করোনা সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে রবিবার দেশজুড়ে ‘জনতা কার্ফু’।
হাইলাইটস
- রবিবার দেশ জুড়ে ‘জনতা কার্ফু’
- গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘জনতা কার্ফু’-র ডাক দিয়েছেন
- করোনা সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে সকলকে ঘরবন্দি থাকার আর্জি প্রধানমন্ত্রীর
নয়াদিল্লি:
বিশ্বব্যাপী ত্রাসের সঞ্চার করা নোভেল করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় রবিবার ভারত জুড়ে ‘জনতা কার্ফু’। সারা পৃথিবী জুড়ে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই ভাইরাসের প্রকোপে। এই পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘জনতা কার্ফু’-র ডাক দিয়েছেন। করোনা সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে এদিন দিনভর প্রত্যেককে স্বেচ্ছা-কোয়ারান্টাইনে থাকার আর্জি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ জানিয়েছে, কোনও ব্যাক্তির সঙ্গে সংস্পর্শে এলে কিংবা আক্রান্তের ড্রপলেট থেকে ছড়াতে পারে এই রোগ। প্রধানমন্ত্রী টুইট করে জানিয়েছেন, ‘‘আসুন আমরা সকলে এই কার্ফুর অংশ হই। কোভিড-১৯ দানবের সঙ্গে লড়তে যা আমাদের দারুণ শক্তি জোগাবে। এখন আমরা যে পদক্ষেপগুলি করব তা আমাদের আগামী দিনে সাহায্য করবে।’’
রইল এ সম্পর্কে ১০ তথ্য:
বৃহস্পতিবার জনতার উদ্দেশে ভাষণের সময় ‘জনতা কার্ফু'র ডাক দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এর কোনও চিকিৎসা নেই। তাই আমাদের সুস্থ থাকতে হবে। ভিড়কে এড়িয়ে আমাদের বাড়িতে থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব অবলম্বন করা একান্ত দরকার। যদি আপনি মনে করেন আপনি স্বাভাবিক ভাবে চারপাশে ঘুরে বেড়াবেন আর ভাববেন আপনার কোনও ঝুঁকি নেই, তাহলে তা ঠিক নয়। এর ফলে আপনি নিজেকে ও নিজের পরিবারকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন।''
প্রধানমন্ত্রী দেশের নাগরিকদের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, রবিবার বিকেল ৫টার সময় নিজেদের বাড়ির দরজা, জানলা কিংবা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ঘণ্টা বা থালা বাজিয়ে তাঁদের উদ্দেশে সমর্থন ব্যক্ত করা যাঁরা অত্যাবশক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
শনিবার পশ্চিমবঙ্গে এক ব্যক্তি ও পুণের এক মহিলার শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এঁদের কেউই বিদেশে যাননি। এর ফলে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ‘কমিউনিটি সংক্রমণ'-এর সম্ভাবনা। শনিবার দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১৫।
ব্যবসায়ী ও সরকারি অত্যাবশ্যক পরিষেবার সঙ্গে যুক্তরা ছাড়া বাকি সকলেই রবিবার ঘরবন্দি থাকবেন। ব্যবসায়ীরা অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা রবিবার প্রধানমন্ত্রীর আর্জি মেনে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি থাকবেন।
এদিন সারা দেশে দূরপাল্লা বা লোকাল— কোনও ট্রেনই চলবে না বলে রেলওয়ে জানিয়েছে। তবে যে ট্রেনগুলি চলছিল, সেগুলিকে থামানো হচ্ছে না। ইন্ডিগো ও গোএয়ারের মতো বিমান সংস্থাগুলি জানিয়েছে, তারা হয় ন্যূনতম কিছু উড়ান চালাবে অথবা সমস্ত উড়ানই বাতিল করে দেবে। দিল্লি, বেঙ্গালুরু ও অন্যান্য বহু শহরে এদিন মেট্রোও চলবে না।
দেশের বহু রাজ্য লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন রাজস্থান। এৱ ফলে সেখানকার ব্যবসা ব্যাহত হয়েছে। বহু বুকিং বাতিল হওয়ায় সমস্যায় পড়েছে পর্যটন ক্ষেত্রও।
ভারতীয় রেলের তরফে সবাইকেই নিজেদের যাত্রা বন্ধ রাখার আর্জি জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে ১২ জন যাত্রীর শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। দেশে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ ট্রেনে সফর করেন। কখনও কখনও কামরা থাকে একদম ভর্তি। এর ফলে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা বহু গুণ বেড়ে যায়।
বিদেশ থেকে এসেও যাঁরা কোয়ারান্টাইনে যাননি, তাঁদের ঘিরে সমালোচনা শুরু হয়েছে। কলকাতায় আইএএস আধিকারিকের পুত্র ব্রিটেন থেকে ফিরে বহু মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন। পরে তাঁর শরীরে ধরা পড়ে করোনা সংক্রমণ। বেঙ্গালুরুর এক করোনা আক্রান্ত গুগল কর্মীর স্ত্রী স্বাস্থ্য দফতরকে নিজের অবস্থান সম্পর্কে ভুল তথ্য দেন। এদিকে করোনা আক্রান্ত গায়িকা কণিকা কাপুরের বিরুদ্ধেও পুলিশ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিদেশ থেকে ফিরে সকলের সঙ্গে পার্টিতে যোগ দেন।
রবিবার বিকেলে বাড়ির দরজা, জানলা কিংবা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ঘণ্টা বা থালা বাজানোর যে আর্জি, তাতে সাড়া দিয়ে শনিবারই মহড়ার ভিডিও বহু লোক শেয়ার করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
করোনা ভাইরাস এক বৃহত্তর ভাইরাস পরিবারের অংশ। যে ভাইরাস সাধারণ ঠান্ডা লাগা বা অন্য বহু অসুখের জন্য দায়ী। কিন্তু কোভিড-১৯ এই ভাইরাসের নয়া সংস্করণ। গত বছরের ডিসেম্বরে চিনের উহান শহর থেকে যার উৎপত্তি। পশু ও মানুষের মধ্যে এই ভাইরাস সংক্রামিত হয়। এই ভাইরাসের প্রকোপে সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। ‘অতিমারী' ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু'।
Post a comment