COVID- 19 Pandemic: ভারতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭,০০০ ছাড়াল (ফাইলচিত্র)
হাইলাইটস
- দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, বর্তমানে মোট আক্রান্ত ১৭,২৬৫
- এখনও পর্যন্ত এদেশে করোনার শিকার হয়েছেন মোট ৫৪৩ জন
- তবে আশার কথা, দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ওই রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও
নয়া দিল্লি:
করোনা ভাইরাস (Coronavirus Cases India) যেন রেকর্ড গড়া-ভাঙার খেলায় মেতেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, এখনও পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এদেশে একদিনের মধ্যে নতুন করে ওই মারণ রোগে (COVID- 19 Pandemic) আক্রান্ত হয়েছেন ১,৫৫৩ জন। এর মধ্যে আবার গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ জনের প্রাণ কেড়েছে COVID- 19 ফলে দেশে এখনও পর্যন্ত ওই রাক্ষুসে ভাইরাসের শিকার (Coronavirus India Deaths) হয়েছেন ৫৪৩ জন। দেশে করোনা সংক্রমণের গতিকে যেকোনও ভাবে আটকাতে হবে একথা বুঝেই গত ২৫ মার্চ থেকে দেশ জুড়ে লকডাউন জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে আজ (২০ এপ্রিল) থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রকে লকডাউনের আওতার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক স্পষ্টভাবেই জানিয়েছে, কোন কোন ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে তার জন্যে কেন্দ্রের নির্দেশ অনুসরণ করতে হবে রাজ্যগুলোকে। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে একটি চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব জানান যে কেবলমাত্র কেন্দ্রের লকডাউন সংক্রান্ত নির্দেশিকাতে যে ধরণের কাজকর্ম শুরুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ছাড়া নিজে থেকে অন্য কাজকর্ম চালুর নির্দেশ দেওয়ার এক্তিয়ার রাজ্যের নেই।
এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি তথ্য দেখে নিন:
দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাগাতার বাড়লেও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ওই রোগকে জয় করে সুস্থ জীবনে ফিরে আসার ঘটনাও। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, সোমবার সকাল পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের সঙ্গে যুঝে সুস্থ হওয়ার এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪.৭৫ শতাংশ, রবিবার এই হার ছিল ১৪.১৯ শতাংশ, শনিবার সুস্থতার হার ছিল ১৩.৮৫ শতাংশ, শুক্রবার ছিল ১৩.০৬ শতাংশ, বৃহস্পতিবার ছিল ১২.০২ শতাংশ, বুধবার ছিল ১১.৪১ শতাংশ এবং মঙ্গলবার ছিল ৯.৯৯ শতাংশ। সারা দেশে এখনও পর্যন্ত এই অতি সংক্রামক রোগ থেকে আড়াই হাজারেরও বেশি রোগী সুস্থ হয়েছেন ।
"নভেল করোনা ভাইরাস কাউকে ছাড়ে না। তা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-সীমান্ত নির্বিশেষে আক্রমণ করতে পারে। তাই এই সময় আমাদের একতা ও সৌভ্রাতৃত্বই হচ্ছে বাঁচার মূল মন্ত্র", করোনা সম্পর্কে বার্তা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রবিবার লিঙ্কড-ইন মারফৎ এই কথাগুলো বলেন।
বর্তমান সময় যে অত্যন্ত সঙ্কটের সময় সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বাড়ি থেকে কাজ করা এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইন্টারনেটই এখন মিটিং রুম। সহকর্মীদের সঙ্গে ব্রেকে আড্ডা মারা, আপাতত অতীত। এ সবে আমরাও এখন ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। আমি নিজেও তাই। সব বৈঠকই এখন প্রায় ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে হচ্ছে। অধিকাংশ অফিসেই এখন ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর সুবিধা রয়েছে"। প্রধানমন্ত্রীর মতে, "কর্মস্থল খুব তাড়াতাড়ি ডিজিটাল হয়ে উঠছে। প্রযুক্তির এই বদল ও পরিবর্তন গরিব মানুষদের উপর সব থেকে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে। এর ফলে আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতের ফাঁস মুছে যাচ্ছে। দরিদ্ররা তার সুবিধা পাবেন।"
