Coronavirus: প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা
হাইলাইটস
- ভারতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা
- এই পরিস্থিতিতে লকডাউন না ওঠারই সম্ভাবনা
- সারা বিশ্বে এখনও পর্যন্ত ১.৪৬ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত
নয়া দিল্লি:
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৭ জনের প্রাণ কাড়ল করোনা ভাইরাস। এই নিয়ে সব মিলিয়ে এদেশে মোট ১৬৬ জনের মৃত্যু হল ওই রোগে (Coronavirus)। প্রতিদিনই হু-হু করে বাড়ছে মারণ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে (Coronavirus India) মোট করোনা আক্রান্ত ৫,৭৩৪ জন। এই রোগের সংক্রমণের (COVID-19) বাড়বাড়ন্ত রুখতে ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশ জুড়ে লকডাউনের কথা বলেন। আপাতত আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এর মেয়াদ থাকলেও পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে এখনই লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা না তোলারই ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বুধবার সর্বদলীয় বৈঠকে এমনটাই বলেন মোদি। যদিও আগামী শনিবার দেশের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই বিষয়ে একটি বৈঠক করতে চলেছেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ওই বৈঠকের পরেই লকডাউন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় সরকার।
দিল্লির নিজামুদ্দিনের ধর্মীয় সমাবেশের পরেই দেশে দ্রুত হারে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। এখনও পর্যন্ত দেশের রাজধানীর ২০ টি জায়গাকে সংক্রমণ প্রবণ এলাকা বা হটস্পট বলে চিহ্নিত করে পুরোপুরি সিল করে দেওয়া হয়েছে। দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া বুধবার বলেছেন, সরকার এই জায়গাগুলোতে প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র সরবরাহ করবে, কিন্তু এখানকার মানুষদের বাইরে বেরোলে চলবে না।
এদিকে দিল্লি, মুম্বই, চণ্ডীগড়, নাগাল্যান্ড এবং ওড়িশা সরকার স্পষ্টভাবে এক নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দিয়েছে যে ওই রাজ্যের মানুষদের খুব প্রয়োজনে যদি বাড়ি থেকে বেরোতে হয় তবে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, "ফেস মাস্ক পরে বাইরে বেরোলে সংক্রমণ অনেক কমানো যাচ্ছে। তাই ফেস মাস্কের ব্যবহার আবশ্যিক করা হয়েছে। কাপড়ের মাস্কও ব্যবহার করা যাবে।"
এদিকে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে একটি ভিডিও বৈঠকে আলাপ-আলোচনা করার পর প্রধানমন্ত্রী মোদি দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ১৪ এপ্রিল আদৌ লকডাউন তোলা সম্ভব কিনা সে ব্যাপারে অনিশ্চয়তার কথা বলেছেন। যা মনে হচ্ছে তাতে এখনি লকডাউন তোলা সম্ভব নয়, বলেন তিনি। তবু মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে এ ব্যাপারে পরামর্শ করবেন বলেই জানান প্রধানমন্ত্রী মোদি।
অনেক রাজ্যের সরকার এবং বিশেষজ্ঞরাই এই লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করছেন।যেভাবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুতহারে বাড়ছে তাতে আগামী সপ্তাহগুলিতে এই সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে সরকারি, বেসরকারি সব ল্যাবেই বিনামূল্যে করোনা সংক্রমণজনিত পরীক্ষা করা উচিত। শীর্ষ আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেছে এবং উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে যে, বেসরকারি ল্যাবগুলিতে এই পরীক্ষার জন্যে এত খরচ হওয়া উচিত নয়। পাশাপাশি ওই খরচ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে বলে আদালত।
এদিকে মন্ত্রীপরিষদের তরফ থেকে পরামর্শ দিয়েছে যে স্কুল, কলেজ এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আরও কিছুদিন বন্ধ থাকা উচিত। দেশের কোথাও রেল, বাস, মেট্রো পরিষেবা চালু করা এবং ধর্মীয় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া এখনই উচিত নয়।
এদিকে লকডাউনের জেরে কর্মহীন দেশের হাজার হাজার শ্রমিক, ক্রমেই বাড়ছে অর্থনৈতিক সঙ্কট। ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং ব্যবসায়িক চাপের কারণে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির অবস্থা টালমাটাল। এই অবস্থায় এই লকডাউন চালিয়ে গেলে অবস্থা আরও খারাপের দিকেই যে যাবে তা স্পষ্ট।
অন্যদিকে ভারত হাইড্রোক্সিক্লোরোক্যুইন রফতানি করবে এই ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা গেল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। "মোদি সত্যিই একজন দুর্দান্ত ব্যক্তি", এমন তারিফের পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক বোঝাপড়া যে কতটা ভালো তাও বোঝানোর চেষ্টা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সম্প্রতি ভারতবর্ষে করোনার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হাইড্রোক্সিক্লোরোক্যুইনের রফতানির উপরে থাকা বিধিনিষেধ সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই আবেদনে সাড়া দেয় ভারত।
ডিসেম্বরে চিন থেকেই এই ভাইরাস গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। সারা বিশ্বে এখনও পর্যন্ত ১.৪৬ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। মোট ১৯২ টি দেশের কমপক্ষে ৮৬,২৮৯ জন মানুষ মারা গেছে ওই রোগের প্রকোপে। শুধু ইউরোপ মহাদেশেই ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ওই মারণ ভাইরাসের কারণে। এর মধ্যে ইতালিতে ১৭,৬৬৯ জন, স্পেনে ১৪,৫৫৫ জন, ফ্রান্সে ১০,৮৬৯ জন এবং ব্রিটেনে ৭০৯৭ জন মারা গেছেন।
Post a comment