Coronavirus cases, India: দেশে ৭০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ওই রোগে ভুগে
হাইলাইটস
- করোনা সংক্রমণের সংখ্যা কম করতে দেশ জুড়ে টানা লকডাউন চলছে
- আগামী ৩ মে পর্যন্ত এই লকডাউন চলবে
- শুক্রবার সকাল পর্যন্ত দেশে মোট করোনা আক্রান্ত ২৩,০৭৭ জন, মৃত ৭১৮
নয়া দিল্লি:
ভারতে করোনা ভাইরাসে (Coronavirus India) আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ২৩,০৭৭ জন, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ওই রোগে (Coronavirus Cases) আক্রান্ত হয়েছেন ১,৬৮৪ জন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, একদিনের মধ্যে COVID- 19 প্রাণ কেড়েছে আরও ৩৭ জনের, ফলে দেশে করোনা (Coronavirus) আক্রান্ত হয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১৮ জনে। তবে আশার কথা এটাই যে, সরকার জানাচ্ছে দেশে করোনা সংক্রমণের হার রৈখিক, অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট হারে এই সংক্রমণ বেড়েছে, হঠাৎ করে বড় কোনও কার্ভ দেখা যায়নি সংক্রমণের গ্রাফে। এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যসঙ্কট মোকাবিলায় তৈরি গ্রুপের সভাপতি সি কে মিশ্র জানিয়েছেন, "COVID-19 ক্ষেত্রে বৃদ্ধি কম-বেশি এদিক-ওদিক হয়েছে; এটি প্রমাণ করছে যে, আমরা এই রোগকে আটকাতে যে কৌশলগুলি নিয়েছি তাতে কিছুটা হলেও সাফল্য মিলেছে"
গত একমাস ধরে লকডাউনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশ। এই পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণের হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে সরকার। "সংক্রমণ হ্রাস করতে, COVID-19-এর সংক্রমণ দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধির সময় বাড়াতে এবং এই রোগ ছড়িয়ে পড়া কমিয়ে আনা গেছে", বৃহস্পতিবার এই কথা বলে সরকার। "৩০ দিনের লকডাউন চলাকালীন, আমরা COVID-19 এর সংক্রমণকে হ্রাস করতে, প্রসারকে হ্রাস করতে এবং দ্বিগুণ সংক্রমণ হওয়ার দিনসংখ্যাকে বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। এই ভাইরাসটি আরও ছড়িয়ে পড়ছে কিনা তা জানতে আমরা ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি এবং ভবিষ্যতের জন্যে এই সময়কে আমাদের যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পেরেছি", বলেন সরকার গঠিত ১১ সদস্যের বিশেষ কমিটির সভাপতি সি কে মিশ্র।
তবে আশার কথা এই যে করোনার সঙ্কট কাটিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষজনের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত দেশে মোট ৪,৭৪৯ জন রোগী করোনার সঙ্গে যুঝে জয়লাভ করেছেন বলে খবর। আজ (শুক্রবার) সকাল পর্যন্ত এই রোগ থেকে পুনরুদ্ধারের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০.৫৭ শতাংশ।
দেশে মোট করোনা আক্রান্তের প্রায় অর্ধেকই ৩ রাজ্য মহারাষ্ট্র, দিল্লি ও গুজরাটে, প্রতিটি রাজ্যেই ওই মারণ রোগে আক্রান্ত কমপক্ষে ২,০০০ জন। বৃহস্পতিবার সরকারি তথ্যে দেখা গেছে, উপরোক্ত তিনটি রাজ্য এবং মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, তামিলনাড়ু এবং উত্তরপ্রদেশ সহ মোট সাতটি রাজ্যে দেশের মোট করোনা আক্রান্তের প্রায় ৭৮ শতাংশ রয়েছে।
মহারাষ্ট্রে, বৃহস্পতিবার নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭৮ জন। এর ফলে ওই রাজ্যে এখন সংক্রমিত মোট ৬,৪২৭ জন। বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে ভুগে মৃত্যু হয়েছে আরও ১৯ জনের, এখনও পর্যন্ত ঠাকরের রাজ্যে মৃত মোট ২৮৩ জন। মুম্বইতেই নতুন করে ওই রোগে আরও ৫২২ জন আক্রান্ত হয়েছেন, বাণিজ্য নগরীতে করোনা আক্রান্ত মোট ৪,০২৫ জন। সেই সঙ্গে মুম্বইয়ে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। ওই শহরে মৃত্যুর সংখ্যা ৬ থেকে বেড়ে এখন ১৬৭ জন। মুম্বইয়ের ধারাভি, এশিয়ার বৃহত্তম ওই বস্তিতেই এখন করোনা আক্রান্ত ২১৪ জন এবং মারা গেছেন ১৩ জন। ৮ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস করে ধারাভিতে।
এদিকে দেশের রাজধানী দিল্লিতেও একই অবস্থা। সেখানে করোনা সংক্রমণ প্রবণ স্থানের সংখ্যা বেড়ে এখন ৯২। সেখানে ২,৩০০ জনেরও বেশি মানুষ ভুগছেন ওই মারণ রোগে। বৃহস্পতিবারই উত্তর দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরীতে ৪৬ জন এবং ওল্ড দিল্লিতে এক পরিবারের ১১ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে।
এদিকে কেরলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য নাগাড়ে পরীক্ষা করার সুপারিশ করা হয়েছে। "রাজ্যের পুলিশ, স্বাস্থ্য আধিকারিক, অনলাইন / ডোর ডেলিভারি ম্যান এবং প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হবে", বলেন সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনলাইন সম্মেলনে বলেন, 'করোনা যোদ্ধাদের' মূল্যবান ও আন্তরিক সেবার কারণেই ভারত করোনা সংকট কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে ভালো সাড়া পেয়েছে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো জায়গায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সার্ক অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোও একটি সম্মেলন করে। সেই সম্মেলনেও অংশ নেয় ভারত। করোনা ভাইরাস মহামারীর মোকাবিলায় বৃহত্তর আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্যে পাকিস্তানে সার্ক স্বাস্থ্য মন্ত্রীদের নিয়ে একটি ভিডিও সম্মেলন করা হয়। একসঙ্গে লড়াই করবে সব দেশ, করা হয় অঙ্গীকার।
করোনা সংক্রমণ কমাতে ২৫ মার্চ থেকে সারা ভারত লকডাউনের আওতায়, ফলে ঘরবন্দি থাকতে হচ্ছে মানুষকে। আর এরই সুফল মিলেছে প্রকৃতিতে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানাচ্ছে যে, এই লকডাউনের ফলেই ভারতের দূষণ একধাক্কায় অনেকটা কমে গেছে। ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে, গত ২০ বছরের মধ্যে এই প্রথম উত্তর ভারতের বায়ুদূষণ বিরাট মাত্রায় কমতে দেখা গেছে। নাসার উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, লকডাউনের পর বাতাসে অ্যারোসোলের মাত্রা এতটাই নেমে গেছে যে তা একরকম ঐতিহাসিকই বলা চলে।
বিশ্ব জুড়ে যে করোনা ভাইরাস ত্রাস সৃষ্টি করেছে, সেটিকে ধ্বংস করতে সক্ষম সূর্যের তীব্র আলো, এমনটাই দাবি করা হচ্ছে মার্কিন মুলুকে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের উপদেষ্টা উইলিয়াম ব্রায়ান হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হয়ে দাবি করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণায় দেখেছেন যে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি করোনা ভাইরাসের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে সক্ষম।
Post a comment