This Article is From May 26, 2020

পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা" নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট, বৃহস্পতিবার শুনানি

দেশে লকডাউনের ফলে সমস্যায় পড়া পরিযায়ীদের রক্ষা করতে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলো, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইল শীর্ষ আদালত

পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা

শীর্ষ আদালত বলে, "কোন পরিযায়ী শ্রমিক কখন রাস্তায় হাঁটছে সেদিকে আদালতের খেয়াল রাখা অসম্ভব"।

নয়াদিল্লি:

ভারতে করোনা (Coronavirus) সংক্রমণের গতি রুখতে ২৫ মার্চ থেকে টানা চতুর্থ দফায় লকডাউন চলছে। এই লকডাউনের (Coronavirus Lockdown) জেরে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বিভিন্ন রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কাজের খোঁজে বা অন্য প্রয়োজনে গিয়ে আটকে পড়া মানুষজন। যদিও পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrant Labour) নিজেদের রাজ্যে ফেরাতে ১ মে থেকে “শ্রমিক স্পেশাল” নামে বিশেষ ট্রেন চালাচ্ছে ভারতীয় রেল। তবু নানা সমস্যায় এখনও ঘর থেকে দূরে অন্য রাজ্যে চরম দুরবস্থার মধ্যে কাটাচ্ছেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক। এবার এই পরিযায়ীদের দুর্দশার বিষয়ে জানতে আগ্রহী হল দেশের সর্বোচ্চ আদালত (Supreme Court)। পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে এবং তাঁদের সঙ্কট কাটাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলো কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তলব করল সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের কাছে ওই বিষয়ে যাবতীয় তথ্যাদি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতে ওই মামলার শুনানি হবে। "পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা কাটাতে নেওয়া গৃহীত পদক্ষেপ" সম্পর্কে জানতে কেন্দ্র ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল এবং রাজ্য সরকারগুলোকে নোটিস দিল সুপ্রিম কোর্ট।

এর আগে দেখা গেছে, লকডাউনের মধ্যেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে ফিরতে চেয়ে বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিক। বহু শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন বিভিন্ন দুর্ঘটনায়। ঘরে ফেরার টানে অগুণতি শ্রমিককে দেখা গেছে তল্পিতল্পা নিয়ে রাজপথ ধরেই হাঁটা শুরু করেছেন গন্তব্যের দিকে। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে করতে মুখ থুবড়ে পড়ে পথের মধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন অনেক অসহায় পরিযায়ী। 
শীর্ষ আদালত আজ (মঙ্গলবার) বলেছে যে, "আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা ও দুর্দশার বিষয়ে  জানতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই মামলাটি গ্রহণ করেছি।"

"সংবাদপত্রের প্রতিবেদনগুলি এবং মিডিয়া রিপোর্টগুলি প্রতিদিন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে কীভাবে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে পার হতে গিয়ে একের পর এক দুর্ভাগ্যজনক ও শোচনীয় পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন এই সব মানুষেরা। এমনকী লকডাউনের কারণে ওই পরিযায়ীরা যে জায়গাগুলিতে আটকে ছিলেন সেখানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঠিকভাবে খাবার ও জলের ব্যবস্থা পর্যন্ত না করার অভিযোগ করেছেন তাঁরা। কেউ বা কাজের জায়গায় আটকা পড়ে সেখান থেকে ঘরে ফিরতে জাতীয় সড়ক ধরেই হাঁটা লাগিয়েছেন। আবার কেউ সাইকেল বা অন্য পরিবহণের ব্যবস্থা করে প্রাণ হাতে করে ঘরে ফিরতে চাইছেন। গোটা দেশে যখন লকডাউন চলছে সেই পরিস্থিতিতে সমাজের এই অংশটির সংশ্লিষ্ট সরকারের সহায়তা ও পাশে থাকার প্রয়োজন। বিশেষত এই কঠিন পরিস্থিতিতে এই পরিযায়ী শ্রমিকদের দিকে  সহায়তার হাত বাড়ানো দরকার ভারত সরকার, রাজ্য সরকার / কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিরও"।
এরপরেই দেশে লকডাউনের ফলে সমস্যায় পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের রক্ষা করতে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্র ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং রাজ্যগুলো, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়ে নোটিস জারি করে শীর্ষ আদালত।

যদিও গত ১৫ মে এই পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি মামলা করা হলে তা খারিজ করে দেন বিচারপতিরা। লকডাউনের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাস্তা ধরে হাঁটার বিষয়টির দিকে নজর রাখুক রাজ্যগুলোই, দেশের রাজ্য সরকারগুলোর দিকেই বল ঠেলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট। সেই সময় শীর্ষ আদালত বলে, "কোন পরিযায়ী শ্রমিক কখন রাস্তায় হাঁটছে সেদিকে আদালতের খেয়াল রাখা অসম্ভব"।
যাঁরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন সেই পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবার ও জল সরবরাহ করা উচিত কেন্দ্রের, এই মর্মেই শীর্ষ আদালতে একটি আবেদন জমা পড়ে। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই শীর্ষ আদালত শুক্রবার জানায় যে, কখন কোন শ্রমিক রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন সেদিকে নজর রাখা সম্ভব নয়। সুপ্রিম কোর্টও কড়া ভাষায় বলেছে: "রাজ্যগুলিকেই এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দিন। আদালত কেন এগুলো শুনবে বা সিদ্ধান্ত নেবে?" আইনজীবী  অলোক শ্রীবাস্তব তাঁর আবেদনে বলেছিলেন যে আদালত কেন্দ্রকে নির্দেশ দিক যাতে রাস্তায় হাঁটতে থাকা পরিযায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের খাবার ও আশ্রয় দেওয়া যায়।
ওই আইনজীবী মহারাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন, যেখানে একটি মালগাড়ির তলায় চাপা পড়ে মৃত্যু হয় ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিকের। এই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বলেন, "যখন কেউ রেললাইনের উপরেই ঘুমিয়ে পড়েন তখন কীভাবে আটকানো যাবে এই ঘটনা? এমন লোক রয়েছে যারা হেঁটেই চলেছেন এবং কোনও বারণ শুনছেন না। আমরা কীভাবে তাঁদের আটকাতে পারি?"

সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, "রাজ্যগুলোর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে যে প্রত্যেক পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফেরার সুযোগ পাবে। কিন্তু সেসব কথায় কান না দিয়েই তাঁরা রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করেছেন। এখন তাঁদের আটকাতে যদি বল প্রয়োগ করা হয় তাহলে পাল্টা প্রতিক্রিয়া হতে পারে"।
 

.