবর, বুধবার বিজেপির বৈঠকে তিনি বলেন, কিছু দল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটির বিষয়ে পাকিস্তানের মতো একই ভাষায় কথা বলছে। "নাগরিকত্ব বিল স্বর্ণাক্ষরে লেখা হবে, এটি ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের স্থায়ীত্ব তথা স্বস্তি দেবে" রাজ্যসভায় বিতর্কিত বিলটি উত্থাপনের কয়েক ঘণ্টা আগে বিজেপির সংসদীয় বৈঠকে ওই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের মাধ্যমে আসলে "উত্তর-পূর্বে অপরাধমূলক আক্রমণ" করছে সরকার এবং এই অঞ্চলটি থেকে "জাতির ভিত্তিতে সাফাই" করার একটি প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্র, টুইটে বলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। বুধবার সংসদে বিতর্কিত বিলটি পেশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই ওই টুইট করেন তিনি। "সিএবি আসলে মোদি-শাহ সরকারের জাতির ভিত্তিতে উত্তর-পূর্বকে সাফাই করার একটি প্রয়াস। এটি উত্তর পূর্বের উপর, তাঁদের জীবনযাত্রা এবং ভারতের ধারণার উপর একটি অপরাধমূলক আক্রমণ। জাতীয় সংহতির প্রশ্নে আমি উত্তর পূর্বের জনগণের পাশে রয়েছি", টুইট করেন কংগ্রেসের লোকসভার সাংসদ রাহুল গান্ধি।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের মাধ্যমে বৈষম্য হচ্ছে, বলছে বিরোধী দলগুলি। কিন্তু তাঁদের বিরোধিতা ছাড়াও এই বিলটি নিয়ে বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিও; উদ্বাস্তুরা এই বিলের মাধ্যমে এ দেশে পাকাপাকি নাগরিকত্ব পাবে, ফলে বিপন্ন হতে পারে আদিবাসীদের পরিচয় এবং জীবন-জীবিকা, এমন উদ্বেগের ফলেই সেখানে এই বিলের বিরোধিতায় প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সোমবার লোকসভায় বলেন যে এই বিলটি সংবিধান লঙ্ঘন করেনি এবং বিলটি ভারতের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে "০.০০১ শতাংশও নয়"। গত সপ্তাহে তিনি উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন, তারপরেই এই বিলটিতে উপজাতিদের ছাড় দেওয়া হয়। অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং মিজোরাম অঞ্চলগুলি পাশাপাশি "দ্য ইনার লাইন" পারমিট সিস্টেমের আওতাধীন অঞ্চলের উপজাতিদের এই বিলে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
সোমবার লোকসভায় অমিত শাহ উত্তর-পূর্বের বিক্ষোভ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, "আমি জনগণকে শুধু বলতে চাই যে এই বিলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে এমন কিছু নেই যাতে শঙ্কিত হতে হবে, এই বিলটি নিয়ে তাঁদের শঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই, বিক্ষোভ দেখানোর দরকার নেই"।
এই বিলের বিরুদ্ধে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে অমুসলিম পাকিস্তানি, আফগান, এবং বাংলাদেশীদের ভারতীয় নাগরিক করার রাস্তা সহজ করে দেওয়া হয়েছে. আর তাঁর বিরুদ্ধে রোষে ফেটে পড়েন সেখানকার জনতা। মঙ্গলবার ত্রিপুরা সরকার এই বিক্ষোভের কারণে রাজ্য জুড়ে মোবাইল ইন্টারনেট এবং এসএমএস পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই বিক্ষোভ আন্দোলন চলাকালীন সিপাহিজালার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই মৃত্য়ু হয় ২ মাস বয়সী এক অসুস্থ শিশুর ।
মঙ্গলবার উত্তর-পূর্বের একটি ছাত্র সংগঠন, রাজনৈতিক দল সমর্থিত শিক্ষার্থীদের সংগঠন ১১ ঘণ্টার বনধের ডাক দেয়। এছাড়াও, অসমে মোট ১৬ টি বামপন্থী সংগঠন পৃথকভাবে ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক দেয়।
অন্যান্য প্রস্তাবগুলির মধ্যে নাগরিকত্ব বিলে করা একটি প্রস্তাবে সরকার বিদেশি নাগরিকদের নাগরিকত্ব আইনের বিধান লঙ্ঘনকারী ওভারসিজ সিটিজেন অফ ইন্ডিয়া (ওসিআই)-র কার্ড থাকা ব্য়ক্তিদেরও রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার অনুমতি দেয়।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ পাস হলে, এটিই দেশের প্রথম বিল হবে যেখানে ধর্মের ভিত্তিতে দেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।