West Bengal: প্রায় ৩০ মিনিটের জীবনযুদ্ধ করার পর শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মাধব নারায়ণ দত্ত
হাইলাইটস
- বনগাঁ হাসপাতাল থেকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো না এক করোনা রোগীকে
- অ্যাম্বুল্যান্সে উঠতে না পারায় বনগাঁ হাসপাতালের বাইরেই মৃত্যু হল তাঁর
- ওই ব্যক্তিকে অ্যাম্বুল্যান্সে উঠতে কেউ সাহায্য করলেন না
কলকাতা: ফের অমানবিকতার শিকার হলেন এক করোনা (Coronavirus) রোগী। শনিবার বিকেল ৫টা নাগাদ বনগাঁর (West Bengal) বাসিন্দা মাধব নারায়ণ দত্তের শ্বাসকষ্টের সমস্যা হওয়ায় তাঁকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে রাতের দিকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁকে কলকাতার কোভিড হাসপাতালে রেফার করেন। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল থেকে ৮০ কিমি দূরে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যেতে বন্দোবস্ত করা হয় একটি অ্যাম্বুল্যান্সেরও (Ambulance)। কিন্তু শেষপর্যন্ত কলকাতার হাসপাতালের চিকিৎসা পাওয়া হলো না ওই ব্যক্তির। কেননা গুরুতর অসুস্থ বছর আটষট্টির ওই ব্যক্তিকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার জন্যে কাউকেই পাওয়া গেল না। ওই ব্যক্তির স্ত্রী বারবার সকলকে তাঁর স্বামীকে অ্যাম্বুল্যান্সে ওঠানোর বিষয়ে সাহায্য করার জন্যে কাতর আবেদন জানালেও সাড়া দেননি কেউ, এমনকী পিপিই স্যুট পরে থাকা অ্যাম্বুল্যান্স চালকও কোনও সাহায্য করেননি। ফলে বনগাঁর ওই হাসপাতালের বাইরেই মৃত্যু (Man Dies In Bongaon) হয় বয়স্ক ওই দোকানদারের।
দেশে একদিনে সংক্রমণ ছাড়ালো ৪৮ হাজার, মোট সংক্রমিত ১৩ লক্ষ ৮৫ হাজার, দেখুন ১০ তথ্যে
জানা গেছে, হাসপাতালের বাইরে প্রায় ৩০ মিনিট পড়ে ছিলেন মাধব নারায়ণ দত্ত, জীবনযুদ্ধও করছিলেন আপ্রাণ, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। সেখানেই মারা যান তিনি।
আগের মতোই এখনও ভয়ঙ্কর করোনা ভাইরাস! তাই মাস্ক পরুন: প্রধানমন্ত্রী
অথচ ওই ব্যক্তির স্ত্রী তাঁর স্বামীকে বাঁচানোর জন্যে হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকার মানুষজন ও পথচারীদের উদ্দেশে হাতজোড় করে আবেদন জানান, যাতে কেউ তাঁর স্বামীকে অ্যাম্বুল্যান্সে উঠতে সাহায্য করেন। তিনি অ্যাম্বুল্যান্সের চালককে অনুরোধ করে বলেন, "দাদা, আপনি তো পিপিই কিট পরে আছেন, দয়া করে সাহায্য করুন", কিন্তু তাঁর কথায় কান দেননি চালক।
অসহায় মহিলা নিজের স্বামীকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার জন্যে নিজেই যথাসাধ্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পথচলতি মানুষজন দূরে দাঁড়িয়ে নানা মন্তব্য করছিলেন, অথচ সাহায্য করেননি কেউই। একজন তো বলেই বসেন, "ওনাকে সাহায্য করার কেউ নেই, কে সাহায্য করবে?"।
আরেকজন আবার অসুস্থ মাধব নারায়ণকে লক্ষ্য করে বলেন, "কাকা, আপনাকেই মনে জোর আনতে হবে এবং অ্যাম্বুল্যান্সে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। আপনি যদি অ্যাম্বুল্যান্সে উঠতে পারেন তবে বেঁচে যাবেন।" কিন্তু করোনা আক্রান্ত ওই ব্যক্তির সেই ক্ষমতাটুকুও ছিলো না। ফলে কলকাতার হাসপাতালের চিকিৎসা পাওয়া আর তার হলো না। অসহায় স্ত্রীর চোখের সামনেই মারা গেলেন তিনি।
এদিকে, একইভাবে অমানবিকতার নিদর্শন রাখল কোলাঘাটের আরার গ্রাম। বাড়ির পাশেই কবর খুঁড়ে সমাধিস্থ করা হল করোনায় মৃত বৃদ্ধকে। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা গিয়েছিলেন সত্তর বছরের সনাতন প্রধান। তার কিছুক্ষণ পরেই স্থানীয় হাসপাতাল থেকে জানা যায় ওই বৃদ্ধ করোনা পজিটিভ। এই খবর পাওয়া মাত্রই হাসপাতালের তরফে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছয় বৃদ্ধের বাড়িতে। স্থানীয় পঞ্চায়েতের সঙ্গে হাসপাতালের সমন্বয়ে ঠিক হয় বাড়ির পাশেই কবর খুঁড়ে সমাধিস্থ করা হবে সনাতন বাবুকে। কিন্তু সেই উদ্যোগের বিরোধিতা করেন স্থানীয়রা। হাসপাতাল থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্স দুটি পিপিই কিট মৃতের বাড়ির সামনে ফেলে চম্পট দেয়। এরপর প্রায় ১২ ঘণ্টা সেভাবেই পড়েছিল মৃতদেহ। অবশেষে নিরুপায় হয়ে দুই ছেলে বাড়ির মধ্যেই কবর খুঁড়ে সমাধিস্থ করে বাবার দেহ। উপস্থিত ছিলেন না স্থানীয় পঞ্চায়েত বা পড়শি কেউ। এই ঘটনার পুরোটা ক্যামেরাবন্দি করতে দেখা গিয়েছে মৃতের আট বছরের নাতিকে।
অমানবিক এই ধরণের ঘটনাগুলো করোনা মহামারী পরিস্থিতিকে যেন আরও ভয়ানক করে তুলছে। কখনো রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য মিলছে না অ্যাম্বুল্যান্স, তো কখনও আবার অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার জন্যে পাওয়া যাচ্ছে না কোনও সাহায্যের হাত। মানুষের মধ্যে করোনার আতঙ্ক এমনভাবেই জাঁকিয়ে বসে গেছে যে, চোখের সামনে কোনও অসহায় রোগীকে মরতে দেখলেও এগিয়ে আসছেন না কেউ।