ট্রাম্পের গুজরাট সফরের সময় একটি অনুষ্ঠানে "১০০ কোটি" ব্যয় করেছে মোদি সরকার। প্রধানমন্ত্রী-কেয়ারস তহবিলে রেল ১৫১ কোটি টাকা দান করেছে করোনা মোকাবিলায়! তা সত্ত্বেও করোনাভাইরাসের জেরে দেশব্যাপী লকডাউনে আটকা পড়া অভিবাসীদের ঘরে ফেরাতে ট্রেনের যাত্রার ভাড়া চেয়েছে কেন্দ্র সরকার! কেন্দ্র সরকারের এহেন অসংবেদনশীল ভূমিকাকে 'বিরক্তিকর' বলে আক্রমণ করে সোনিয়া গান্ধি (Sonia Gandhi) আজ ঘোষণা করেছেন যে কংগ্রেস "আমাদের অর্থনীতির মেরুদন্ড" এবং "আমাদের দেশের বিকাশের রাষ্ট্রদূত" এই শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার ট্রেনের ভাড়া প্রদান করবে। কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া আজ, সোমবার সকালেই একটি চিঠিতে বলেন, “আমাদের দেশবাসীর সেবায় এবং তাদের সংহতিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের এটি একটি বিনীত অবদান।"
“আমাদের শ্রমিকশ্রেণি আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধির রাষ্ট্রদূত। যখন আমাদের সরকার বিদেশে আটকা পড়া নাগরিকদের জন্য বিনামূল্যে বিমান ভ্রমণ ব্যবস্থা করতে পারে, যখন সরকার গুজরাটে কেবল একটি প্রকাশ্য কর্মসূচির জন্য পরিবহন ও খাবার বাবদ প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ করতে পারে, যখন রেল মন্ত্রক প্রধানমন্ত্রীর করোনা তহবিলের জন্য ১৫১ কোটি টাকা অনুদান দিতে পারে তাহলে কেন আমাদের দেশের এই প্রয়োজনীয় সদস্যদের সঙ্গেও একই সৌজন্য বোধ দেখানো হবে না, বিশেষত অন্তত বিনামূল্যে রেল ভ্রমণ, তীব্র সঙ্কটের এই সময়ে?”
সোনিয়া গান্ধি জানান, কেন্দ্র লকডাউন শুরুর বিষয়ে মাত্র চার ঘণ্টার নোটিশ দিয়েছিল, তাই শ্রমিক ও অভিবাসী শ্রমিকরা তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সুযোগটুকুও পাননি।
“১৯৪৭-এর দেশভাগের পরে, এই প্রথম ভারত এমন বিশাল জাতীয় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবার এবং প্রিয়জনদের কাছে ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা কয়েকশ' কিলোমিটার পায়ে হেঁটে বাড়ি যেতে বাধ্য হয়েছেন- খাবার ছাড়াই, ওষুধ ছাড়াই, টাকা ছাড়াই, যানবাহন ছাড়াই,” লিখেছেন সোনিয়া।
আজও তিনি জানান, লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ও অভিবাসী শ্রমিক “দেশের বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়েছেন” এবং তারা বাড়ি ও পরিবারের কাছে ফিরে যেতে ইচ্ছুক হলেও তাদের কাছে অর্থ বা যাতায়াতের ভাড়া নেই।
কংগ্রেস সভাপতি উল্লেখ করেন, “বিশেষ করে আমাদের উদ্বেগজনক মনে হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় সরকার এবং রেল মন্ত্রক এই সঙ্কটের সময়েও ট্রেনের টিকিটের ভাড়া নিচ্ছেন এই শ্রমিকদের কাছ থেকে।" সোনিয়া আরও জানান, কেন্দ্র এবং রেল মন্ত্রক বারবার কংগ্রেসের দাবি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সোনিয়া ঘোষণা করেছেন, “সুতরাং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে প্রতিটি প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি প্রত্যেক অভাবী শ্রমিক এবং অভিবাসী শ্রমিকের রেলযাত্রার ব্যয় বহন করবে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দেশব্যাপী লকডাউন তৃতীয় দফায় আরও দু'সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। এই অবস্থায় অভিবাসীদের নিজ রাজ্যে ভ্রমণের জন্য শুক্রবার থেকে সরকার বিশেষ ট্রেন চলাচল শুরু করে। রাজ্য সরকারগুলিকে অভিবাসীদের কাছ থেকে টিকিটের মূল্য সংগ্রহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
“স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের টিকিট হস্তান্তর করবে এবং টিকিটের ভাড়া আদায় করবে এবং মোট সংগৃহীত অর্থ রেলকে হস্তান্তর করবে,” রেল মন্ত্রক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বিরোধী দল তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। কেন্দ্রই এই ব্যয় বহন করুক, এমনই আর্জি জানিয়েছেন বিরোধীরা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৫ মার্চ দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করার পর বাড়ি থেকে অনেক দূরে থাকা লক্ষ লক্ষ অভিবাসী শ্রমিক এবং অন্যরা কাজ, অর্থ, খাবার বা আশ্রয় ছাড়াই আটকা পড়েন। তার পর থেকেই হতাশায় একদল অভিবাসী পায়ে হেঁটে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন বা বাড়িতে পৌঁছনোর জন্য অন্য উপায়ে চেষ্টা করতে থাকেন।