কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন বিজেপি নেতারা ভুয়ো হিন্দু (ফাইল)
নয়াদিল্লি: বিজেপি নেতাদের “ভুয়ো হিন্দু” বলে তোপ দেগে এবং সরকারের বিরুদ্ধে “বুলেট দিয়ে মানুষের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা”র অভিযোগ তুলে লোকসভায় শাসকপক্ষের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) । নাগরিকত্ব আইন এবং দিল্লির শাহিনবাগ ও জামিয়া এলাকায় তিনটি গুলির ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদের মধ্যেই এই মন্তব্য করেন তিনি। সম্প্রতি অনুরাগ ঠাকুরের “বিশ্বাসঘাতকদের গুলি করো” মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সরকার “বুলেট দিয়ে মানুষের কণ্ঠরোধ করতে পারবে না সরকার”। বিজেপি প্রার্থী মনীশ চৌধুরীর প্রচারসভায় অনুরাগ ঠাকুর “দেশের গদ্দারদের” শব্দ উচ্চারণ করেন, তারপরেই উপস্থিত জনতা বলে ওঠে, “গুলি মারো...” পুরো বিষয়টিতে বলা হয়, “দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা বিশ্বাসঘাতকদের গুলি মারো”।
ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিন্ময়ানন্দের জামিন
অধীর চৌধুরী বলেন, “নাগরিকত্ব আইন জোর করে লাগু করায় সংবিধান বাঁচাতে পথে নেমেছে সাধারণ মানুষ। গুলি করে মারা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। গুলি চালিয়ে সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করছে সরকার। তারা এটা করতে পারে না। তারা (বিজেপি) ভুয়ো হিন্দু”। এদিন লোকসভার জিরো আওয়ারে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা দাবি জানানোর পাশাপাশি নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে সরকারকে পুনর্বিবেচনার আর্জি জানান অধীর চৌধুরী।
দিল্লিতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে, তারমধ্যেই রবিবার রাতে, দক্ষিণ দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলি চলে, এই নিয়ে মোট তিনবার গুলি চলল। শনিবার, জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক কিশোর গুলি চালানোর তিনদিন পর, শাহিনবাগে পুলিশ ব্যারিকেডের সামনে দাঁড়িয়ে গুলি চালায় এক ব্যক্তি।
"ঐতিহাসিক অবিচারকে সংশোধন করতেই CAA আনা হয়েছে", বললেন প্রধানমন্ত্রী মোদি
অধীর চৌধুরীকে থামান লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা, এবং শীতকালীন অধিবেশনে একটি গভীর রাতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশি বলেন, রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের পর, বিষয়টি তুলতে পারে কংগ্রেস। তিনি বলেন, “আমি অধ্যক্ষের মাধ্যমে আপনাকে অনুরোধ করছি, সংসদের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে দিন”।
এদিন সকাল ১১টায় সংসদের কাজ শুরু হতেই নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সঙ্গে সুর চড়ান ডিএমকে এবং ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগের সাংসদরাও, এই আইন “প্রত্যাহারের” দাবি জানান তাঁরা।
বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস সাংসদদের আলোচনার অনুমতি না দিলে অধ্যক্ষের পোডিয়ামের সামনে নেমে এসে সাংসদরা স্লোগান দিতে থাকেন, “গণতন্ত্র বাঁচাও”, “সংবিধান বাঁচাও”, “আমাদের ভারত বাঁচাও”, “প্রধানমন্ত্রী জবাব দাও”, “উত্তজেক বক্তব্য বন্ধ করো” এবং “সিএএ প্রত্যাহার করো”।
কোনও রাজ্য বলতে পারে না সংসদে পাস হওয়া আইন মেনে চলব না: কপিল সিবাল
এরমধ্যেই প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং জিরো আওয়ারের কাজ শুরু করেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। ঝামেলা চলতে থাকায় মধ্যহ্নভোজের বিরতি পর্যন্ত সভার কাজ মুলতুবি করে দেন অধ্যক্ষ।
এর আগে, নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহারের দাবিতে মুলতুবি প্রস্তাব আনেন অধীর চৌধুরী, কুড়িকুনিল সুরেশ এবং গৌরব গগৈ। গত ১০ জানুয়ারি গ্যাজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করা হয়। ২০১৯ এর ১১ ডিসেম্বর সংসদে পাশ হয় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল।
২০১৪ এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত, তিন মুসলিম অধ্যুষিত দেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা অমুসলিম নাগরিক, যাঁরা ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ভারতে চলে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তারমধ্যে রয়েছে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, এবং খ্রিশ্চান।