শনিবার নতুন করে রাজ্যে ১০৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। (এএফপি)
কলকাতা: ‘সিটি অফ জয়' (City Of Joy) এখন ‘সিটি অফ কনটেনমেন্ট জোনস'। কলকাতা (Kolkata) শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ— বিস্তৃত অংশই ব্যারিকেডে ঢাকা পড়েছে। বাসিন্দারা বাইরে যেতে পারছেন না। এলাকার বাইরের মানুষও পারছেন না ভিতরে আসতে। সম্ভবত বন্ধ হতে চলেছে বড়বাজার— কলকাতায় করোনা (Coronavirus) সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার অন্যতম কেন্দ্র ধরা হচ্ছে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য ক্ষেত্রটিকেই। শনিবার রাজ্যে নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে ১০৮ জনের শরীরে। শুক্রবার ধরা পড়েছিল ১৩০ জনের শরীরে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গিয়েছেন ১১ জন করোনা-আক্রান্ত। গত সপ্তাহেই শহরে মোট কনটেনমেন্ট জোন ছিল ২২৭টি। এই সপ্তাহেই তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১৯টিতে!
সংক্রমণ ছড়িয়েছে কলকাতা জাদুঘর সংলগ্ন এলাকাতেও। মিউজিয়ামের ব্যারাকের মধ্যে বসবাসকারী এক সিআইএসএফ জওয়ান বৃহস্পতিবার কোভিড-১৯ সংক্রমণের শিকার হয়ে মারা গিয়েছেন। তাঁর তিরিশ জন সহকর্মীকে কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
জাদুঘরের পাশে অবস্থান করলেও পার্ক স্ট্রিটকে কনটেনমেন্ট জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্তু পার্ক স্ট্রিট এখন যেন পাণ্ডববর্জিত স্থান। গোটা এলাকার প্রায় সব দোকানে ঝুলছে তালা। এমন নিঝুম পার্ক স্ট্রিট শহরবাসী কখনও কল্পনা করতে পারেনি।
তবে সব বন্ধ থাকলেও একটি বড় মুদির দোকান খোলা রয়েছে। তার বাইরে দেখা যাচ্ছে দীর্ঘ লাইন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী জানাচ্ছেন, ‘‘এই এলাকা কনটেনমেন্ট জোনের মধ্যে পড়ছে না। কিন্তু ভয় রয়েছেই, যেভাবে কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা বুঝতে পারছি না কত বড় বিপদের মধ্যে আমরা এসে পড়েছি। এটা আমার আতঙ্ককে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারের উচিত এ বিষয়ে আরও স্বচ্ছ হওয়া।''
বড়বাজারের সরু সরু গলি এখন ব্যারিকেডের দখলে। চিৎপুর রোডের নানা জায়গায়ই আটকে দেওয়া হয়েছে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম এই অঞ্চলকেই শহরে সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে মনে করছেন। বিশেষত, চালক ও তাঁদের সহকারীদের থেকে এখানে বিপুল ভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মেয়র জানাচ্ছেন, ‘‘যদি শহরের বাইরে থেকে মানুষ ট্রাকে করে শহরে ঢুকে পড়ে তাহলে আপনি ভাইরাসের পরীক্ষা করতে পারবেন না। আমরা পুলিশকে বলেছি, শহরের এমন কোনও স্থান ঠিক করে দিতে, যেখানে সমস্ত ট্রাক এসে তাদের মাল খালাস করতে পারবে।''
শহর জুড়ে পুলিশ প্রহরা। হাওড়া ব্রিজের দু'প্রান্তেও পুলিশ। চলছে চেকিংয়ের তীব্র কড়াকড়ি। প্রসঙ্গত, হাওড়া রেড জোনের অন্তর্গত। তাই সেখান থেকে যাতে কেউ শহরে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে খেয়াল রেখেছে পুলিশ।
দিনে ২৫০ থেকে ৩,০০০— এভাবেই লাফিয়ে বেড়েছে রাজ্যে করোনা পরীক্ষার পরিমাণ। যত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, শনিবার পর্যন্ত তার মধ্যে কোভিড-১৯ পজিটিভের পরিমাণ ৪.৫৪ শতাংশ। শুক্রবার পর্যন্ত তা ছিল ৪.৬৯ শতাংশ। শতাংশের হিসেবে পরিমাণটা সামান্য কম। কিন্তু এই সামান্য অঙ্কটুকুই বহু মানুষের প্রাণরক্ষার নির্দেশক।.