সংক্রমণ আবহে স্থানীয় ভাবে সাফাই পরিষেবা দিতে এগিয়ে এসেছেন এই করোনা যোদ্ধা।
নয়া দিল্লি: মাথা থেকে পা পর্যন্ত বোরখায় ঢেকের মন্দির-মসজিদ-গুরুদ্বারে সাফাই কাজ করে চলেছেন ইমরানা সইফি। সঙ্কটকালে ৩২ বছরের এই তরুণীর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে উত্তর দিল্লির নেহেরু বিহার। জানা গিয়েছে, তিন সন্তানের জননী ইমরানা নিয়ম মেনে সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত রমজান মাসের রীতি পালন করছেন। পাশাপাশি সাফাইকর্মী হিসেবে জীবাণুনাশক-স্প্রে নিয়ে ঘুরছেন উত্তর দিল্লির এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্ত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বোরখা পরে করছেন এলাকা জীবাণু-নাশ করার কাজ। ধর্ম-বর্ণ পার্থক্য ভুলে তাকে এই কাজে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় মন্দির ও গুরদ্বার কমিটি। ইমরানার পরিবার সূত্রে খবর, সপ্তম শ্রেণীর পর আর পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি এই তরুণী। এই সঙ্কটের মুহূর্তে মানুষের পাশে থাকতে তাই উদ্যোগ নিয়ে করোনা যোদ্ধাদের একটা দল তৈরি করেন তিনি। সেই দলে ইমরানা-সহ মোট ৩ জন সদস্য। তাঁরাই এখন ঘুরে ঘুরে এলাকা সাফাইয়ের কাজে হাত লাগিয়েছেন। স্থানীয়দের দাবি, "বরাবর মানবতার পক্ষে লড়াই করেন ইমরানা। মাস তিনেক আগে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে যখন উত্তাল দিল্লি, তখনও ধর্মের ভেদাভেদ না রেখে আর্তদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন ইমরানা সইফি।"
এভাবেই স্প্রে নিয়ে মন্দির-মসজিদ-গুরদ্বারাতে ঢুকে সাফাই কাজ করছেন ইমরানা।
ইমরানা বলেছেন, "এই সঙ্কটকালে আমরা মন্দির-মসজিদ ভেদাভেদ করছিনা। যেখানেই দেখছি জীবাণু-নাশ করার প্রয়োজন, ঢুকে পরে স্প্রে করে দিচ্ছি। এখনও পর্যন্ত কোনও মহল থেকে বাধা আসেনি। আমি ভারতের সম্প্রীতি বজায় রাখতে চাই। আমি দেখাতে চাই আমরা সবাই এক, একসঙ্গেই বাঁচতে চাই।"
এখনও পর্যন্ত কেউ তাঁর কাজে বাধা দেয়নি, জানিয়েছেন এই তরুনী।
নেহেরু বিহার দুর্গা মন্দিরের পুরোহিত পণ্ডিত যোগেশ কৃষ্ণা এনডিটিভিকে বলেছেন, "এই ধরনের পদক্ষেপ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার সহায়ক। আমাদের এভাবেই একে অপরকে সাহায্য করা উচিত। ঘৃণা বর্জন করে ভালোবাসা দত্তক নেওয়া উচিত।" জানা গিয়েছে, ইমরানার স্বামী নিয়ামত আলি পেশায় প্লাম্বার। তাই সংসারে একটু আর্থিক সাচ্ছন্দ্য আনতে এভাবেই সাফাইকর্মী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চেয়েছেন ওই তরুণী। এলাকা ঘুরে জানা গিয়েছে, রোজা পালন করে, তিন সন্তান লালন-পালন করে সময়মতো পরিষেবা দিচ্ছেন ইমরানা। তিনি বলেন, "মানুষ বুঝতে পেরেছে এই রোগ অত্যন্ত মারাত্মক। তাই সাফাইকাজে কোনও প্রতিবন্ধকতা আসছে না। সব সম্প্রদায়কে এক ছাদের তলায় এনেছে এই রোগ।" .