তেলেঙ্গানায় মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও তাঁর রাজ্যে করোনা ভাইরাসকে রুখতে জারি করা এই লকডাউন ৭ মে পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই লকডাউন যাতে কঠোর পদ্ধতিতে কার্যকর করা যায় সে ব্যাপারে নজর রাখা হবে। পাশাপাশি আজ অর্থাৎ সোমবার থেকে খাবার সরবরাহের জন্যে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে কাজ শুরু করার অনুমতি দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেন তিনি। কে সি রাও বলেন, "মন্ত্রিপরিষদ রাজ্যে লকডাউন ৭ মে পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ ৫ মে থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখবে"।
করোনা ভাইরাসকে রুখতে যে লকডাউন চলছে তা আপাতত ৩ মে পর্যন্ত দেশে জারি রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে এরপরেও কিন্তু বিমানের টিকিটের কোনও বুকিং নেওয়ার কাজ শুরু না করারই নির্দেশ দিয়েছে ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন বা ডিজিসিএ। ২৫ মার্চ লকডাউন শুরুর থেকেই দেশে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে বিমান পরিষেবা। বন্ধ রয়েছে যাত্রিবাহী ট্রেন পরিষেবাও।
কোনও ব্যক্তির শরীরে COVID-19 আক্রমণ করেছে কিনা তা বোঝার জন্যে তৎক্ষণাৎ করোনা টেস্ট করা প্রয়োজন। আর এখানেই রাজ্যে ঘটছে বিপত্তি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অভিযোগ, করোনা পরীক্ষার জন্যে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্চ (ICMR) যে কিটগুলো পাঠিয়েছে উপযুক্ত মানের নয়, ফলে ওই কিটগুলো দিয়ে পরীক্ষা করলে ফল সবসময় সঠিক আসছে না। ফলে রাজ্যে করোনা টেস্ট করার গতিতে বিলম্ব হচ্ছে। এই করোনা টেস্টের কিটগুলোর মান সংক্রান্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখুক আইসিএমআর, টুইটে অনুরোধ জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। এই প্রসঙ্গে কলকাতায় অবস্থিত আইসিএমআরের নোডাল বডির এক কর্তা জানিয়েছেন যে টেস্টিং কিট সংক্রান্ত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এদিকে সংবাদসংস্থা পিটিআইকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর জানিয়েছেন যে যদি দেখা যায় যে দেশে করোনা সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব কমে আসছে তবে লকডাউনের আওতা থেকে ধীরে ধীরে আরও কিছু ক্ষেত্রকে ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আধিকারিক লাভ আগরওয়াল রবিবার এক সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন যে, কিছুদিন ধরে দেশের ১৪ টি রাজ্যের ৫৪ টি জেলায় গত ১৪ দিনে কোনও নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
শনিবার সরকার জানিয়েছে, গত মাসে দক্ষিণ দিল্লির নিজামমুদিনে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় সমাবেশ থেকে ভারত জুড়ে প্রায় ৪০০০ এরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।, সরকার শনিবার জানিয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আধিকারিক লাভ আগরওয়াল শনিবার বলেন, "শনিবার সকাল পর্যন্ত যা পরিসংখ্যান মিলেছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের মধ্যে ৪,২৯১ জন বা ২৯.৮ শতাংশ রোগীই কোনও কোনভাবে তাবলিগি জামাতের সমাবেশের সঙ্গে জড়িত।"
মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই দেশে সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলতে পারে, আগেই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তবে তারপর থেকেই ধীরে ধীরে দেশে করোনা সংক্রমণ কমবে, এমনও আশার আলোও দেখিয়েছে সরকার।
Post a comment