COVID-19 মামলা নেই এমন অঞ্চলে, একজন যাত্রী নিয়ে গাড়ি চালানো যেতে পারে
নয়াদিল্লি:
করোনা ভাইরাসকে (Coronavirus) রুখতে দেশব্যাপী যে লকডাউন (Lockdown) জারি করা হয় তার মেয়াদ আজ অর্থাৎ ৪ মে থেকে আরও দুই সপ্তাহের জন্যে বাড়ানো হয়েছে। রেল, বিমান, সড়ক পরিবহণ সহ সমস্ত ধরণের পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ রাখা হয়েছে। এই মহামারীর সঙ্গে যুঝতে যে এলাকাগুলোতে সংক্রমণের ঝুঁকি কম বা একেবারে নেই বললেই চলে সেখানে লকডাউনের বিধিনিষেধ অনেকটাই শিথিল করা হয়েছে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইছে রাজধানী দিল্লিও। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল রবিবার সাংবাদিকদের বলেন যে সেখানকার বিভিন্ন পরিষেবা ধীরে ধীরে ফের চালু করা হচ্ছে। তবে মানুষকে "করোন ভাইরাসকে পাশে নিয়েই এখন বাঁচার জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে", একথাও বলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী । কয়েকটি রাজ্যে মদের দোকান খোলায় অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে বর্ধিত লকডাউনের মধ্যে যে দোকানগুলোই খোলা হোক না কেন, সব জায়গাতেই কঠোর সামাজিক দূরত্ব এবং অন্যান্য সমস্ত সুরক্ষা নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হবে। গ্রিন জোন বা কোনও COVID-19 মামলা নেই এমন অঞ্চলে, একজন যাত্রী নিয়ে গাড়ি চালানো যেতে পারে, তবে তার সময়সীমা সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত। চলতে পারে দু'চাকার গাড়িও, কিন্তু তাতেও একজনই সওয়ারি থাকতে পারেন। কেবলমাত্র জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবাগুলি পৌঁছে দিতে যে যানবাহন চলবে সেগুলির ক্ষেত্রে বেশ কিছু ছাড় দেওয়া হবে।
তৃতীয় দফার লকডাউনের ১০ তথ্য:
দিল্লিতে বিভিন্ন দোকান অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও অন্যান্য নানা প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান খোলা হচ্ছে। বিভিন্ন টেকনিশিয়ান, বিদ্যুতের কাজ করা ব্যক্তি, সহ নানা কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সুরক্ষাব্যবস্থা সহ কাজ শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
মহারাষ্ট্রেও অর্থনীতির ক্ষেত্রটি বিবেচনা করে বিভিন্ন রকম কাজ শুরু করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। ওই রাজ্যেও মদের দোকান খোলা যাবে। সর্বাধিক দুই জন যাত্রী সহ চালানো যাবে ক্যাবও। ই-কমার্সের কাজকর্মও শুরু করা যাবে আজ (সোমবার) থেকেই।
করোনা ভাইরাসকে রুখতে দেশবাসীকে আরও দুই সপ্তাহের বর্ধিত এই লকডাউন পালনের জন্যে উৎসাহ জুগিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। রবিবার সন্ধ্যায় তিনি সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হয়ে বলেন, "আমরা সাফল্যের দিকেই হাঁটছি এবং আমরা এই কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে জিতবোই।"
করোনাভাইরাস যে সব জেলাগুলোতে জোরদার হামলা চালিয়েছে, সেই ক্ষতিগ্রস্থ জেলাগুলোর মধ্যে অনেক জেলাতেই কেন্দ্রীয় সরকার তাদের বিশেষ দল পাঠিয়েছে, সব মিলিয়ে ২০ টি দল কাজ করছে বিভিন্ন জায়গায়। মুম্বই, থানে, পুনে এবং ভোপালের মতো এলাকাগুলোতেও পাঠানো হয়েছে ওই কেন্দ্রীয় দলকে। কেন্দ্রীয় দলগুলি করোনাকে রুখতে যেসব কৌশল নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে কোনও ফাঁক আছে কিনা তার সন্ধান করবে। পাশাপাশি স্থানীয় দলগুলিকে ক্লাস্টার কনটেইনমেন্ট প্ল্যান এবং নজরদারি ব্যবস্থার যথাযথ প্রয়োগে সহায়তা করবে।
এদিকে রিটেলারস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, লকডাউনের মেয়াদবৃদ্ধির পর যে কাজগুলো শুরুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কিছুটা হলেও ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে তাঁদের। সংবাদসংস্থা পিটিআইকে তারা জানিয়েছে, লকডাউনের নয়া বিধিনিষেধ নিয়ে স্বচ্ছতার অভাবেই এই সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে তাঁদের। একই অভিযোগ করেছে কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডারসও।
এদিকে উত্তরপ্রদেশ সরকারও রাজ্যে মদের দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে। বেশ কিছু কলকারখানও খোলা যাবে, তবে প্রতিটি শিফটের মাঝে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার ব্যবধান রেখে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছে তারা। গ্রিন জোনে বাস ও ক্যাব চলাচল করতে হবে কিন্তু ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহণ করতে পারবে সেগুলো।
ওড়িশা সরকার বলেছে তাদের রাজ্যের কনটেইনমেন্ট জোনগুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতা নিতে হবে। সবাইকে আরোগ্য সেতু অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে হবে এবং সেখানকার নির্দেশিকাগুলো মেনে চলতে হবে।যাঁরা লকডাইনের বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করবেন তাঁদের গ্রেফতার করা হবে বলে স্পষ্ট জানিয়েছে সরকার।
কেরলে যে সমস্ত অফিসগুলো খোলা হবে সেগুলোতে ৫০ শতাংশ গ্রুপ এ আর গ্রুপ বি কর্মী দিয়েই কাজ চালাতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে সরকার। গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি-এর ৩৩ শতাংশ কর্মী কাজে যোগ দিতে পারবেন। গ্রিন জোনগুলোতে সকাল ৭টা রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত রবিবার বাদে বাকি দিনগুলোতে দোকানপাট খোলা রাখা যাবে।
যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকরা অন্য রাজ্যে ছিলেন তাঁদের সকলকেই বাড়ি ফেরার ব্যয়ভার বহন করবে না কেন্দ্র, রাজ্য সরকারগুলোকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে মোদি সরকার। রবিবার রাজ্যগুলোকে একটি চিঠি মারফৎ কেন্দ্র জানায় যে, একমাত্র যে সব শ্রমিক মার্চে লকডাউনের কারণেই অন্য রাজ্যে আটকে পড়েন তাঁদেরই ব্যয়ভার বহন করবে তারা।
ভারতে এখনও পর্যন্ত একদিনে সর্বাধিক করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে রবিবারই। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নতুন করে ২,৪৮৭ জন করোনা আক্রান্ত হন। মারা গেছেন ৮৩ জন। এই নিয়ে দেশে রবিবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে মোট ৪০,২৬৩ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ১,৩০৬ জনের।
Post a comment