বাড়ি থেকে অনেক দূরে বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউনের কারণে আটকে পড়েছেন লক্ষ লক্ষ শ্রমিক। তাঁরা মানসিকভাবে ভয়ঙ্কর বিপর্যস্ত। করোনা ভাইরাসের আগেই ওই রোগের মারণ আতঙ্ক তাঁদের মেরে ফেলতে পারে। তাই ভজন, কীর্তন, নামাজ বা অন্য কোনও পরামর্শ দিয়ে হোক বা যে কোনও ভাবে, আটকে পড়া শ্রমিকদের মানসিক শক্তি জোগান, কেন্দ্রকে বলল সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার "সকাল ১১ টা পর্যন্ত" রাস্তায় কোনও অভিবাসী শ্রমিক (Migrant Workers) পড়ে নেই, আদালতকে জানায় কেন্দ্রীয় সরকার। এর আগে শীর্ষ আদালত (Supreme Court) কেন্দ্রের কাছে লকডাউনের (Lockdown) জেরে রাস্তায় নিরাশ্রয় হয়ে পড়ে থাকা হাজার হাজার মানুষের ত্রাণের জন্যে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সে ব্যাপারে জবাব তলব করা হয়েছিল। সেই নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্টকে এই কথা জানাল সরকার।
সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টকে বলেন, "স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন যে আজ সকাল ১১ টা পর্যন্ত কেউই রাস্তায় পড়ে নেই। তাঁদের নিকটতম আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।" করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কেন্দ্র যে সারা দেশে ২১ দিনের লকডাউন চাপিয়ে দিয়েছে তার পরে অসহায় অবস্থায় পড়েছেন এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরা। সেই প্রবাসী শ্রমিকদের খাদ্য ও আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করুক কেন্দ্রীয় সরকার, এই আবেদনে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা করা হয়। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রের জবাব তলব করে আদালত।
"আমরা সরকারকে এটাই বলতে চাই যে করোনা ভাইরাসের থেকেও বেশি বিপজ্জনক এর আতঙ্ক। যেকোনও মুহূর্তে মরে যেতে পারেন যে কেউ, এই আতঙ্কই এখন গ্রাস করছে এই আপাত ঘরছাড়া শ্রমিকদের মনে। এঁদের বোঝানোর জন্যে পরামর্শদাতা নিয়োগ করুন। আপনাদের সাধারণ মানুষকে মানসিক শক্তি জোগাতে হবে। তাই ভজন, কীর্তন, নামাজ বা অন্য কোনও পরামর্শ দিয়ে হোক বা যে কোনও ভাবে, আটকে পড়া শ্রমিকদের মানসিক শক্তি জোগান", কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত। " প্রয়োজনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কাউন্সিলররা শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করে বোঝান। সমস্ত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের গুরুরাও ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করুন দরকার হলে এবং মন থেকে এই করোনা আতঙ্ককে কাটাতে সাহায্য করুন", পরামর্শ সুপ্রিম কোর্টের।
"ভয় আর আতঙ্ক, ভাইরাস সংক্রমণের চেয়েও বড় সমস্যা", বললেন প্রধান বিচারপতি
গত ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গোটা দেশে লকডাউন চালুর ঘোষণা করেন। তিনি অনুরোধ করেন যাতে বৃহত্তর স্বার্থে যেন এই লকডাউন মেনে চলেন দেশবাসী। আগামী ১৪ মার্চ পর্যন্ত এই লকডাউন চলবে।
কিন্তু হঠাৎ করে এই লকডাউন চালু হওয়ায় বিপাকে পড়েন দেশের অসংখ্য শ্রমিকরা। কেননা এমনিতেই এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে গিয়ে কাজ করেন প্রচুর মানুষ। তাঁরা রেল সহ সমস্ত যানবাহন পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আটকে পড়েন বিভিন্ন জায়গায়। অনেকে পায়ে হেঁটেই নিজেদের বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন। এর ফলে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মারাও যান কিছু শ্রমিক। খাবার এবং আশ্রয়ের অভাবে হাহাকার পড়ে যায় তাঁদের মধ্যে।
কোয়ারান্টাইনে থাকা লোকজনকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় সেলফি তুলে পাঠানোর নির্দেশ মন্ত্রীমশাইয়ের
এদিকে যেভাবে রাস্তায় নেমে মাইলের পর মাইল হেঁটেই এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাওয়ার চেষ্টা করছে শ্রমিকরা তাতে রীতিমতো শঙ্কিত হয়ে পড়ে কেন্দ্রীয় সরকার। যেভাবে অভিবাসী শ্রমিকরা পথে নেমেছে তাতে বাড়তে পারে সংক্রমণের মাত্রা। ওদের দুর্দশা নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র-রাজ্য। সুরাহা দিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানিয়ে অঙ্গরাজ্যের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। ওই শ্রমিকদের নিজ নিজ কর্মস্থলেই আশ্রয় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।